এমনিতেই নিয়মরক্ষার ম্যাচ ছিল। ভারত বনাম বাংলাদেশের সেই ম্যাচে বার বার বাধা দিল বৃষ্টি। শেষমেশ রাত ১০.২৩ নাগাদ ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হল। তবে ভারতের যা বিপদ হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে তত ক্ষণে। ফিল্ডিং করতে গিয়ে চোট পেয়ে সেমিফাইনালে অনিশ্চিত ওপেনার প্রতিকা রাওয়াল। তাঁর পা মচকে গিয়েছে। এখনও বিস্তারিত কোনও তথ্য জানায়নি বোর্ড। শুধু জানিয়েছে, প্রতিকাকে চিকিৎসকেরা পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
তবে যে চোট পেয়েছেন প্রতিকা, তাতে বৃহস্পতিবারের সেমিফাইনালে তাঁকে দেখতে পেলে অবাক হতে হবে। প্রতিকার ছিটকে যাওয়া ভারতের কাছে বড় ধাক্কা। আগের ম্যাচেই শতরান করেছিলেন তিনি। ওপেনিংয়ে স্মৃতি মন্ধানার সঙ্গে জুটিও জমে গিয়েছিল। তাঁকে ছাড়া স্বচ্ছন্দ হবেন না স্মৃতিও। শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলার আগে নিশ্চিত ভাবেই সমস্যায় পড়ল ভারত।
টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠান ভারতের অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর। বৃষ্টির কারণে খেলা কমে প্রথমে ৪৩ ওভার এবং পরে ২৭ ওভারে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ ১১৭/৯ তোলে। জবাবে ভারতের স্কোর যখন ৮.৪ ওভারে ৫৭/০, তখন আবার বৃষ্টি নামে। আর খেলা শুরু করা যায়নি।
রবিবারের ম্যাচে যে বৃষ্টি বিঘ্ন ঘটাবে, এটা বোঝা গিয়েছিল সকাল থেকেই। মুম্বইয়ে সকাল থেকেই চলছিল বৃষ্টি। দুপুর টস হওয়ার সময় এগিয়ে আসলেও তা থামছিল না। বাধ্য হয়ে টসের সময় পাঁচ মিনিট পিছিয়ে যায়। ৩.০৫-এ টস হয়। জিতে হরমনপ্রীত প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন। তখনই জানিয়ে দেন, রিচা ঘোষকে বিশ্রাম দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ক্রান্তি গৌড় এবং স্নেহ রানাকেও খেলানো হচ্ছে না। রাধা যাদব এবং আমনজ্যোত কৌর দলে আসেন।
টসের পরেই আকাশ আবার কালো করে আসে এবং বৃষ্টি শুরু হয়। কিছু ক্ষণ পর থেকেই কমতে থাকে ওভার। বিকেল ৪.৩০টে নাগাদ বৃষ্টি কমে। আকাশও কিছুটা পরিষ্কার হয়। আম্পায়ারেরা সিদ্ধান্ত নেন ৫টা থেকে খেলা শুরু করার। ৪৩ ওভারের ম্যাচ হবে বলে ঠিক হয়।
প্রথম ওভারেই রেণুকা সিংহ ফিরিয়ে দেন সুমাইয়া আখতারকে। শর্ট থার্ড ম্যানে ক্যাচ ধরেন শ্রী চরণী। আর্দ্র পরিবেশে ভারতের বোলিং খেলতে খুবই অসুবিধা হচ্ছিল বাংলাদেশের। ফলে রান তোলার গতি কমই ছিল। নবম ওভারে চরণী ক্যাচ ফেলেন শারমিন আখতারের। পরের ওভারেই দীপ্তি ফিরিয়ে দেন রুবিয়া হায়দারকে (১৩)।
ম্যাচের বয়স যখন ১২.২ ওভার, তখন আবার বৃষ্টি নামে। বৃষ্টির যা গতি ছিল তাতে মনেই হচ্ছিল না খেলা আর শুরু করা যাবে। কিছু ক্ষণের মধ্যে মাঠের জায়গায় জায়গায় জল জমে যায়। ৫.৫০ নাগাদ বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। তা শেষ পর্যন্ত থামে ৭.৪৫ নাগাদ। মাঝে আম্পায়ারদের সঙ্গে দুই দলের অধিনায়কই কথা বলেন। মাঠ ঠিক করার জন্য বাড়তি সময় চাওয়া হয়।
রাত ৮.০৫ মিনিটে আবার খেলা শুরু হয়। তত ক্ষণে ম্যাচ কমে হয়েছে ২৭ ওভারের। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই ১২.২ ওভার খেলে ফেলেছিল। ফলে তাদের কাজ আরও কঠিন হয়ে যায়। ওভার কমে এলেও বাংলাদেশের রানের গতি বাড়ছিল না। প্রতি ওভারে চার-পাঁচ রান করে উঠছিল। ভারতের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে রান তোলার সুযোগই পাচ্ছিল না বাংলাদেশ।
১৭তম ওভারে রাধা যাদবের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হন নিগার সুলতানা (৯)। তার পরেই রানের গতি বাড়ে বাংলাদেশের। শোভনা মোস্তারি এবং শারমিন মিলে চালিয়ে খেলার চেষ্টা করেন। দীপ্তিকে একটি ওভারে তিনটি চার মারেন শারমিন। সেই ওভারেই প্রতিকা চোট পান।
দীপ্তির বল মিড উইকেট অঞ্চলে মেরেছিলেন শারমিন। দৌড়ে বল ধরতে আসছিলেন প্রতিকা। কাছাকাছি এসে হঠাৎই পা মচকে পড়ে যান। মাটিতে শুয়ে কাতরাতে থাকেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন চিকিৎসকেরা। প্রথমে বোঝা যায়নি কী হয়েছে। পরে রিপ্লে-তে দেখা যায়, মাটিতে প্রতিকার পা পিছলে গিয়ে মচকে গিয়েছে। আসলে দৌড়নোর সময় বলের থেকে কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলেন প্রতিকা। শেষ মুহূর্তে বুঝতে পেরে পিছনোর চেষ্টা করেন। তখনই তাঁর জুতো আটকে যায় নরম মাটিতে। পড়ে যাওয়ার সময় পা মচকে যায়।
উঠে দাঁড়াতেই পারছিলেন না প্রতিকা। কোনও রকমে চিকিৎসক এবং সাপোর্ট স্টাফদের কাঁধে চড়ে মাঠ ছাড়েন। তখনই মনে হচ্ছিল তাঁর চোট গুরুতর। ভারতের ইনিংস শুরু করার পর প্রতিকা ব্যাপারে খবর দেয় বিসিসিআই। জানায়, প্রতিকার হাঁটু এবং গোড়ালিতে চোট লেগেছে। বোর্ডের চিকিৎসক দল তাঁকে নজরে রেখেছে।
আরও পড়ুন:
ওই ঘটনার পরেই বাংলাদেশ একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে। ৯০/৩ থেকে ১১৭/৯ হয়ে যায় তারা। সর্বোচ্চ রান শারমিনের (৩৬)। ভারতের হয়ে তিন উইকেট নেন রাধা যাদব। দু’উইকেট শ্রী চরণীর। একটি করে উইকেট রেণুকা, দীপ্তি এবং আমনজ্যোত কৌরের।
চোট পাওয়ায় প্রতিকা ওপেন করতে পারেননি। স্মৃতির সঙ্গে নামেন আমনজ্যোৎ। খারাপ খেলেননি তিনি। আমনজ্যোৎ চেষ্টা করেছেন একটা দিক ধরে রাখার। আগ্রাসী মেজাজে খেলেন স্মৃতি। খেলা বন্ধ হওয়ার সময় স্মৃতি ৬টি চারের সাহায্যে ২৭ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন। আমনজ্যোৎ অপরাজিত ছিলেন ২৫ বলে ১৫ রানে।