Advertisement
E-Paper

পোড়াতে হয়েছে জার্সি! তালিবান শাসনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে খেলতে হচ্ছে মহিলা আফগান ক্রিকেটারদের

তালিবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করার পরে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন মহিলা ক্রিকেটারেরা। কী ভাবে আফগানিস্তান ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়েছিলেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:০৫
cricket

আফগানিস্তানের মহিলা ক্রিকেটারেরা। ছবি: সমাজমাধ্যম।

২০১৭ সালে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসির পূর্ণ সদস্যের তকমা পেয়েছিল আফগানিস্তান। পুরুষদের পর মহিলা ক্রিকেট দলও তৈরি হয়েছিল সে দেশে। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে ২৫ জন ক্রিকেটারকে সরকারি চুক্তির আওতায় আনা হয়েছিল। ২০২১ সালে ওমানের বিরুদ্ধে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন বেনাফসা হাশিমি, নাহিদা সাপানেরা। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে। সেই ম্যাচের আগেই তালিবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে। মহিলাদের অধিকার খর্ব করা হয়। ক্রিকেট খেলা তো দূর, প্রকাশ্যে মহিলাদের বাড়ির বাইরে বার হওয়ার বিষয়েও জারি হয় নিষেধাজ্ঞা। বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন ১৯ আফগান মহিলা ক্রিকেটার। সঙ্গে ছিলেন তাঁদের পরিবার, কোচ, প্রশাসক ও আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সদস্যেরা। কী ভাবে দেশ ছেড়েছিলেন তাঁরা?

আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তান হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়েছিলেন ক্রিকেটারেরা। তাঁদের সাহায্য করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ক্রিকেটার মেল জোন্স। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যে মহিলাদের অ্যাশেজ় টেস্ট শুরু হওয়ার আগে একটি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলবে আফগানিস্তান একাদশ ও ক্রিকেট উইদাউট বর্ডার্স একাদশ। তার আগে সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন জোন্স।

অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ক্রিকেটার জানিয়েছেন, মেলবোর্নের হোটেলে নিভৃতবাসে থাকাকালীন আফগানিস্তানের এই পরিস্থিতির কথা তিনি জানতে পারেন। তাঁর মনে হয়েছিল, মহিলা ক্রিকেটারদের সাহায্য করা উচিত। তিনি যোগাযোগ করেছিলেন হাশিমির সঙ্গে। হাশিমিকে একটি মেসেজ পাঠান জোন্স। তাতে লেখা ছিল, “আপনি আমাকে চিনতে পারবেন না। কিন্তু আপনি বা অন্য কোনও ক্রিকেটারের জীবন কি বিপন্ন? আপনারা কি আফগানিস্তান থেকে বার হতে চান?” জবাবে হাশিমি লেখেন, “হ্যাঁ, চাই।” সে কথা শুনে হোটেলে বসেই সব ব্যবস্থা সেরে ফেলেন জোন্স।

তাঁরা প্রথমে ভেবেছিলেন, শুধু ক্রিকেটারদের আফগানিস্তান থেকে বার করবেন। কিন্তু পরে পরিস্থিতি বদলে যায়। জোন্স বলেন, “শুধু ১৯ জন ক্রিকেটার ছিল না, সঙ্গে তাদের পরিবার, কোচ, প্রশাসক ও আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সদস্যেরাও ছিল। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১৩০। আমি অস্ট্রেলিয়ার প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। প্রথমে ওরা বলেছিল, এত লোককে বার করে আনা যাবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা তা পেরেছি।”

ক্রিকেটার ও তাঁদের পরিবারকে জানিয়ে দেওয়া হয়, সঙ্গে থাকা জার্সি ও ক্রিকেটের সরঞ্জাম পুড়িয়ে দিতে। তার পরে প্রত্যেককে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে পাকিস্তানে যেতে বলা হয়। সেই যাত্রাও সহজ ছিল না। এক মাস ধরে সেই প্রক্রিয়া চলে। জোন্স বলেন, “যা ইচ্ছা বললেই তো পাকিস্তানে ঢুকতে দিত না। কারণ, তালিবান ছাড়াও ওই এলাকায় আরও জঙ্গি সংগঠন আছে। তাই প্রত্যেককে ভুয়ো গল্প ফাঁদতে হয়েছিল। এমন গল্প বানাতে হয়েছিল যা সকলে বিশ্বাস করে। তার পরে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সকলে পাকিস্তানে গিয়েছিল। সেখান থেকে বিমানে তাদের অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে আসা হয়।”

২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পা দেন ক্রিকেটার ও তাঁদের পরিবার। তার পর থেকে সে দেশেই রয়েছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানে ফেরার কোনও সম্ভাবনা তাঁদের নেই। তালিবান শাসনে সেখানে মহিলাদের অবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ জোন্স। তিনি বলেন, “২০২১ সাল থেকে আফগানিস্তানের মহিলারা বন্দির মতো জীবন কাটাচ্ছে। স্কুলে যাওয়ার অধিকার নেই। প্রকাশ্যে বার হওয়া যায় না। গান, কবিতা করা যায় না। এর থেকে খারাপ কিছু হতে পারে না। আফগান ক্রিকেটারদের অনেকেই এখনও সেই ধাক্কা থেকে বার হতে পারেনি। এখনও ওদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে।”

তবে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছেন হাশিমিরা। আবার এক দিন দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন দেখেন তাঁরা। প্রদর্শনী ম্যাচ হলেও মাঠে নামতে মরিয়া নাহিদা বলেন, “আমরা মাঠে নেমে কী করতে পারি সেটা দেখানোর সময় এসেছে। এই ম্যাচের গুরুত্ব আমাদের কাছে অনেক। এই ম্যাচ ধীরে ধীরে অনেক দরজা খুলে দিতে পারে। এটা শুধু আমাদের কাছে খেলা নয়। লড়াই। এই লড়াই এক দিন জিততে হবে।”

Afghanistan Cricket Taliban regime
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy