(বাঁ দিকে) রজত পাটীদার এবং প্রিয়াংশু পটেল। ছবি: পিটিআই।
দক্ষিণ আফ্রিকায় দস্তানা হাতে দুরন্ত ছন্দে ছিলেন কে এল রাহুল। কিন্তু দেশের মাটিতে ফিরতেই তাঁর কাঁধ থেকে সেই গুরুদায়িত্ব সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তার যুক্তিও আছে। পেসারদের বিরুদ্ধে দূরে দাঁড়িয়ে কিপিং করা যায়। কিন্তু ভারতের ঘূর্ণি পিচে আর অশ্বিন, রবীন্দ্র জাডেজাদের তাণ্ডব সামলাতে হবে সামনে দাঁড়িয়ে। কোনও বল আচমকা লাফিয়ে উঠতে পারে। কোনওটা আবারও সোজাও হতে পারে। সেকেন্ডের ভগ্নাংশে চলে আসতে পারে ক্যাচ। ভারতের মাটিতে তাই বিশেষজ্ঞ উইকেটকিপারকেই দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষে ভারতীয় দল। যা সমর্থন করলেন প্রাক্তন উইকেটকিপার সৈয়দ কিরমানিও।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ় শুরু হওয়ার দু’দিন আগে হায়দরাবাদের উপ্পল স্টেডিয়ামে সাংবাদিক বৈঠকে এসে কোচ রাহুল দ্রাবিড় ঘোষণা করেন, ‘‘দক্ষিণ আফ্রিকায় উইকেটকিপার হিসেবে রাহুল অসাধারণ দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু দেশের মাটিতে বিশেষজ্ঞ কিপারকেই দায়িত্ব দেওয়া হবে।’’ যোগ করেন, ‘‘ভারতের মাটিতে একজন কিপারকে সামনে দাঁড়িয়েই বেশিক্ষণ কিপিং করতে হয়। অশ্বিন, জাডেজাদের বল সামলানোর জন্য বিশেষজ্ঞ উইকেটকিপার সবচেয়ে বেশি জরুরি।’’
রাহুলকে তাই ব্যাটসম্যান হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তিনি ব্যাট করার সময় নেটে কিপিং করতে যান কে এস ভরত। নেট সেশনের শুরুতে বেশ কিছুক্ষণ ব্যাটও করানো হয় ভরতকে। অনুশীলন দেখে বোঝা গেল, দস্তানা হাতে দায়িত্বে থাকবেন তিনি-ই।
দ্রাবিড়ের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন প্রাক্তন ভারতীয় কিপার সৈয়দ কিরমানিও। আনন্দবাজারকে তিনি বলছিলেন, ‘‘বিদেশে উইকেটকিপিং করা অনেক সহজ। বাউন্স থাকার ফলে কোমরের উপরে বল আসে। ক্যাচ নেওয়ার অনেকটা সময় পাওয়া যায়।’’ যোগ করেন, ‘‘কিন্তু দেশের মাটিতে স্টাম্পের কাছে দাঁড়িয়ে কিপিং করতে হয়। সেকেন্ডের ভগ্নাংশে ক্যাচ আসতে পারে। বল অসমান বাউন্স করতে পারে। দ্রুত স্টাম্পিংয়ের জন্য তৈরি থাকতে হয়। বিশেষজ্ঞ কিপার ছাড়া যা সম্ভব নয়।’’ আরও বলছেন, ‘‘উইকেটকিপার তৈরি করা যায় না। তারা সেটা হয়েই জন্মায়। আজকাল ‘মেকশিফ্ট’ কিপার দেখা যায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেশি দিন থাকে না। কিপিংটা বিশেষজ্ঞেরই কাজ। অলরাউন্ডারের নয়।’’
রাহুলের কাঁধে আরও বড় দায়িত্ব এসে পড়তে পারে। বিরাট কোহলির পরিবর্তে চার নম্বরে খেলার পরীক্ষা দিতে হতে পারে। দ্রাবিড় বলছিলেন, ‘‘বিরাটের অভাব অনুভব করব। কিন্তু দলে যারা আছে, তাদের কাছে এটা একটা বড় সুযোগ।’’ নেটে এ দিন রোহিত শর্মা, যশস্বী জয়সওয়াল ও শুভমন গিলের পরে রাহুলই ব্যাট করতে ঢোকেন। পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে যান শ্রেয়স আয়ার। চার নম্বরে রাহুল নামেন কি না, সেটাই দেখার। এ দিনই আবার বিরাট কোহলির পরিবর্ত হিসেবে ভারতীয় শিবিরে যোগ দিলেন রজত পাটীদার।
মঙ্গলবার বড় বিপদের আশঙ্কা দেখা গিয়েছিল অনুশীলনে। ভারতের নেট সেশন চলাকালীন চোট পান শ্রেয়স আয়ার। থ্রো-ডাউন বিশেষজ্ঞের বল ডিফেন্ড করতে যান শ্রেয়স। অসমান বাউন্স করে বল আছড়ে পড়ে শ্রেয়সের ডান হাতে। যন্ত্রণায় কাতর কেকেআর অধিনায়ক বুঝতে পারছিলেন না আর ব্যাট করবেন কি না। নেট থেকে বেরিয়ে ব্যথার জায়গায় আইসপ্যাক দেন। ফের নেটে ফেরেন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে। বেশ কয়েকটি বড় শট খেলতেও দেখা যায় শ্রেয়সকে। চোট গুরুতর হলে তিনি কি ব্যাট করতে ফিরতেন? বুধবার অনুশীলনে ছবিটা পরিষ্কার হবে।
শ্রেয়সকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে বল করলেন বাংলার তরুণ বাঁ-হাতি স্পিনার প্রিয়াংশু পটেল। অনূর্ধ্ব-১৯ কোচবিহার ট্রফিতে ছ’ম্যাচে ৩৩ উইকেট নেওয়ায় নেট বোলার হিসেবে ডাক পান প্রিয়াংশু। তাঁর বাবা রাইটার্স বিল্ডিংয়ের পাশে গাড়ি পাহারা দেওয়ার কাজ করেন। কাঁকুড়গাছিতে একটি টালির বাড়িতে থাকেন প্রিয়াংশু। সেই জায়গা থেকে উঠে আসা তরুণ এ দিন রোহিত শর্মাকে দু’বার আউট করলেন। এক বার এলবিডব্লিউ। এক বার কট বিহাইন্ড। রবীন্দ্র জাডেজা, শুভমন গিল ও অক্ষর পটেলের পরামর্শও পেয়েছেন।
প্রিয়াংশু বলছিলেন, ‘‘অক্ষর ভাই বলেছেন গতির সঙ্গে বল ঘোরানোর চেষ্টা করতে। ঘূর্ণি পিচে গতির সঙ্গে বল করলে উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।’’ কুলদীপ যাদব যদিও অন্য পরামর্শ দিয়েছেন। প্রিয়াংশুর কথায়, ‘‘বল আরও বেশি ঘোরানোর কথা বলেছেন । ক্রিজ় ব্যবহার করে কখনও উইকেটের কোণ থেকে বল করতে হয়। কখনও উইকেটের পাশ থেকে। তবেই ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করা যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy