কলকাতা নাইট রাইডার্স শিবিরে এখন একটাই মন্ত্র। ‘রইল বাকি তিন’।
টানা পাঁচ ম্যাচ জেতার লড়াইয়ে নেমেছিলেন অজিঙ্ক রাহানেরা। দিল্লি ক্যাপিটালস ও রাজস্থান রয়্যালসকে হারিয়ে জয়ের ছন্দ খুঁজে পেয়েছে কেকেআর। বুধবার ইডেনে নাইটরা নামছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে।
বুধবার অধিকাংশ গ্যালারিই যে হলুদ পতাকায় ঢাকা থাকবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই নাইট ক্রিকেটারদের মধ্যে। কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত সাংবাদিক বৈঠকে এসে স্বীকারও করে নেন, বিপক্ষ শিবিরের জন্যই সমর্থন বেশি থাকবে। কারণ, সে দলে ৪৩ বছরের এক চিরতরুণ আছেন। দু’টি বিশ্বকাপ জেতার পরেও আনক্যাপ্ড ক্রিকেটারের কোটায় চেন্নাই দলের হয়ে খেলছেন। ব্যক্তির নাম, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। দু’দিন ধরে কলকাতায় আছেন। কিন্তু ইডেনমুখী হননি। তিনি মাঠে না আসায় চেন্নাই শিবিরের দিকে খুব একটা নজর ছিল না কারও। ঘরের মাঠে কেকেআরের ক্রিকেটারেরাই বেশি সমর্থন পাচ্ছিলেন অনুশীলনের দিন। কিন্তু ম্যাচের দিন যে ছবিটা বদলে যাবে, তা যে কেউ বলে দিতে পারেন।
কেকেআর কোনও দুর্বলতা নিয়ে এই ম্যাচে নামতে চাইছে না। পিচ প্রস্তুতকারকের অনুমান, স্পিনাররা কিছুটা সাহায্য পাবেন আজ। ফলে বিপক্ষের সর্বোচ্চ উইকেট-শিকারি নুর আহমেদ কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারেন নাইটদের। ১১ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়ে বেগুনি টুপির দৌড়ে রয়েছেন আফগান স্পিনার। বাঁ-হাতি চায়নাম্যান বোলারের গুগলি সামলানোর পরীক্ষা দিতে হবে সুনীল নারাইনদের। ফলে এক স্থানীয় চায়নাম্যান বোলারকে ডেকে নেওয়া হয় নাইটদের নেটে। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাট করেন নারাইন, অঙ্গকৃশ রঘুবংশী ও মইন আলি। সেই চায়নাম্যান বোলারের বিরুদ্ধে নারাইনকে বেশ সমস্যায় পড়তে দেখা যায়। কিন্তু কয়েকটি বল খেলে নেওয়ার পরে বড় শট মারতে থাকেন।
আকর্ষণ: ‘সাহসী রানি’ প্রকল্পের জার্সি পরে নারাইন। —নিজস্ব চিত্র।
নুর যদিও এই স্থানীয় স্পিনারের চেয়ে অনেক বড় মাপের বোলার। গতির সঙ্গে বল ঘোরাতে পারেন। কোন বল যে গুগলি হবে আর কোনটি যে লেগস্পিন, বোঝা কঠিন। চেন্নাইয়ের বোলিং বিভাগে নুর ও মাথিশা পাথিরানার বল সামলে দিতে পারলে নাইটদের সমস্যায় ফেলার আর কেউ নেই।
আইপিএল ইতিহাসে সিএসকের বিরুদ্ধে ২৯টি ম্যাচ খেলেছে কেকেআর। কেকেআর জিতেছে মাত্র ১০টি। যদিও এ বারের সিএসকের সঙ্গে অন্য মরসুমের দলের পার্থক্য আছে। এ বারের আইপিএলের ‘লাস্ট বয়’ চেন্নাই। তবুও তাদের হাল্কা ভাবে নিচ্ছে না কেকেআর। কোচ বলছিলেন, ‘‘প্রতিপক্ষ কে, তা নিয়ে ভাবছি না। জয়ের ছন্দ ধরে রাখতে হবে। অতীতে কী হয়েছে ভাবতে চাই না। প্রতি ম্যাচ ধরে এগোতে চাই। এই ছন্দটা ধরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’
আন্দ্রে রাসেলকে শেষ ম্যাচে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করানো হয়েছে। কোচ ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন, চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধেও সেই প্রথাই অবলম্বন করা হতে পারে। কোচের কথায়, ‘‘পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করি। শেষ ম্যাচে রাসেলকে উপরে নামানোর দরকার ছিল। পরের ম্যাচেও যদি রাসেলকে উপরের দিকে প্রয়োজন হয়, তা হলে নামাব।’’
রিঙ্কু সিংহ শেষ ম্যাচে কুঁচকিতে চোট পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর চোট যে গুরুতর নয়, জানিয়ে দিলেন কোচ। বলছিলেন, ‘‘রিঙ্কুর সে রকম সমস্যা হয়নি। ম্যাচের দিন একটু খুঁড়য়ে হাঁটছিল। এ রকম হতেই পারে। ও সম্পূর্ণ ফিট। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে খেলতে সমস্যা হবে না।’’ রিঙ্কু ফিট থাকলেও বেঙ্কটেশ আয়ারের বাঁ-হাতে সামান্য চোট আছে। শেষ দু’দিন তিনি ব্যাট করেননি। বেঙ্কটেশ রানের মধ্যেও নেই। এ বার চোটের দোহাই দিয়ে তাঁকে প্রথম একাদশ থেকে বাদ দেওয়া হয় কি না সেটাই দেখার।
মইন আলি ও অনরিখ নখিয়ার মধ্যে কাকে খেলানো হবে, তা নিয়েও দ্বন্দ্ব রয়েছে নাইট শিবিরে। মঙ্গলবার দু’জনকেই বাড়তি অনুশীলন করানো হয়। শেষ ম্যাচে রিয়ান পরাগ পরপর পাঁচটি ছক্কা মেরেছেন মইনকে। তা দেখে কি মইনকে বাদ দেওয়া হবে? সিএসকে শিবিরে একাধিক বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। রবীন্দ্র জাডেজা, শিবম দুবে, স্যাম কারেনরা উপরের দিকেই ব্যাট করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কার্যকরী হয়ে উঠতে পারেন মইন। ব্যাট হাতেও বড় শট খেলার ক্ষমতা আছে তাঁর। ফলে নখিয়ার সঙ্গে দৌড়ে মইন কিছুটা এগিয়েই থাকবেন।
বুধবারের ইডেন অপেক্ষায় থাকবে নাইট-জয়ের। তবে ধোনির ব্যাটেও ঝড় দেখতে চাইবেন চেন্নাই সমর্থকেরা। কোচও জানেন, বিপক্ষ দলের জন্য সমর্থন বেশি থাকবে। বলছিলেন, ‘‘ক্রিকেটে কোনও একটি দল বেশি সমর্থন পাবে সেটাই স্বাভাবিক। সে সব নিয়ে ভাবলে চলবে না। ঘরের মাঠে টানা তৃতীয় জয় চাই। পেলে প্লে-অফের পথ অনেকটা মসৃণ হবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)