ইনিংসের শুরুতে ফিল্ডিংয়ের ফাঁক খুঁজে পাচ্ছিলেন না। রান করতে সমস্যা হচ্ছিল। সেই সময় কিছুটা হলেও নিজের উপর বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন শুভমন গিল। তখনই দলের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীরের পরামর্শ পান তিনি। গম্ভীরের এক মন্ত্রেই বদলে যায় তাঁর খেলা। শেষ পর্যন্ত এজবাস্টনে প্রথম ইনিংসে রেকর্ড ২৬৯ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। এই ইনিংসের নেপথ্যে কোচ গম্ভীরকে কৃতিত্ব দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক।
সম্প্রচারকারী চ্যানেলে শুভমন জানিয়েছেন, কী ভাবে গম্ভীরের পরামর্শ তাঁর কাজে লেগেছে। ভারত অধিনায়ক বলেন, “প্রথম দিন মধ্যাহ্নভোজের বিরতির আগে আমি ৩৫-৪০ রানে ব্যাট করছিলাম। প্রায় ১০০ বল খেলে ফেলেছিলাম। সাজঘরে ফিরে গৌতি ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলি। জানাই যে ফিল্ডিংয়ের ফাঁক খুঁজে পাচ্ছি না। যা মারছি সোজা ফিল্ডারের কাছে যাচ্ছে। গৌতি ভাই আমাকে বলেছিল, উইকেটে পড়ে থাকতে। তা হলেই রান আসবে। সেই পরামর্শ তার পর কাজে লাগিয়েছি। উইকেটে টিকে থেকেছি। একটা সময়ের পরে সহজে রান করেছি।”
আইপিএল চলাকালীনই শুভমনকে ভারতের টেস্ট অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়। সেই সময় থেকেই তাঁর মন পড়ে লাল বলের ক্রিকেটে। সেই সময় থেকেই টেস্টের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি। শুভমন জানিয়েছেন, এই সিরিজ়ের আগে কিছু বিষয়ে কাজ করেছেন তিনি। দীনেশ কার্তিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারত অধিনায়ক বলেন, “এই সিরিজ়ের আগে কয়েকটা বিষয়ে কাজ করেছি। আইপিএলের শেষেই সেগুলো শুরু করেছিলাম। মনে হচ্ছিল, টেস্টে কাজে লাগবে। এখন মনে হচ্ছে, আমার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল।”
কী কী বিষয়ে তিনি কাজ করেছেন, তা তখন না বললেও পরে খোলসা করেছেন শুভমন। তিনি বলেন, “আইপিএলের পরে আমার টেকনিকে কিছু বদল করেছি। ব্যাটিং স্টান্স (ব্যাট হাতে দাঁড়ানোর ভঙ্গি) একটু বদলেছি। কখনও ক্রিজ় ছেড়ে বেরিয়ে দাঁড়াচ্ছি, যাতে সুইং কম সামলাতে হয়। বল হওয়ার পর পায়ের নড়াচড়াতেও একটু বদল করেছি। আমি আগেও ভাল ব্যাট করছিলাম। কিন্তু ৩০-৪০ রান করে আউট হয়ে যেতাম। সেটা যাতে না হয় তার জন্যই এই বদল।”
শুধু টেকনিক বা ব্যাটিংয়ের ধরন বদলালেই হয় না, টেস্টে সফল হওয়ার জন্য মানসিকতার বদলও জরুরি। সেটাও করেছেন শুভমন। ভারত অধিনায়ক বলেন, “টি-টোয়েন্টি শেষ করে সরাসরি টেস্টে নামা কঠিন। তার জন্য মানসিকতাতেও বদল করতে হয়। টি-টোয়েন্টিতে প্রাথমিক লক্ষ্য থাকে প্রতি বলে বড় শট মারতে হবে। টেস্টে ধৈর্য লাগে। সময় দিতে হয়। আইপিএলের পরে মানসিকতা বদলাতে হয়েছে। তবেই রান এসেছে।”
আরও পড়ুন:
ইংল্যান্ডের মাটিতে ২৬৯ রানের ইনিংসের পর হোটেলে ফিরে প্রথমেই সুইমিং পুলে ঝাঁপ মেরেছেন শুভমন। শরীর ও মন ঠান্ডা করেছেন। তার পর নৈশভোজ সেরে ঘরে ফিরে ফোনে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। শুভমন বলেন, “বাবা বলল, ‘ভাল খেলেছ। তোমার ব্যাটিং দেখে খুব আনন্দ হয়েছে। তোমাকে নিয়ে গর্ব হচ্ছে।’ মা বলল, ‘এ ভাবেই খেলে যাও। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন।’”
বাবা-মায়ের প্রশংসা তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় পুরস্কার। তবে সেই সঙ্গে মনখারাপও রয়েছে ভারত অধিনায়কের। শুভমন বলেন, “বাবা-মায়ের এই কথার গুরুত্ব আমার কাছে অনেক। ছোট থেকে বাবা সব সময় আমার পাশে থেকেছে। আমার ক্রিকেট কাছ থেকে দেখেছে। বাবা আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু। মা-ও আমাকে সবসময় উৎসাহ দিয়েছে। ওরা খুশি। কিন্তু একটা দুঃখও হচ্ছে। ৩০০ মিস্ হয়ে গেল।”
ত্রিশতরান হাতছাড়া হলেও এজবাস্টনের ইনিংসে আধ ডজন রেকর্ড গড়েছেন শুভমন। ভারতীয় অধিনায়কদের মধ্যে টেস্টে সর্বাধিক রান করেছেন তিনি। ইংল্যান্ডের মাটিতেও কোনও ভারতীয় ক্রিকেটারের এটা সর্বাধিক রান। এই প্রথম কোনও ভারতীয় অধিনায়ক ইংল্যান্ডের মাটিতে দ্বিশতরান করেছেন। অধিনায়ক হিসাবে পর পর দুটো টেস্টে বড় রান এসেছে শুভমনের ব্যাট থেকে। এই ছন্দই এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন তিনি।