টেবিলের উপর চায়ের কাপ আর প্লেট। গৌতম গম্ভীর চুমুক দিয়েছেন কি না জানা নেই। তখন দক্ষিণ আফ্রিকার মার্কো জানসেনের ব্যাটিং তাণ্ডব চলছে। আরও গম্ভীর হচ্ছেন গম্ভীর। ঠিক এই সময়ই মাঠে দলের দায়িত্ব নিয়ে নিলেন কোচের ঘোর অপছন্দের রোহিত শর্মা। গম্ভীরের মুখ আরও গোমড়া হল।
কোচ হয়ে তাঁকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন গৌতম গম্ভীর। কঠিন সময়ে সেই রোহিত শর্মা নিজেই কাঁধে তুলে নিলেন দায়িত্ব। রাঁচীতে ৩৫০ রান তাড়া করতে নেমে যখন মার্কো জানসেন ও ম্যাথু ব্রিৎজ়কের ব্যাটে দক্ষিণ আফ্রিকা জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে, তখন দেখে বোঝা গেল মাঠে রোহিতই অধিনায়ক। তিনি বুঝিয়ে দিলেন, এখনও ধার কমেনি। কুলদীপ যাদবকে একটি ওভারের জন্য ফিরিয়ে আনলেন। সেই ওভারেই জানসেন ও ব্রিৎজ়কেকে আউট করলেন কুলদীপ। ওই একটা ওভারই খেলার ছবি বদলে দিল। জানসেনকে আউট করে রোহিতের দিকে তাকিয়ে কুলদীপের ইশারা বুঝিয়ে দিল, শর্মার পরিকল্পনা শুনেই উইকেট নিয়েছেন তিনি।
রোহিতকে অধিনায়কত্ব করতে দেখে অবশ্য ভাল লাগেনি গম্ভীরের। তাঁর চোখমুখ দেখেই সেটা বোঝা যাচ্ছিল। সাজঘরে গোমড়া মুখে বসেছিলেন প্রধান কোচ। রোহিতের অবশ্য সে দিকে তাকানোর সময় ছিল না। বা ইচ্ছা করেও তাকাননি তিনি। নিজের কাজ মন দিয়ে করে যাচ্ছিলেন। প্রতি ওভারের পর রাহুলের সঙ্গে কথা বলছিলেন। কাকে বল দেওয়া হবে, কোথায় ফিল্ডার রাখা হবে সেই কাজটাও করছিলেন তিনি।
৩০ গজ বৃত্তের মধ্যেই দাঁড়িয়েছিলেন রোহিত। অধিনায়ক থাকাকালীনও সেখানেই থাকতেন তিনি। রাঁচীতে ৩৫০ রান তাড়া করতে যখন দক্ষিণ আফ্রিকা নামছে তখন মাঠে দাঁড়িয়ে সকলকে ‘পেপ টক’-ও দেন রোহিত। তবে সেখানেই থেমে থাকেননি তিনি। শিশির পড়ায় বল ধরতে যখন বোলারদের সমস্যা হচ্ছিল, তখন তাঁরা খুঁজছিলেন রোহিতকেই। অধিনায়ক লোকেশ রাহুলের কাজ তখন শুধু উইকেটের পিছন থেকে সকলকে উৎসাহ দেওয়া। সেই কাজটা মন দিয়ে করলেন তিনি।
ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম এক দিনের ম্যাচের স্কোরকার্ড।
জানসেন ও ব্রিৎজ়কের ইনিংস চলাকালীন রোহিত বার বার পেসার-স্পিনারে বদল করলেন। তাঁর পরিকল্পনা ছিল, ব্যাটারেরা যাতে একটি নির্দিষ্ট পেসে অভ্যস্ত না হয়ে যান। সেই কাজে সফল তিনি। নইলে জানসেন যে ভাবে হাত খোলা শুরু করেছিলেন, তিনি হয়তো আগেই খেলা ভারতের হাত থেকে নিয়ে চলে যেতেন। কিন্তু রোহিতের পরিকল্পনার কাছে থামতে হল তাঁকে। রোহিতের পাশাপাশি কোহলিকেও সমান সক্রিয় দেখাল। তিনিও প্রয়োজনে পরামর্শ দিচ্ছিলেন রোহিতকে। বোলারদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। কোহলি সাধারণত বাউন্ডারিতে ফিল্ডিং করেন। সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিচ্ছিলেন তিনি। পাশাপাশি দুর্দান্ত ফিল্ডিংও করেন রোহিত, কোহলি। তাঁদের দেখে বয়স বোঝা যাচ্ছিল না।
ম্যাচের আগের দিন সাংবাদিক সম্মেলনে এসে রাহুল বলে দিয়েছিলেন, রোহিত-কোহলি থাকলে তাঁরা আলাদা বল পান। এই দু’জন থাকলে সাজঘরের চেহারা বদলে যায়। রো-কো’ মতো সিনিয়র জুটিকে ভারতীয় দলে দরকার। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ২০২৭ বিশ্বকাপে এই দু’জনকে দরকার।
দরকার তো এই জন্যই। দল যখন বিপদে, সিনিয়র হিসাবে কেউ যদি নিজে থেকে এগিয়ে এসে পরামর্শ দেন, অধিনায়কের সুবিধা তো হবেই। রোহিত এর আগেও এমন করেছেন।
কিন্তু অজিত আগরকর-গৌতম গম্ভীরেরা বিশ্বকাপের আগে এই দু’জনকে ছাঁটাই করার যে সবরকম চেষ্টা করবেন, তা বিভিন্ন মহলে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। রাহুল ওই সাংবাদিক সম্মলনের পর কোচের ধমক খেয়েছিলেন কি না জানা নেই, কিন্তু মাঠে রোহিতের দাপাদাপিতে, তাঁর যে অভিব্যক্তি ফুটে উঠল, তাতে এখনও বিশ্বকাপে রো-কো’কে দেখতে পাওয়ার ব্যাপারে কোনও নিশ্চয়তা নেই।
আরও পড়ুন:
অধিনায়ক থাকতে রোহিত, কোহলির আগ বাড়িয়ে হাল ধরতে যাওয়ায় গম্ভীর যে বিরক্ত হবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা বলে ব্যাটিংয়ের সময়ও? কোহলির শতরান এবং রোহিতের অর্ধশতরান সাজঘরে বসে দেখেছেন গম্ভীর। হাততালি দিয়েছেন। কিন্তু কোনও সময়ই মুখে হাসি দেখা যায়নি গৌতির। কোহলির শতরানের সময় তো আবার তাঁর চোখে রোদচশমা ছিল। গম্ভীরের এই রোদচশমা পরে বসার সমালোচনা হয়েছে সমাজমাধ্যমে। অনেকের মতে, ইচ্ছা করেই রোদচশমা পরেছিলেন তিনি। যাতে চোখ দেখে আসল অভিব্যক্তিটা বোঝা না যায়, সেই জন্যই তিনি নাকি এই কাজ করেছেন!