গত বার ইঙ্গিত মিলেছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির অবসরের। যে যে মাঠে তিনি খেলেছিলেন, সেখানে ধোনির জার্সি বিলি করেছিল চেন্নাই সুপার কিংস। ইডেন গার্ডেন্সও হলুদ জার্সিধারীদের কব্জায় চলে গিয়েছিল। কিন্তু ধোনি অবসর নেননি। এ বারও খেলছেন তিনি। মরসুমের মাঝে চেন্নাইয়ের অধিনায়কও হয়েছেন। কিন্তু চেন্নাই প্লে-অফ থেকে বিদায় নিয়েছে। বাকি ম্যাচ সম্মানরক্ষার। এই আবহেই বুধবার ইডেন গার্ডেন্সে মুখোমুখি কলকাতা নাইট রাইডার্স ও চেন্নাই সুপার কিংস। এ বারই কি শেষ বার আইপিএল খেলছেন ধোনি? তেমনটা হলে বুধবারই শেষ বার তাঁকে খেলতে দেখবে কলকাতা। ফলে এ বারও ইডেন ধোনিময় হয়ে ওঠার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে।
আইপিএলে প্রতিটি দলের নির্দিষ্ট ঘরের মাঠ থাকে। ব্যতিক্রম শুধুমাত্র ধোনি। যে যে মাঠে তিনি খেলেন সেটাই হয়ে ওঠে তাঁর ঘরের মাঠ। কারণ, প্রতিপক্ষের থেকে বেশি সমর্থন পান তিনি। ইডেনও তার ব্যতিক্রম নয়। এ বার ইডেনে কেকেআরের সব ম্যাচে দেখা গিয়েছে ধোনির জার্সি। আসলে কিছু ধোনিভক্ত যে ম্যাচই দেখতে যান না কেন, তাঁরা ধোনির জার্সি পরেই যান। ফলে বুধবার সেই সংখ্যা যে অনেক বাড়বে তা নিশ্চিত।
কলকাতার সঙ্গে ধোনির যোগ বহু দিনের। রাঁচীর ছেলে জাতীয় দলে ঢোকার আগে ইডেনে অনেক ম্যাচ খেলেছেন। শ্যামবাজার ক্লাবের হয়ে পি সেন ট্রফিও খেলেছেন তিনি। ধোনির প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের প্রথম শতরান ইডেনে। টেস্টে তাঁর ছ’টি শতরানের দু’টি ইডেনে। এই শহরে খেলতে এসেই স্ত্রী সাক্ষীর সঙ্গে পরিচয় ধোনির। তাঁর শ্বশুরবাড়িও এই শহরেই। তাই বুধবার যখন ৪৩ বছরের সাত নম্বর জার্সিধারী ইডেনে নামবেন তখন কানপাতা দায় হবে। টস করার সময় নিজের গলার আওয়াজ অজিঙ্ক রাহানে শুনতে পাবেন তো?
ইডেনে কলকাতার বিরুদ্ধে চেন্নাইয়ের রেকর্ডও ভাল। দু’দল আইপিএলে এই মাঠে ১০ বার মুখোমুখি হয়েছে। চেন্নাই জিতেছে ছ’বার। কলকাতা চার বার। শেষ ২০২৩ সালে ইডেনে খেলেছিল দু’দল। সেই ম্যাচও জিতেছিল চেন্নাই। সে বারই শেষ বার আইপিএল চ্যাম্পিয়নও হয়েছিলেন ধোনিরা। নিজের প্রিয় মাঠে আরও এক বার জিততে চাইবেন মাহি।
আরও পড়ুন:
তবে এ বারের আইপিএলে দুই দলের ছবি আলাদা। ধোনিরা প্লে-অফের লড়াই থেকে বিদায় নিয়েছেন। পয়েন্ট তালিকায় সকলের নীচে রয়েছেন তাঁরা। আইপিএলের ১৭ বছরের ইতিহাসে কোনও বার শেষে শেষ করেনি চেন্নাই। এ বার সেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি বদলাতে হলে কলকাতার বিরুদ্ধে জিততেই হবে তাদের। নইলে সেই আশঙ্কা আরও বাড়বে। এ বার প্রথম পর্বের সাক্ষাতে চেন্নাইয়ের মাঠে কলকাতার বিরুদ্ধে লজ্জার হার হয়েছে ধোনিদের। ফলে রাহানেদের আত্মবিশ্বাস বেশি থাকবে।
কলকাতার প্লে-অফে ওঠার সুযোগ এখনও রয়েছে। শেষ দু’টি ম্যাচ জিতেছে তারা। গত রবিবার রাজস্থান রয়্যালসকে টান টান ম্যাচে ১ রানে হারিয়েছে কলকাতা। রাহানেদের প্লে-অফে উঠতে হলে বাকি তিনটি ম্যাচের সব ক’টিই জিততে হবে। একটি হারলেই স্বপ্ন প্রায় শেষ। অর্থাৎ, চেন্নাইয়ের সম্মানরক্ষার লড়াই হলেও কলকাতার লড়াই আইপিএলে টিকে থাকার।
রাজস্থানের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠের সমর্থন পেয়েছে কলকাতা। বুধবার সেই সমর্থন কমতে পারে। এমনকি কলকাতার জার্সির থেকে বেশি চেন্নাইয়ের জার্সি দেখা যেতে পারে ইডেনে। কলকাতার উইকেট পড়লে চিৎকার হতে পারে বেশি। হলুদ জার্সিধারীরা চার-ছক্কা মারলে নেচে উঠতে পারে ক্লাব হাউস। তাই ব্যাটে-বলের লড়াইয়ের বাইরেও একটা লড়াই লড়তে হবে রাহানেদের। সেই লড়াই ধোনির সমর্থনের বিরুদ্ধে। ইডেনকে আরও এক বার নিজেদের ঘরের মাঠ করে তোলার লড়াই লড়তে হবে কেকেআরের ক্রিকেটারদের। সেই লড়াই কিন্তু সহজ হবে না।