ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের জন্য এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ করা হয়েছে আইপিএল। ক্রিকেটার, কোচ এবং সংশ্লিষ্ট সকলের নিরাপত্তার কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। জানানো হয়েছে, বাকি থাকা ১৬টি ম্যাচের সূচি সময় মতো ঘোষণা করা হবে।
শুক্রবার, ৯ মে থেকে স্থগিত করা হয়েছে প্রতিযোগিতা। বিসিসিআইয়ের ঘোষণা অনুযায়ী ১৫ মে পর্যন্ত কোনও খেলা হবে না। এই সময়সীমা বৃদ্ধি করতে না হলে ১৬ মে থেকে আবার শুরু হতে পারে আইপিএল। সূচি অনুযায়ী ফাইনাল হওয়ার কথা ২৫ মে। সে ক্ষেত্রে ১০ দিনে আয়োজন করতে হবে ১৬টি ম্যাচ। তার মধ্যে থাকবে প্লে-অফ পর্বের তিনটি ম্যাচ এবং ফাইনাল। লিগ পর্যায়ের আছে ১২টি ম্যাচ। প্লে-অফের ম্যাচগুলি এবং ফাইনালের আগে এক দিন করে বিশ্রামের জন্য রাখা হলেও খরচ হয়ে যাবে ছ’দিন। হাতে থাকবে চার দিন। বিশ্রামের সুযোগ না দেওয়া হলে হাতে থাকবে সাত দিন। এই ক’দিনে ১২টি ম্যাচ আয়োজন করতে হবে। প্রায় প্রতি দিন দু’টি করে ম্যাচ আয়োজন করে হবে। ক্রিকেটারেরা পাবেন না ‘রিকভারি টাইম’। বিশ্রাম ছাড়া প্রায় প্রতি দিন ম্যাচ খেলার ধকল নেওয়া কঠিন ক্রিকেটারদের পক্ষে। এ ভাবে প্রতিযোগিতা শেষ করতে চাইলে আপত্তি জানাতে পারে সম্প্রচারকারী সংস্থাও।
সাত দিন পর আবার প্রতিযোগিতা শুরু করে সুষ্ঠু ভাবে আইপিএল শেষ করতে হলে প্রয়োজন অন্তত ১৫ দিন সময়। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের একাংশ তেমনই মনে করেন। সে ক্ষেত্রে ১৬ মে থেকে প্রতিযোগিতা শুরু হলে তা চলবে ৩০ মে পর্যন্ত। সেই পর্যন্ত প্রতিযোগিতা টেনে নিয়ে যাওয়ার বেশ কয়েকটি সমস্যা রয়েছে। সব চেয়ে বড় সমস্যা আন্তর্জাতিক সূচি। যা পরিববর্তন সম্ভব নয়।
প্রথমত, মে মাসের শেষ সপ্তাহে ভারতের ‘এ’ দলের ইংল্যান্ড সফরে চলে যাওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে প্লে-অফের চারটি দল সমস্যায় পড়বে। দলগুলির কর্তৃপক্ষ অর্ধেক শক্তি নিয়ে আইপিএলের চূড়ান্ত পর্বে খেলার ব্যাপারে আপত্তি জানাতে পারে। দ্বিতীয়ত, ২০ জুন থেকে শুরু হবে ভারত-ইংল্যান্ড পাঁচ টেস্টের সিরিজ়। জুনের প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় দলের ইংল্যান্ড চলে যাওয়ার কথা। লম্বা সিরিজ় শুরুর আগে ইংল্যান্ডের আবহাওয়া এবং পিচের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য কম পক্ষে ১০ দিন চেয়েছেন কোচ গৌতম গম্ভীর। পর পর দু’টি টেস্ট সিরিজ়ে ভারতীয় দল ধরাশায়ী হওয়ার পর বোর্ড কর্তারাও ঝুঁকি নিতে চান না। মে মাসের শেষ পর্যন্ত আইপিএল চললে ভারতীয় দলের ক্রিকেটারেরা বিশ্রামের পর্যাপ্ত সময় পাবেন না। আইপিএলের মতো দীর্ঘ এবং ধকলের প্রতিযোগিতার পর যা অত্যন্ত জরুরি।
তৃতীয়ত, ১১ জুন থেকে শুরু হবে টেস্ট বিশ্বকাপের ফাইনাল। স্বভাবতই অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ড মে মাসের শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটারদের ভারতে রেখে দিতে রাজি হবে না। ফলে এই দু’দেশের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের পাবে না দলগুলি।
চতুর্থত, ২২ মে থেকে শুরু হবে ইংল্যান্ড-জ়িম্বাবোয়ে টেস্ট। ২৯ মে থেকে শুরু হবে ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ় এক দিনের সিরিজ়। ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডও তাদের ক্রিকেটারদের আইপিএলের জন্য অতিরিক্ত দিন ছাড়তে আপত্তি জানাতে পারে।
পঞ্চমত, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি ক্রিকেটার, কোচ এবং সাপোর্ট স্টাফেরা ভারতে আসার ক্ষেত্রে অসম্মত হতে পারেন। তা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে দলগুলি। নিরাপত্তার প্রশ্নে তাঁদের বাধ্য করতেও পারবে না বিসিসিআই।
আরও পড়ুন:
এই পরিস্থিতিতে আইপিএলের বাকি অংশ শেষ করার জন্য আন্তর্জাতিক সূচির ফাঁক খুঁজে বের করতে হবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে। অগস্টের শেষে ভারত-বাংলাদেশ সাদা বলের সিরিজ় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সিরিজ় এখনও চূড়ান্ত নয়। তার পর সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপ হওয়ার কথা ভারতে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যা বিশবাঁও জলে বলে মনে করা হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতার জন্য আন্তর্জাতিক সূচিতে ১৯ দিন সময় রয়েছে। সূত্রের খবর, আইপিএলের বাকি ১৬টি ম্যাচের জন্য বিসিসিআই কর্তাদের নজর অগস্ট-সেপ্টেম্বরে।