Advertisement
E-Paper

লেটার মার্কস-সহ দ্বিতীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কোহলি, পাশ করলেন রোহিতও, ২০২৭ বিশ্বকাপের দিকে আরও এক পা অগ্রসর রো-কো

রবিবার প্রথম ম্যাচেই নিজেদের প্রমাণ করে দিয়েছেন রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি। প্রথম জন অর্ধশতরান, দ্বিতীয় জন শতরান করেছেন। এর পরেও তাঁদের বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:২৬
cricket

বিরাট কোহলিকে কুর্নিশ রোহিত শর্মার। ছবি: পিটিআই।

এর পরেও কি তাঁদের নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে?

টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়ে নির্বাচকদের চিন্তা এমনিতেই কমিয়ে দিয়েছেন। সাকুল্যে যে একটি ফরম্যাটে খেলছেন, সেখানেও তাঁদের নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে অনবরত। আশা করা যায়, রবিবারের পর থেকে তা কমবে। এই কারণেই ‘কমবে’ বলা হল, কারণ পুরোপুরি হয়তো বন্ধ হবে না। ভারতীয় কোচ এবং নির্বাচকদের উপর অন্তত সেই ভরসাটুকু করা যাচ্ছে না।

দীর্ঘ দিন পর দেশের মাটিতে এক দিনের ম্যাচ। সেই পরীক্ষায় লেটার মার্কস নিয়ে পাশ করলেন বিরাট কোহলি। ১২০ বলে ১৩৫ রান করলেন ১১টি চার এবং ৭টি ছয়ের সাহায্যে একটু কম নম্বর পেলেও সসম্মানে উত্তীর্ণ রোহিত শর্মা। তিনি ৫১ বলে ৫৭ রান করলেন। মারলেন ৫টি চার এবং ৩টি ছয়।

২৮০ দিন পর কোহলির শতরান প্রমাণ করে দিল তিনি ফুরিয়ে যাননি। সাফল্যের খিদে এখনও প্রবল ভাবে বেঁচে। তিনি আবেগপ্রবণ বটে। তবে রাঁচীতে শতরানের পর ওই লাফ বুঝিয়ে দিল, কত কিছু প্রমাণ করার ছিল তাঁর। ক্ষণিকের আবেগের পরই তিনি শান্ত। ধীরে ধীরে ব্যাট, হেলমেট, গ্লাভস খুলে মাটিতে রেখে বিয়ের হারে চুমু খেলেন। আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলতেও দেখা গেল। দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শেষ বার শতরান করেছিলেন। এই ফরম্যাটে এখনও তাঁর বিকল্প তৈরি হয়নি। সিডনিতে শেষ ম্যাচে দল না জিতলে সেখানেও শতরান করে ফেলতেন।

রোহিতই বা কম যান কিসে! শেষ বার সিডনিতে ম্যাচ জেতানো শতরান করেছিলেন। এ বার দেশের মাটিতে ওপেন করতে নেমে সেখান থেকেই শুরু করলেন। আগ্রাসী ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে শুরু থেকেই চাপে ফেলে দিলেন। যশস্বী জয়সওয়াল ফিরে যাওয়ার পর যোগ দিলেন কোহলি। দু’জনের জুটি ফিরিয়ে দিল সেই পুরনো দিন, যখন রোহিত এবং কোহলি মাঠে নামলেই একটা আলোড়ন তৈরি হত। এখন তাঁদের দেখার জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে হয়। তাই কেরিয়ারের শেষ বেলায় দুই ক্রিকেটারের ইনিংস হয়তো এটাও বোঝাল, ভাল জিনিস কমই ভাল।

তবে প্রশ্নটা এখন রোহিত, কোহলির ফর্ম নিয়ে নয়। গুরু গৌতম গম্ভীর এবং নির্বাচক অজিত আগরকরকে নিয়ে। প্রথম ম্যাচের আগেই শোনা যাচ্ছিল, সিরিজ় শেষে দু’জনের ভবিষ্যৎ নিয়ে ‘বৈঠক’ করা হবে। রবিবারের ইনিংস প্রমাণ করে দিল, এই বৈঠক না হলেও চলে। গোটা সিরিজ়ে আর কিছু না করলেও দুই ক্রিকেটারের বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কথা নয়। অভিজ্ঞতার একটা দাম তো রয়েছে। গম্ভীর, আগরকরেরা যদি সেটাও পাত্তা না দিতে চান, তা হলে আদৌ ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নতির কথা তাঁরা ভাবছেন কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। উন্নতি মানেই অভিজ্ঞতার বর্জন এবং তারুণ্যের আগমন নয়। উন্নতি মানে মিলিয়ে মিশিয়ে সকলকে নিয়ে চলতে শেখা।

টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিলেন রোহিত, কোহলি। তার আগে থেকেই একটা জল্পনা শুরু হয়েছিল যে, অস্ট্রেলিয়া সফরের পরেই হয়তো এক দিনের ক্রিকেট থেকেও সরে যাবেন তাঁরা। পার্‌থে বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম ম্যাচে দু’জনেই ব্যর্থ হন। রোহিত ৮ রান করলেও কোহলি ০ রানে ফিরে যান। তাতে সেই সম্ভাবনা আরও জোরদার হয়। রোহিত দ্বিতীয় ম্যাচে অর্ধশতরান (৭৩) করলেও কোহলি আবার শূন্য রানে আউট হন। তবে সিডনিতে তৃতীয় ম্যাচ সব হিসাব বদলে দেয়। রোহিত ১২১ রান করেন, কোহলি ৭৪ রান করেন। দু’জনে মিলে বহু দিন বাদে জুটি বেঁধে দলকে জেতান। ধামাচাপা পড়ে ৫০ ওভারের ফরম্যাট থেকে অবসরের প্রসঙ্গও। সিরিজ়ে সবচেয়ে বেশি রান করে রোহিত বুঝিয়ে দেন, তাঁকে বাদ দেওয়া অত সহজ নয়।

সেই ম্যাচের পর দুই তারকাই ঠারেঠারে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, এক দিনের ফরম্যাটে খেলা চালিয়ে যেতে চান। ম্যাচের পর অবসরের প্রশ্নে কিছুই বলেননি রোহিত। কোহলি স্রেফ ধন্যবাদ বলেন। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আবার রোহিতকে একই প্রশ্ন করেন সঞ্চালক অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। তখনও রোহিত এড়িয়ে যান। অর্থাৎ সরাসরি দুই ক্রিকেটারই এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি। তবে এটুকু বোঝা গিয়েছিল, এখনই কেউ সরছেন না।

অস্ট্রেলিয়া সফরে সফল হওয়ার জন্য রোহিত কী ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন, তা তুলে ধরেন বোর্ডের ভিডিয়োয়। রোহিত বলেছিলেন, “খেলা শুরু করার পর থেকে কখনও কোনও সিরি‌জ়ের প্রস্তুতির জন্য চার-পাঁচ মাস সময় পাইনি। এ বার সেটা পেয়ে পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম। নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিতে চেয়েছিলাম। পুরোপুরি নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী। সেটা খুব ভালই কাজে লেগেছে। বাকি ক্রিকেটজীবনে কী পড়ে আছে, সেটা বোঝার জন্য এই সময়টা পাওয়া খুবই দরকার ছিল। কারণ, আগে কখনও এতটা সময় হাতে পাইনি।” কোহলি অবশ্য বিশেষ কিছু বলেননি।

দুই তারকা মাঠে নামলেই সব সময় সকলের নজরে থাকেন। স্বাভাবিক ভাবেই পারফরম্যান্স নিয়ে কাটাছেঁড়া হয়ই। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ়ের ক’দিন আগেও বোর্ডের এক কর্তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে না খেললে এমনি এমনি এক দিনের দলে সুযোগ দেওয়া হবে না রোহিত, কোহলিকে। দু’জনের কেউই তার পরেও ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেননি। তবু দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ়ে নিতে হয়েছে। তার একটাই কারণ, দু’জনের বিকল্প তৈরি হয়নি এখনও। টেস্টে দু’জনের অবসরের পর দলের হাল কী হয়েছে, তা সকলের চোখের সামনেই স্পষ্ট।

গুয়াহাটি টেস্টে হারের পর নাম না করে রোহিত, কোহলি এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন না থাকার ব্যাপারে আক্ষেপ করেছিলেন গম্ভীর। তিনি বলেছিলেন, “এত বেশি অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে একসঙ্গে হারালে সেটার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কঠিন। এই জন্যই এটাকে রূপান্তর বলছি। এই ক্রিকেটারদের সময় দেওয়া দরকার। আমার মনে হয় না আগে কখনও একই সঙ্গে ব্যাটিং এবং বোলিং দুই বিভাগেই রূপান্তর হয়েছে বলে। আগে ব্যাটিং বিভাগ ভাল থাকত। বোলিং বিভাগে রূপান্তর হত। অথবা উল্টোটা। এই দলে পুরোটাই নতুন করে তৈরি হচ্ছে। সকলের এটা বোঝা উচিত, এই দলে যারা বসে আছে তাদের সেই যোগ্যতা এবং দক্ষতা রয়েছে। আমরা সকলেই টেস্ট ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা দেখতে চাই। সেটার জন্য অভিজ্ঞতা দরকার। এর পর যখন ওরা কঠিন পরিবেশে গিয়ে খেলবে, ঠিক কাজের কাজ করে দেবে।”

এমনকি, রাঁচী ম্যাচের আগে দুই ক্রিকেটারের কথা উঠে এসেছে ভারতের অধিনায়ক কেএল রাহুলের মুখেও। তিনি বলেছেন, “রোহিত ও কোহলির গুরুত্ব আমাদের দলে খুব বেশি। ওদের মতো সিনিয়র ক্রিকেটার সাজঘরে থাকলে সকলের আত্মবিশ্বাস অনেকটা বেড়ে যায়। ওদের অভিজ্ঞতা দলের সকলকে অনেক সাহায্য করে। তাই ওদের পেয়ে আমি খুব খুশি।”

তবু বোর্ড তাঁদের নিশ্চিন্ত থাকতে দিতে রাজি নয়। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ় শেষ হলেই দু’জনকে নিয়ে বসা হবে বৈঠকে। জানতে চাওয়া হবে ভবিষ্যৎ। এখন থেকেই আগামী বছরের পরিকল্পনা করে নিতে চান বিসিসিআই কর্তারা। এক দিনের সিরিজ় শেষ হওয়ার পর কোচ গৌতম গম্ভীর এবং প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকরের সঙ্গে অহমদাবাদে বৈঠকে বসবেন কর্তারা। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই বৈঠকেই চূড়ান্ত হয়ে যেতে পারে দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের ভবিষ্যৎ।

কোহলি এবং রোহিত ২০২৭ সালের এক দিনের বিশ্বকাপ খেলতে চান। তাঁদের খেলা নির্ভর করবে পারফরম্যান্সের উপর। বিসিসিআই সূত্রে খবর, তৃতীয় এক দিনের ম্যাচের পর আগামী এক দিনের বিশ্বকাপের প্রস্তুতি পর্ব নিয়ে বোর্ড কর্তারা আলোচনায় বসবেন কোচ এবং প্রধান নির্বাচকের সঙ্গে। বোর্ডের এক কর্তা বলেছেন, ‘‘কোহলি এবং রোহিতের মতো খেলোয়াড়ের থেকে আমরা কী চাই, এটা পরিষ্কার করে দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। টিম ম্যানেজমেন্ট ওদের কোন ভূমিকায় দেখতে চায়, সেটাও জানা প্রয়োজন। কারণ ওদের মতো খেলোয়াড় অনিশ্চয়তা নিয়ে খেলা চালিয়ে যেতে পারে না।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমরা ওদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও জল্পনা চাই না। ফিটনেস এবং পারফরম্যান্সের দিকেই শুধু নজর থাকবে।’’

ফিটনেসের দিকে নজর থাকা অবশ্যই দরকার। যে হেতু দু’জনেই স্রেফ একটি ফরম্যাটে খেলেন। তবে রোহিত, কোহলি এমন ক্রিকেটার নন যে ফাঁকা সময়ে অনিয়ম করে কিলো কিলো ওজন বাড়িয়ে ফেলবেন। কিন্তু পারফরম্যান্সের দিকে নজর? রবিবারের পরেও? রোহিত, কোহলি ব্যাটে জবাব দিয়ে ফেলেছেন। বল এখন কোচ, নির্বাচকদের কোর্টে।

Virat Kohli Rohit Sharma India vs South Africa 2025
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy