কটকে বীরেন্দ্র সহবাগকে মনে করালেন রোহিত শর্মা। ছক্কা মেরে শতরান করলেন তিনি। বুঝিয়ে দিলেন আবার আগের মেজাজে ফিরেছেন। যে রোহিত মারার বল পেলে মারবেনই। সে তিনি যতই শূন্য রানে থাকুন বা শতরানের মুখে। ছক্কা মারতে দ্বিতীয় বার চিন্তা করেন না। ছক্কাটি মারলেন আদিল রশিদকে। যিনি কিছু ক্ষণ আগেই বিরাট কোহলিকে আউট করেছিলেন। তাঁকে ছক্কা মেরেই এক দিনের ক্রিকেটে ৩২তম শতরানটি করে ফেললেন রোহিত। ৯০ বলে ১১৯ রান করলেন। ভারতকে জয়ের রাস্তা দেখালেন।
দীর্ঘ দিন রান পাচ্ছিলেন না রোহিত। একের পর এক ম্যাচে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। শেষ বার তিনি শতরান করেছিলেন গত বছর। ৩৩৯ দিন আগে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ধর্মশালা টেস্টে শতরান করেছিলেন তিনি। এক দিনের ক্রিকেটে শেষ শতরানটি এসেছিল ২০২৩ সালে। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে শতরান করেছিলেন তিনি। তার পর থেকে এক দিনের ক্রিকেটে আর শতরান আসেনি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও রোহিতের শেষ শতরানটি আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেই। সেটাও এসেছিল ২০২৪ সালে। কিন্তু গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকেই রান পাচ্ছিলেন না রোহিত।
একের পর এক ম্যাচে অল্প রানে সাজঘরে ফিরতে হচ্ছিল তাঁকে। প্রশ্ন উঠছিল তাঁর দলে জায়গা পাওয়া নিয়েও। মনে করা হচ্ছিল সাদা বলের ক্রিকেটে রান পাবেন। কিন্তু প্রথম এক দিনের ম্যাচে রান না পাওয়ায় সেখানেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। অবশেষে রবিবার রান পেলেন রোহিত। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে রানে ফিরলেন তিনি। কটকে সমর্থকেরা উপভোগ করলেন তাঁর ইনিংস। একের পর এক ছক্কা মারলেন। ফ্লিক, হুক, পুল মারলেন অনায়াসে। রোহিত ফিরলেন রোহিতে।
আরও পড়ুন:
শতরান করে বাড়তি কোনও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন না রোহিত। সাধারণত শতরান করার পর ব্যাটারদের হেলমেট খুলতে দেখা যায়। কিন্তু রোহিত তা করলেন না। এক বার ব্যাটটা তুললেন শুধু। আবার মন দিলেন রান করায়। তিনি জানেন দীর্ঘ দিন রান না পাওয়ার সময় সমালোচকেরা যে ভাবে তাঁর প্রতিটা শট নিয়ে কাটাছেঁড়া করছিল, পরের ম্যাচ রান না পেলে আবার সেটা শুরু হয়ে যাবে। তাই একটি শতরান করে সে ভাবে উচ্ছ্বসিত নন রোহিত। জানেন আরও রান করতে হবে। সামনেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, ভারতীয় সমর্থকেরা চাইবেন রোহিত সেই প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিক ভাবে রান করুন।
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে গত বছর এক দিনের ম্যাচে দু’টি অর্ধশতরান করেছিলেন। তার পর থেকে লাল বলের ক্রিকেটই খেলেছেন রোহিত। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে দু’টি টেস্ট মিলিয়ে চার ইনিংসে রোহিত করেছিলেন মোট ৪২ রান। নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনটি টেস্টে ছ’টি ইনিংসে তিনি মোট ৯১ রান করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ায় রোহিতের ব্যর্থতার দিকে আরও বেশি করে আঙুল ওঠে। তিনি প্রথম টেস্ট খেলেননি। দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে নেমেছিলেন মিডল অর্ডারে। অস্ট্রেলিয়ায় মোট তিনটি টেস্ট খেলেছিলেন তিনি। রান না পাওয়ার কারণে শেষ টেস্টে নিজেই বসে গিয়েছিলেন রোহিত। অস্ট্রেলিয়ায় তিনটি ম্যাচে পাঁচটি ইনিংস খেলে রোহিত মোট ৩১ রান করেছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ব্যর্থতার পর সিনিয়র ক্রিকেটারদের রঞ্জি ট্রফি খেলতে একপ্রকার বাধ্য করেন কোচ গৌতম গম্ভীর। কিন্তু রঞ্জিতেও রান পাননি রোহিত। জম্মু-কাশ্মীরের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ৩ রান করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৮ রান করলেও তিনটি বাউন্ডারি মেরেছিলেন। নাগপুরে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম এক দিনের ম্যাচে ২ রানের বেশি করতে পারেননি। সেই সব ব্যর্থতা কাটিয়ে রবিবার রানে ফিরলেন রোহিত। ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় সুনীল গাওস্কর বলেন, “রোহিতকে আউট করার জন্য ইংল্যান্ডকে বিশেষ কিছু করতে হত।” সেটাই করলেন ফিল্ডার আদিল রশিদ। লিয়াম লিভিংস্টোনের বলে বড় শট খেলতে গিয়েছিলেন রোহিত। পিছন দিকে দৌড়ে মিড উইকেটে ক্যাচ নেন রশিদ। তাতেই আউট রোহিত।
রবিবার একটি নজিরও গড়লেন রোহিত। এক দিনের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ছক্কা মারার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলেন তিনি। ক্রিস গেল এক দিনের ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের হয়ে ৩৩১টি ছক্কা মেরেছিলেন। তাঁকে টপকে গেলেন রোহিত। তিনি রবিবার সাতটি ছক্কা মারলেন। এক দিনের ক্রিকেটে ৩৩৮টি ছক্কা মারা হয়ে গেল তাঁর। সামনে শুধু শাহিদ আফ্রিদি। তিনি এক দিনের ক্রিকেটে ৩৫১টি ছক্কা মেরেছেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪৯তম শতরান করে ফেললেন রোহিত। এর মধ্যে ৩২টি এসেছে এক দিনের ক্রিকেটে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে যে পরিসংখ্যান স্বস্তি দেবে ভারতকে। রোহিত ২০২৩ সালের এক দিনের বিশ্বকাপ থেকে অনেক বেশি আগ্রাসী মনোভাব দেখাচ্ছেন ব্যাট করতে নেমে। শুরু থেকেই ব্যাট চলছিল তাঁর। কিন্তু মাঝে রান না পাওয়ায় তাঁর সেই ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। কটকে বোলারেরা প্রায় কোনও সাহায্য পাননি। এমন একটা পিচে রোহিত রান করে নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ পেলেন। তিনি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুবাইয়ে পাটা পিচই পাবেন। সেখানেও বোলারদের উপর এই ভাবে শাসন করলে অবাক হওয়ার থাকবে না।