ভারতীয় মহিলা দলের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার হয়ে উঠেছেন রিচা ঘোষ। তাঁর ব্যাটে গর্বিত বাংলাও। —ফাইল চিত্র
কয়েক দিন আগেই ছোটদের ক্রিকেটে বিশ্বজয় করেছেন। মহিলাদের অনূর্ধ্ব-১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পরে শিলিগুড়িতে ফিরতেও পারেননি রিচা ঘোষ। কারণ, হরমনপ্রীত কৌরদের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকা যেতে হয়েছে তাঁকে। সেখানে প্রথম ম্যাচে আবার সফল রিচা। ব্যাট হাতে ঝোড়ো ইনিংস খেলা যেন তাঁর কাছে ভাত-ডাল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও সাজঘর থেকে তৈরি হয়ে এসেছিলেন রিচা। দেখালেন, কী ভাবে অবলীলায় ম্যাচ বার করে নিয়ে যেতে হয়। বার বার তিনি ভরসা দিচ্ছেন হরমনপ্রীতদের।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রিচা যখন ব্যাট করতে নামেন তখন অধিনায়ক হরমনকে হারিয়ে চাপে ভারত। পাকিস্তানকে হারাতে ৩৯ বলে দরকার ছিল ৫৭ রান। সেখান থেকে জেমাইমাকে সঙ্গে নিয়ে দুরন্ত ইনিংস খেললেন তিনি। মাঝে এক বার তাঁকে এলবিডব্লিউ আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন রিচা। দেখা যায় বল তাঁর গ্লাভসে লেগেছে। ব্যস, তার পরে আর আটকানো যায়নি তাঁকে। ২০ বলে ৩১ রানের ইনিংস খেলেছেন। ৫টি চার মেরেছেন। তাঁকে দেখে বড় শট মারা শুরু করেন জেমাইমাও। শেষ পর্যন্ত ৬ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে যায় ভারত।
এমনিতেই বড় শট মারার সুনাম রয়েছে রিচার। যেখানে বাকিরা বাউন্ডারি পার করেন সেখানে রিচা ছক্কা মারেন দর্শকদের মধ্যে। কোনও মাঠই তাঁর কাছে বড় নয়। কয়েক মাস আগে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর ইনিংস দলকে জিতিয়েছিল। সেই একই কাজ আরও এক বার করলেন তিনি। তবে এ বার আর তাঁকে ছক্কা মারতে হল না। চার মেরেই দলকে জেতালেন।
রিচা যখন মাঠে ছিলেন তখন ডাগআউটে নিশ্চিন্ত দেখাচ্ছিল হরমনপ্রীতকে। রিচাকে আউট দেওয়ার পরে যখন রিভিউতে দেখা গেল তিনি নটআউট, তখন আরও এক বার চওড়া হাসি দেখা গেল ভারত অধিনায়কের মুখে। তিনি জানতেন, রিচা যত ক্ষণ রয়েছেন তত ক্ষণ তাঁরা খেলায় আছেন। তাই চিন্তা করছিলেন না তিনি। অধিনায়কের এই ভরসার জায়গা তৈরি করতে পেরেছেন রিচা।
কয়েক দিন আগে ভারতের মেয়েরা ছোটদের বিশ্বকাপ জেতার পরে আনন্দে ভেসেছিল শিলিগুড়ি। রিচাদের বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন মেয়র। জেতার পরে রিচার মা স্বপ্না ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘ঘরের মেয়েরা বিশ্বকাপ জিতল। আমার মেয়ে সেই দলের সদস্য। কী আনন্দ হচ্ছে, বোঝাতে পারব না!’’ রিচা ছোটবেলায় শিলিগুড়ির বাঘাযতীন অ্যাথলেটিক ক্লাবে প্রশিক্ষণ নিতেন। তাঁর প্রথম দিকের কোচ গোপাল সাহা বলেছিলেন, ‘‘রিচার সাফল্য আগামী দিনে শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের মেয়েদের উৎসাহ দেবে।’’
আর রিচা কী বলেছিলেন? বিশ্বকাপ জিতে ভিডিয়ো কলে বাবাকে বলেছিলেন, ‘‘খুব আনন্দ হচ্ছে! আমরা জেতার জন্য প্রত্যেকে সেরাটা দিয়ে খেলার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। প্রথম বিশ্বকাপ হাতে ভাল লাগছে। এই জয় আরও উৎসাহ দেবে।’’ রিচা উৎসাহ দিচ্ছেন গোটা বাংলাকে। ঝুলন গোস্বামীর পরে আবার এক বাঙালি মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে সবাই। সেই স্বপ্নেরই ফসল তিতাস সাধু, হৃষিতা বসুরা। একের পর এক মহিলা ক্রিকেটার উঠে আসছে বাংলার মফস্বলের ঘরগুলো থেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy