Advertisement
E-Paper

বল বদলাতেই ফল বদলাল! চার দিনের মধ্যে গম্ভীর ভারতীয় ক্রিকেটের মুখে হাসি, রো-কো জুটিতে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে জয়

বিরাট কোহলির শতরান, রোহিত শর্মার অর্ধশতরান এবং কুলদীপ যাদবের একটি ওভার ঘুরিয়ে দিল ম্যাচ। এক দিনের সিরিজ়ের প্রথম দ্বৈরথে প্রোটিয়াদের হারিয়ে দিল ভারত। সাদা বলে ফিরতেই হাসি ফিরল দলের মুখে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৫ ২১:৫০
cricket

রোহিত শর্মা (বাঁ দিকে) এবং বিরাট কোহলি। — ফাইল চিত্র।

লাল বল থেকে সাদা বলে প্রত্যাবর্তন। সেই সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটেও ফিরল হাসি। রাঁচীতে এক দিনের সিরিজ়ের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৭ রানে হারিয়ে দিল ভারত। দর্শকেরা যা দেখতে মাঠে এসেছিলেন, সেটা পেয়ে গেলেন। বিরাট কোহলির শতরান, রোহিত শর্মার অর্ধশতরান! আর কী চাই। তবে শেষ ওভার পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার মরিয়া লড়াই বুঝিয়ে দিল, ভারতের কাজ এখনও বাকি। এই জয় হেসেখেলে এল না, যথেষ্ট কষ্ট করতে হল।

সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতের সাম্প্রতিক নজির খারাপ নয়। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে এক দিনের সিরিজ় হারলেও টি-টোয়েন্টি সিরিজ় জিতেছে ভারত। তার আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, এশিয়া কাপ জিতেছে। লাল বলের জুজু কাটিয়ে সাদা বলে ফিরতেই আবার স্বমহিমায় দেখা গেল গোটা দলকে। দেরিতে হলেও হাসি ফিরল গুরু গৌতম গম্ভীরের মুখেও। প্রথমে ব্যাট করে ৩৪৯/৮ তুলেছিল ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা আটকে গেল ৩৩২ রানে।

রোহিতের পরিচিত মেজাজ

দু’বছর আগের এক দিনের ক্রিকেট থেকে একটা ঘরানা শুরু করেছেন রোহিত শর্মা। ওপেন করতে নেমে এতটাই আগ্রাসী খেলছেন যে বাকিদের উপর চাপ কমে যাচ্ছে। তাঁকে সেই স্বাধীনতাও দেওয়া হয়েছে। রোহিতের লক্ষ্য থাকে পাওয়ার প্লে-তে যতটা সম্ভব রান তুলে নেওয়া। এর একটা উল্টো দিকও রয়েছে। চালিয়ে খেলতে গেলে আউট হওয়ার সম্ভাবনাও বহু গুণে বাড়ে। রোহিত অবশ্য কোনও দিনই সে সবের পরোয়া করেন না। সে কারণেই সাফল্য পাচ্ছেন। সিডনিতে শেষ যে ম্যাচটি খেলেছিলেন, সেখানে শতরান করে দলকে জিতিয়েছিলেন। রাঁচীতে তাঁর ব্যাট থেকে আগ্রাসী অর্ধশতরান দেখা গেল। এক রানের মাথায় ক্যাচ পড়েছে। তবু আগ্রাসনের রাস্তা থেকে সরেননি রোহিত। করবিন বশকে টানা দু’টি চার মেরেছেন। প্রেনেলান সুব্রায়েনকে পর পর দু’টি ছয় মেরেছেন। সবচেয়ে ভাল লেগেছে বিরাট কোহলির সঙ্গে তাঁর জুটি। দু’জনের বোঝাপড়া কতটা ভাল তা এই ম্যাচেও বোঝা গিয়েছে। সিডনির পর রাঁচীতেও দু’জনের জুটি ভারতকে শক্তিশালী করেছে। ২০তম ওভারে মার্কো জানসেনকে ছয় মেরে শাহিদ আফ্রিদির নজির ভেঙে দিয়েছেন। এক দিনের ক্রিকেট বরাবরই রোহিতের পছন্দের। ছোটবেলা থেকে পরিবারের সঙ্গে এক দিনের ক্রিকেট দেখে বড় হয়েছেন। একটি ফরম্যাটে খেলবেন বলে ১০-১২ কেজি ওজন কমিয়ে ছিপছিপে হয়েছেন। এই অভিজ্ঞতা এবং দায়বদ্ধতা নিয়েও যদি প্রশ্ন ওঠে, তা হলে সত্যিই তা ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য দুর্ভাগ্যের।

ব্যাটে জবাব কোহলির

একই কথা বলা যায় কোহলির ক্ষেত্রেও। পুকুরে মাছের সাঁতার কাটার মতোই সাবলীল তাঁর ক্রিকেট। সাদা বলের ক্রিকেটে রান তাড়া করে সাফল্য নিঃসন্দেহে বেশি। কিন্তু কোহলির দায়বদ্ধতা এবং পারফরম্যান্স নিয়েই যেখানে অনবরত প্রশ্ন তোলা হয়, সেখানে প্রথমে ব্যাট আর পরে ব্যাট করার মধ্যে ফারাক নেই। কোহলি সব সময়েই একই মানসিকতা নিয়ে খেলতে নামেন। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে শুরুর দিকে সাধারণত একটু ধরে খেলতে দেখা যায় কোহলিকে। এ দিন প্রথম বলেই নান্দ্রে বার্গারের বল বাউন্ডারিতে পাঠালেন। তৃতীয় বলে এলবিডব্লিউয়ের সম্ভাবনা তৈরি হওয়া সত্ত্বেও বেঁচে গেলেন। পরের কয়েক বলে খুচরো রান। তার পর বেরিয়ে এল তাঁর আগ্রাসী রূপ। রাঁচীতে এমনিতেই কোহলির নজির বেশ ভাল। অতীতে দু’টি শতরান ছিল। এ দিন তিন নম্বরটা যোগ হল। এত আগ্রাসী কোহলিকে শেষ কবে খেলতে দেখা গিয়েছে তা অনেকেই মনে করতে পারছেন না। শুধু আগ্রাসন নয়, কোহলির খেলায় ছিল নিয়ন্ত্রণ। আউট হওয়ার একটি সুযোগও তিনি দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেননি। ১৩৫ রানের ইনিংসে আগাগোড়া নিখুঁত ক্রিকেট খেলেছেন। অর্ধশতরান এবং শতরান দু’টিই এসেছে বাউন্ডারি থেকে। বশকে যে ভাবে ছয় মেরে ৫০ পেরোলেন তা অনেক দিন চোখে লেগে থাকার মতো। ৯০-এর ঘরে পৌঁছে কিছু শ্লথ হয়ে গিয়েছিল তাঁর ব্যাটিং। উপায়ও ছিল না। উল্টো দিকে তখন পর পর উইকেট পড়েছে। সাজঘরে ফিরেছেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়, ওয়াশিংটন সুন্দর। তবু সেই বাউন্ডারি মেরেই শতরান পূরণ হল। রান নেওয়ার সময় কোহলির সেই লাফ বুঝিয়ে দিল, খেলা এখনও অনেক বাকি। শতরান পেরিয়ে সুব্রায়েনকে চার, ছয়, ছয়, চার মারলেন। পরের বলে বার্টম্যানকে জোড়া চার। ক্লান্ত হওয়ায় পিঠের পেশিতে টান ধরেছিল। মাঠেই শুশ্রূষা নিতে হল। তার পরেই উঠে পড়লেন তড়াক করে। এতেও যদি তাঁর ফিটনেসের প্রমাণ না পাওয়া যায়, আর কিসে পাওয়া যাবে? তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান নিতে সমস্যা হচ্ছিল রুতুরাজ, ওয়াশিংটনদেরও। নির্বাচকেরা কি সেটা দেখতে পেয়েছেন?

পুরনো চাল ভাতে বাড়ে

গুরু গম্ভীরের আমলে অভিজ্ঞতার বর্জন এবং তারুণ্যের আগমনের নীতি চালু হয়েছে। অনেকটা গ্রেগ চ্যাপেলের জমানার মতোই পুরনোদের যথেষ্ট সুযোগ না দিয়েই ছাঁটাইয়ের রাস্তায় হাঁটছেন তিনি। রবিবারের ম্যাচ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেল, পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। ব্যাটিংয়ের সময় কোনও তরুণ ক্রিকেটারই প্রভাব ফেলতে পারলেন না। খেলতে হল সেই বুড়োদেরই। স্কোরবোর্ড দেখলেই বোঝা যাবে। রোহিত (৩৮ বছর) অর্ধশতরান, কোহলি (৩৭ বছর) শতরান, রাহুল (৩৩ বছর) অর্ধশতরান, জাডেজা (৩৬ বছর) ৩২ রান। সেখানে ২৩-এর যশস্বী জয়সওয়ালের ১৮ বা ২৮-এর রুতুরাজের ৮ রান পাতে দেওয়ার মতো নয়। শুধু তারুণ্যে ভর করে কোনও দলই বেশি দূর খেলতে পারে না। দলগত খেলায় কখনও সখনও একটা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বা লিয়োনেল মেসিদেরও দরকার হয়। এটা গম্ভীর যত দ্রুত বুঝবেন ততই ভাল।

ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম এক দিনের ম্যাচের স্কোরকার্ড।

ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম এক দিনের ম্যাচের স্কোরকার্ড।

হর্ষিতের তিন উইকেট

রাঁচীর পিচে পাঁচটা থেকে শিশির পড়ার সম্ভাবনা থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ৩৫০ রান তাড়া করা খুব একটা কঠিন ছিল না। তবে শুরুতেই দু’টি উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় তারা। সেই চাপ এনে দেন হর্ষিত রানা। ভারতীয় দলে তাঁর জায়গা নিয়ে এমনিতেই বার বার প্রশ্ন ওঠে। গম্ভীরের সুরে সুর মেলানোর জন্য প্রথম একাদশে জায়গা পান, এমন কথা ভেসে বেড়ায় ভারতের ক্রিকেটমহলে। তবে এ দিন হর্ষিত যে দু’টি বলে রায়ান রিকেলটন (০) এবং কুইন্টন ডি কককে (০) আউট করলেন তার প্রশংসা করতেই হবে। বাঁ হাতি রিকেলটনের বিরুদ্ধে ‘ওভার দ্য উইকেট’ বল করতে এসেছিলেন হর্ষিত। প্রথম বলই ঢুকে আসে ভেতরে। সামনের পা এগিয়ে রিকেলটন রক্ষণ করতে চাইলেও লাভ হয়নি। ব্যাট-প্যাডের মাঝখান দিয়ে বল স্টাম্প ভেঙে দেয়। দু’বল পরেই আউট হন ডি কক। এ বার হর্ষিতের আউটসুইংয়ে পরাস্ত হন তিনি। কভারের দিকে মারতে চেয়েছিলেন। বল ব্যাট ছুঁয়ে রাহুলের গ্লাভসে জমা হয়। তবে হর্ষিতের সেরা উইকেট নিঃসন্দেহে ডেওয়াল্ড ব্রেভিসকে ফেরানো। চার-ছক্কার বন্যা বইছিল ব্রেভিসের ব্যাটে। আর কিছু ক্ষণ থাকলে ম্যাচের মোড় ঘুরে যেত। বলের গতি কমিয়ে, বৈচিত্র এনে তাঁকে তুলে নেন হর্ষিত। আঙুল দেখিয়ে সাজঘরে ফেরার ইঙ্গিত করেন।

কুলদীপের জোড়া ধাক্কা

মার্কো জানসেন ব্যাট করতে নামার সময় বল করতে আসেন কুলদীপ। পিছন থেকে অধিনায়ক রাহুল বলতে থাকেন, ‘সামালকে বোলিং কর না। ইয়ে পেহলে বল সে চালায়েগা’। অর্থাৎ সাবধানে বোলিং কর। ও প্রথম বল থেকেই চালাবে। হলও ঠিক তাই। প্রথম কয়েকটি বল সামলে নিয়ে যে ভাবে ক্রিজ়ে তাণ্ডব শুরু করলেন জানসেন, তাতে বোঝাই যাচ্ছিল না তিনি এই দলের বিশেষজ্ঞ বোলার। ক্রিকেটীয় শটে একের পর এক বল মাঠের বাইরে পাঠাচ্ছিলেন। সাত ফুটের উপর লম্বা হওয়ায় এমনিতেই তাঁর বাড়তি সুবিধা রয়েছে। সেটাকেই কাজে লাগাচ্ছিলেন তিনি। গুয়াহাটি টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৯৩ রান করে ভারতের হাত থেকে ম্যাচ কেড়ে নিয়েছিলেন জানসেন। পরে বল হাতেও নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। রাঁচীতে সেই দৃশ্যই আর একটু হলে ফিরতে বসেছিল। হল না সেই কুলদীপের জন্যই। টানা পেসারদের দিয়ে বল করানোর পর আচমকাই কুলদীপকে নিয়ে এসেছিলেন রাহুল। সেটাই কাজে লাগল। প্রথম বলেই চালিয়ে খেলতে গিয়ে আউট হলেন জানসেন (৭০)। দু’বল পরেই ফিরে যান ম্যাথু ব্রিৎজ়কে (৭২)। ওখানেই দক্ষিণ আফ্রিকার সব আশা শেষ হয়ে যায়।

চিন্তা দুই জায়গায়

বিশ্বকাপ এখনও অনেক দূরে ঠিকই। কিন্তু ভারতকে ভাবতে হবে মিডল অর্ডার নিয়ে। শুভমন গিল ফিরলে এবং পন্থকে খেলানো হলে চিন্তা অনেকটাই কমবে। তবে ওয়াশিংটনকে পাঁচে নামানোর মতো ফাটকা না খেলানোই ভাল। বরং ওই জায়গায় তৈরি করা উচিত রুতুরাজকে। তাঁকে আরও সময় দেওয়া উচিত। একটি সিরিজ়‌ দেখে ছাঁটাই করে দিলে চলবে না। পাশাপাশি, মাঝের দিকে উইকেট তোলার পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। না হলে বিশ্বকাপের আগে চিন্তা থেকেই যাবে। যে দল ১১ রানে ৩ উইকেট হারায়, তারা কী করে ৩০০ রান তুলে ফেলে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। তৃতীয় উইকেট পড়ার পর থেকে প্রতিটি উইকেটেই জুটি গড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তা ভাঙতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। করবিন বশ, বার্গারের মতো বোলারেরা ব্যাট হাতে ভারতীয়দের চাপে ফেলে দিলেন। এই সমস্যার সমাধান দ্রুত খুঁজতে হবে ভারতকে।

India vs South Africa 2025 Rohit Sharma Virat Kohli Harshit Rana Kuldeed Yadav Gautam Gambhir
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy