বুমরা-আতঙ্ক এখনও কাটেনি জো রুটের। বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্য়ান টেস্ট শুরু হওয়ার আগেই সতর্ক। ২০ জুন থেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা পেসারকে সামলাতে হবে যে! যাঁর বিরুদ্ধে খুব একটা সফল নন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়কজো রুট।
টেস্টে ৯ বার রুটকে আউট করেছেন বুমরা। শুক্রবার থেকে হেডিংলেতে ফের বুমরার গতি ও সুইং সামলাতে হবে তাঁকে। রুট মেনে নিচ্ছেন, কাজটি সহজ নয়। শুধুমাত্র বুমরাই নন, রুটকে খেলতে হবে মহম্মদ সিরাজ, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, কুলদীপ যাদব, রবীন্দ্র জাডেজাদের বিরুদ্ধে। ভারতের সম্মীলিত বোলিং আক্রমণ নিয়েই চিন্তিত তিনি।
শুক্রবার সোনি স্পোর্টস নেটওয়ার্ক আয়োজিত ভার্চুয়াল মিডিয়া সেশনে রুট বলছিলেন, ‘‘বুমরাকে ব্যাখ্যা করার ভাষা নেই। আমাদের বিরুদ্ধে যে ক’টি ম্যাচ খেলেছে, অবদান রেখেছে। ও বরাবরই বড় আতঙ্ক।’’ যোগ করেন, ‘‘ওর বিরুদ্ধে আমাদেরও লড়াই করতে হবে। বেশ কিছু ম্যাচে আমরা বুমরাকে ভাল সামলেছি। রান করেছি। সব সময়ই ব্যর্থ হয়েছিসেটা নয়।’’
রুট মনে করেন, শুধুমাত্র বুমরাকে নিয়ে চিন্তা করতে থাকলে বাকিরা উইকেট তুলে নিতে পারেন। প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়কের কথায়, ‘‘এক জন বোলারকে নিয়ে ভাবলে তো হবে না। ভারতীয় বোলিং বিভাগের প্রত্যেকে দুরন্ত ছন্দে। পেস বিভাগ শক্তিশালী। স্পিনাররাও উইকেট তুলতে পারে। ওদের বোলিং বিভাগের প্রত্যেকের কথা মাথায় রেখেই আমাদের তৈরি হতে হবে।’’
রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলিকে ছাড়া এ বার ইংল্যান্ড সিরিজ়ে নামবে ভারত। বিপক্ষের উইকেট পড়লে ছুটে এসে বোলারের চেয়েও বেশি উৎসব করতে দেখা যাবে না কোনও ক্রিকেটারকে। নিখুঁত পুল শটে ছক্কা হাঁকাতেও দেখা যাবে না রোহিতকে। রুট মনে করেন, এই দুই ক্রিকেটারের অভাব অনুভব করবেন তাঁরাও। কিন্তু তাঁদের অবসরের পরে ভারত-ইংল্যান্ডের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনও অভাব হবে বলেও মনে করেন না। রুট বলছিলেন, ‘‘ওদের অভাব অনুভব করবে টেস্ট ক্রিকেটও। ভারতীয় দলের মেরুদণ্ড ছিল ওরা দু’জন। কিন্তু বিরাট-রোহিত না থাকায় লড়াকু মনোভাবের কোনও অভাব দেখা যাবে না।’’ যোগ করেন, ‘‘তরুণ প্রজন্ম নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পাবে। তা ছাড়া শুভমন নিজে তারকা। ভারতকে নেতৃত্ব দেবে। মনে হয়, এ বারের সিরিজ় আরও উপভোগ্য হবে সকলের কাছে।’’
ক্রিকেটবিশ্বে ‘ফ্যাব ফোর’-এর অন্যতম দুই সদস্য রুট ও বিরাট। এক জন টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। রুট এখনও লড়াই করে চলেছেন। টেস্টে ১৩০০৬ রান রয়েছে তাঁর। ২৮০ রান করলে তিনি টপকে যাবেন রাহুল দ্রাবিড়কে। ৩৭৩ রান করলে উঠে আসবেন সর্বকালের সর্বোচ্চ স্কোরারের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে। ছাপিয়ে যাবেন রিকি পন্টিংকে। রুট যদিও নিজের রেকর্ড নিয়ে ভাবছেন না। বলছিলেন, ‘‘নিজের জন্য আমি মাপকাঠি তৈরি করি না। কারণ, লক্ষ্য পূরণ করতে না পারলে হতাশা গ্রাস করে। সব কিছুই সহজ ভাবে দেখার চেষ্টা করি। ভাল ব্যাট করে দলকে জেতাতে চাই। নিজের রেকর্ড দিয়ে কী করব? দলকে জেতাতেপারব কী?’’
শেষ বার ভারতের মাটিতে মাত্র একটি টেস্ট জিতেছিল ইংল্যান্ড। হায়দরাবাদে প্রথম ম্যাচে। তার পর থেকে যশপ্রীত বুমরা ও আর. অশ্বিনের বোলিংয়ের সামনে ব্যর্থ হয়েছিল ‘বাজ়বল’। এ বার কোহলি নেই। তাঁর না থাকায় কি সুবিধা হল রুটের? প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়কের উত্তর, ‘‘বিরাটের সঙ্গে আমার কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। ওকে আমি প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখি না। ওর ব্যাটিং উপভোগ করতাম। ওর থেকে অনেক কিছু শিখেছি। যে কোনও দলের থেকে সেরাটা বার করে আনার ক্ষমতা আছে ওর মধ্যে। তবে মাঠের মধ্যে বিরাটেরর অভাব অনুভব করব। ও মাঠে থাকা মানে মানসিক ভাবে একটি দল এগিয়ে থাকা।’’
নাগপুরে ভারতের বিরুদ্ধে যাত্রা শুরু হয়েছিল রুটের। সচিন তেন্ডুলকরের দেশের বিরুদ্ধে বরাবরই সফল। টেস্টে ৩৬টি শতরানের মধ্যে ১০টি ভারতের সঙ্গে। ইংল্যান্ডের মাটিতে রুটের ‘জাদুকাঠি’ কি আবার বিস্ময় তৈরি করবে? নাকি শেষ হাসি হাসবেন তাঁর সারা জীবনের আতঙ্ক যশপ্রীত বুমরা? উত্তর পাওয়া যাবে শুক্রবার থেকে।
ইংল্যান্ড বনাম ভারত টেস্ট সিরিজ়: ২০ জুন দুপুর ৩.৩০ থেকে সরাসরি সোনি টেন ১ ও টেন৫ চ্যানেলে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)