কেকেআরে খেলার সময় আলোচনা হত প্রতি ম্যাচে তাঁর করা প্রতিটি বলের দাম নিয়ে। গোটা মরসুম ২৪.৭৫ কোটির ‘ভূত’ তাড়া করে বেড়িয়েছে তাঁকে। প্লে-অফ এবং ফাইনালে তাঁর বোলিংয়ে দল জিতলেও সেটা মাথা থেকে পুরোপুরি নামাতে পারেননি তিনি। দলও রাখেনি। দিল্লি তাঁকে অনেক কম দামে (১১.৭৫ কোটি) কেনায় এখন ঘাড়ের উপর অর্থের সেই বোঝা আর নেই। হয়তো সেই কারণেই নিজের সেরাটা দিচ্ছেন মিচেল স্টার্ক। ছয় ম্যাচ খেলে নামের পাশে লেখা হয়ে গিয়েছে ১০ উইকেট।
বুধবার রাতে রাজস্থানের বিরুদ্ধে সুপার ওভারে মাত্র ১১ রান দেন স্টার্ক। সেই রান তুলে ফেলতে দিল্লির কোনও সমস্যাই হয়নি। ২০তম ওভারে রাজস্থানকে জয়ের প্রয়োজনীয় ৯ রান তুলতে দেননি। এ বার একটি ইনিংসে পাঁচ উইকেটও নিয়েছেন। স্টার্ককে এ বার অন্য মেজাজে পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, মাথার উপরে দামের বোঝা নেই বলেই অনেক খোলামনে খেলতে পারছেন তিনি।
অনেকেই অভিযোগ করতেন, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলার সময় স্টার্ককে যে রকম ফর্মে দেখায়, তার ধারেকাছেও থাকেন না আইপিএলে। গত মরসুমে শুরুর দিকে প্রচুর রান হজম করতেন। কেন কেকেআর তাঁকে কিনতে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছিল এবং ২৫ কোটি খরচ করেছিল তা নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু কোয়ালিফায়ার এবং ফাইনালে তাঁর বোলিং সব সমালোচনার জবাব দেয়। তবে এ বার তাঁকে কেকেআর না ধরে রেখেছে, না নিলামে কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে। তাই স্টার্কের এই পারফরম্যান্স কিছুটা কেকেআরকেও জবাব।
ম্যাচের পর স্টার্ককে কুর্নিশ করেছেন রাজস্থানের অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন। বলেছেন, “আমরা সবাই স্টার্কিকে অসাধারণ বল করতে দেখলাম। নিঃসন্দেহে বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার। ম্যাচের সেরার খেতাব ওকেই দেব। ২০ ওভারেই ম্যাচটা জিতিয়ে দিল। ইচ্ছা ছিল চালিয়ে খেলার। কিন্তু স্টার্কি ম্যাচ বার করে দিল। আজ জিততে পারলে সাজঘরে খানিকটা ইতিবাচক মানসিকতা ফিরত।”
অস্ট্রেলীয় বোলারের উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন তাঁর দলের অধিনায়ক অক্ষর পটেলও। তিনি বলেছেন, “আমি জানতাম স্টার্ক নিজের পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারলে ম্যাচটা আমাদেরই হবে। ২০তম ওভার এবং সুপার ওভার বল করল। ১২ বলে ১২টা ইয়র্কার দেওয়া কি সহজ কথা? এই কারণেই তো অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি।”
আরও পড়ুন:
তিনি আরও বলেন, “১৮তম ওভারে বল করার পরেই বুঝলাম ইয়র্কারগুলো দারুণ দিচ্ছে। টি-টোয়েন্টিতে যে ভাবে খেলা হয় তাতে বোলারেরা পাওয়ার প্লে-তে মার খেতেই পারে। কী ভাবে ম্যাচ ফিরছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণেই স্টার্ক এত বড় মাপের ক্রিকেটার।”
যাঁকে নিয়ে এত হইচই, সেই স্টার্ক ঠান্ডা মাথায় শেষ ওভার করা নিয়ে বলেছেন, “স্বচ্ছ পরিকল্পনা ছিল। সেটা ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পেরেছি। কখনও-সখনও সেটা কাজে লাগে। ভাগ্যের সাহায্যও দরকার হয়। আমি দীর্ঘ দিন ধরে খেলায় অনেকেই জানে আমি কী করতে চলেছি। তবে আমি নিজের পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারলে জানি যে, কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না।”