Advertisement
E-Paper

বিহার, কলকাতার ময়দান থেকে ভারতীয় দলে! বাবা, দাদার মৃত্যুশোক কাটিয়ে উঠে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাংলার আকাশ

বিহার থেকে কলকাতার ময়দান ঘুরে মুকেশ কুমার এখন দাপাচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেটে। সেই বিহারেরই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা আকাশদীপের কাছেও সুযোগ এসে গেল ভারতীয় দলে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৩২
An image of Akash Deep

আকাশদীপ। —ফাইল চিত্র।

বিহারের গোপালগঞ্জ থেকে উত্থান হয়ে কলকাতার ময়দান ঘুরে মুকেশ কুমার এখন দাপাচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেটে। সেই বিহারেরই প্রত্যন্ত একটি গ্রাম থেকে উঠে আসা আকাশদীপের কাছেও এ বার সুযোগ এসে গেল ভারতীয় দলে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার। শনিবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ়‌ে ভারতীয় দলে সুযোগ পেলেন তিনি। মুকেশের মতোই বিহার থেকে কলকাতার ময়দানে চুটিয়ে খেলে ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন।

ঘরোয়া ক্রিকেট এবং আইপিএলের সাফল্য যে বৃথা যায় না, তা আরও এক বার প্রমাণিত হল আকাশদীপ জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ায়। ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলার হয়ে গত কয়েক বছরে ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলছেন আকাশ। আইপিএলে তিনি খেলেন বিরাট কোহলির দল আরসিবি-র হয়ে। সেখানেও প্রমাণ দিয়েছেন দক্ষতার। এ বার জাতীয় দলে ডাক। স্বপ্নপূরণ হওয়ার পথে শেষ ধাপ।

আকাশকে যিনি তুলে এনেছেন এবং দীর্ঘ দিন কাছ থেকে দেখেছেন সেই সৌরাশিস লাহিড়ী মুগ্ধ ছাত্রের কৃতিত্বে। সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেছেন, “আজ আকাশের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ও বলল, স্যর আমি একটা ট্রেনের মতোই ছিলাম। তাকে ট্র্যাকে এনেছেন আপনিই।”

বিহারের সাসারাম গ্রামের একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছেন আকাশ। ২৭ বছরের আকাশের জীবনও লড়াইয়ের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। একে তো পরিবারে কোনও দিন খেলাধুলোর সে রকম চল ছিল না। তার উপরে বাবা এবং দাদার মৃত্যু পরিস্থিতি কঠিন করে তুলেছিল। কিন্তু ক্রিকেট খেলা থেকে নজর সরেনি আকাশের। আসানসোলে এক সময় চুটিয়ে খেলেছেন টেনিস বলের ‘খেপ’ ক্রিকেট। এমনকি ঘুরে এসেছেন দুবাই থেকেও।

আকাশকে প্রথম বার দেখার স্মৃতি এখনও ভোলেননি জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। বাংলা দলের প্রাক্তন ডিরেক্টর বলেছেন, “রেঞ্জার্স মাঠে এক দিন সিএবি-র দ্বিতীয় ডিভিশনের একটা ম্যাচ দেখছিলাম। অন্য সব বোলার বল করার সময় কিপার উইকেটের থেকে ১০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে অনায়াসে বল ধরছিল। কিন্তু এক জন পেসারের বলে তাকে দেখছিলাম অনেকটা পিছিয়ে প্রায় ৩৫ গজ দূরে গিয়ে দাঁড়াতে। ছেলেটা খুব জোরে বল করছিল। ময়দানে বা দ্বিতীয় ডিভিশনের কোনও ম্যাচে এমন বোলার দেখাই যায় না।”

জয়দীপের সংযোজন, “সঙ্গে সঙ্গে তখনকার অনূর্ধ্ব-২৩ দলের কোচ সৌরাশিসকে ফোন করি। ও-ও আমাকে জানায় যে ছেলেটাকে দেখেছে। তখন সিএবি সভাপতি সৌরভকেও (গঙ্গোপাধ্যায়) বিষয়টা জানাই। আকাশকে ভিশন ২০২০ প্রকল্পের মধ্যে নেওয়া হয় এবং ইডেন গার্ডেন্সে সিএবি-র ডর্মিটরিতে ওর থাকার ব্যবস্থা করা হয়। তখন আকাশের কাছে থাকার কোনও জায়গা ছিল না।”

ভিশন ২০২০-তে বাংলার প্রাক্তন পেসার রণদেব বসু কাজ করেন আকাশের সঙ্গে। টেনিস থেকে চামড়ার বলে আকাশের উন্নতি খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। খুচরো বাধাও ছিল কয়েকটা। এক বার বাংলার অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার পরে আকাশের কোমরে ব্যথা শুরু হয়। তখনও আকাশ জানতেন না কেন এই ব্যথা হচ্ছে। সেই সময় আকাশের রিহ্যাবের জন্য তাঁকে অনূর্ধ্ব-২৩ ট্রায়ালে ডাকেন সৌরাশিস। হঠাৎই এক জুনিয়র নির্বাচক আকাশকে দিয়ে জোর করে বল করান। তাতে ব্যথা আরও বাড়ে। সেই নির্বাচকের সঙ্গে ঝামেলাও হয় সৌরাশিসের।

সেই প্রসঙ্গ মনে করে সৌরাশিস বলেছেন, “উনি আমাকে বলেছিলেন, কোনও ক্রিকেটারকে না দেখে কী ভাবে নির্বাচিত করা যায়। আমি জোর দিয়ে বলেছিলাম, আকাশকে আমি নিজে বল করতে দেখেছি। এখন ওর রিহ্যাব দরকার। আপনারা ওকে দলে নিন বা না নিন, অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে ওর অভিষেক হবেই।” প্রাক্তন ছাত্রের হয়ে সেই ‘লড়াইয়ের’ কথা মনে পড়লে এখনও হাসি পায় সৌরাশিসের।

বাংলার হয়ে রঞ্জিতে ২৫টি ম্যাচ খেলে ৯০টি উইকেট রয়েছে আকাশের। তাঁর গতি এবং বল উইকেটের ভিতরে ঢুকে আসার ক্ষমতাই আসল শক্তি। সৌরাশিস বলেছেন, “গত বার রঞ্জি ট্রফি সেমিফাইনালে বাংলা বনাম মধ্যপ্রদেশ ম্যাচের কথা মনে করুন। যে বলটায় রজত পাটীদারকে আউট করেছিল, সেটা কী ভাবে অফ স্টাম্পে পড়ে ভেতরে ঢুকে এসে বেল উড়িয়ে দিয়েছিল সেটা ভাবুন। যে কোনও ব্যাটার ওই বলে আউট হবে। ৮-১০ ওভার একই গতিতে বল করতে পারে আকাশ। কব্জির ব্যবহার এবং নিখুঁত বোলিং অন্যতম অস্ত্র।”

জয়দীপের মতে, ভারতের হয়ে লম্বা সময় ধরে খেলবেন আকাশ। তিনি বলেছেন, “সাই (সাইরাজ বাহুতুলে) আকাশের প্রতিভার সম্পর্কে জানে। আগে ও বাংলার কোচ ছিল। ভারতীয় দলের ফিজিয়ো কমলেশ জৈনও আকাশের সঙ্গে কাজ করেছে। ভারতীয় দলের সঙ্গে থাকলে আকাশ নিজেকে আরও বেশি উন্নত করতে পারবে। সবচেয়ে বড় কথা হল, আপনি ওকে কোনও অনুশীলন ১০ বার করতে বললে ও ২০ বার করবে। যে কোনও কোচ বা অধিনায়কের পছন্দের ক্রিকেটার হয়ে উঠতে পারে ও।”

কোচেদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে তাঁর উপর। এখন দেখার, মুকেশের মতোই আকাশও দ্রুত ভারতীয় দলে নিজের জায়গা পাকা করতে পারেন কি না।

Akash Deep Indian Cricket team Indian cricketer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy