Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
USA Cricket

Cricket in America: ক্রিকেট বাড়ছে আমেরিকায়, রাজত্ব করছেন ভারতীয়রাই

আমেরিকার ক্রিকেটের প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে সে দেশে ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করতে চলেছে আইসিসি।

আমেরিকার জাতীয় ক্রিকেট দল।

আমেরিকার জাতীয় ক্রিকেট দল। ফাইল ছবি

অভীক রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ ১১:৫০
Share: Save:

আমেরিকার ক্রিকেটের প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে সে দেশে ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করতে চলেছে আইসিসি। এই প্রথম এত বড় মাপের কোনও প্রতিযোগিতা আয়োজন করছে আমেরিকা। এর আগে বিভিন্ন দেশ সেখানে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেছে সে দেশের সমর্থকদের ক্রিকেটমুখী করে তুলতে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতও। তারা ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দু’টি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছিল আমেরিকার মাটিতে।

দেখা যাচ্ছে, আমেরিকায় ক্রিকেটের প্রসারে সব থেকে বেশি এগিয়ে রয়েছে ভারতই। সে দেশের কোচ থেকে শুরু করে মুখ্য নির্বাচক, এমনকী দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটার হয় ভারতীয়, নয়তো ভারতীয় বংশোদ্ভূত। দেশ ছেড়ে সুদূরে পাড়ি দিয়ে অনেকেই নিজেদের ভবিষ্যৎ অন্য ভাবে তৈরি করেছেন।

আমেরিকার জাতীয় দলের নবনিযুক্ত অধিনায়ক মোনাঙ্ক পটেলই যেমন। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে সীমিত ওভারের সিরিজে তাঁকে অধিনায়ক করা হয়েছে। ২৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের জন্ম গুজরাতের আনন্দে। অল্প বয়সেই তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন আমেরিকায়। সেখানেই বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলে বড় হয়ে উঠেছেন। কালক্রমে সুযোগ পেয়েছেন আমেরিকার জাতীয় দলে। এ বার তিনিই দলকে নেতৃত্ব দেবেন।

নতুন নেতা মোনাঙ্ক পটেল।

নতুন নেতা মোনাঙ্ক পটেল।

মোনাঙ্ক যাঁর বদলে অধিনায়ক হলেন, সেই সৌরভ নেত্রভলকরও ভারতীয়। শুধু তাই নয়, চুটিয়ে ক্রিকেট খেলেছেন এ দেশে। ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলেছেন তিনি। মুম্বইয়ের হয়ে রঞ্জি ট্রফিতেও খেলেছেন ২০১৩-১৪ মরসুমে। এর পরেই আমেরিকা পাড়ি দেন। ২০১৮-তে প্রথম বার সুযোগ পান সে দেশের জাতীয় দলে। সেই শুরু। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধেও দলে রয়েছেন সৌরভ।

এ ছাড়াও, আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে দলে একাধিক ভারতীয় এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত ক্রিকেটার রয়েছেন। জসকরণ মলহোত্র যেমন। চণ্ডীগড়ে জন্ম তাঁর। ২০১৯ সালে আমেরিকার জাতীয় দলে প্রথম বার খেলার সুযোগ পান। তার পর থেকে সে দেশের হয়ে খেলেই চলেছেন। বিভিন্ন টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতাতেও ইদানীং দেখা যায় তাঁকে। সম্প্রতি ছ’বলে ছ’টি ছক্কা মেরে নজর কেড়েছেন তিনি।

রঞ্জি খেলেছেন সৌরভ নেত্রভলকর

রঞ্জি খেলেছেন সৌরভ নেত্রভলকর

মহারাষ্ট্রের জালনার সুশান্ত মোদানি রয়েছেন দলে। আমেরিকার হয়ে ইতিমধ্যেই পাঁচটি একদিনের ম্যাচ খেলে ফেলেছেন তিনি। অলরাউন্ডার হিসেবে খেলেন দলে। এ ছাড়া জস্‌সি সিংহ, গজানন্দ সিংহরা রয়েছেন দলে। আয়ারল্যান্ড সিরিজেই প্রথম বার জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন রাহুল জারিওয়ালা এবং বৎসল বাঘেলা, যাঁদের জন্ম আমেরিকায় হলেও পারিবারিক সূত্রে এঁরা ভারতীয়ই।

আমেরিকার জাতীয় দলে কিছুটা হলেও প্রাধান্য রয়েছে গুজরাতিদের। নবনিযুক্ত অধিনায়ক মোনাঙ্ক বা নিসর্গ তো রয়েছেনই, এ ছাড়াও আমেরিকার হয়ে খেলেন সাগর পটেল এবং তিমিল পটেল। এর মধ্যে সাগরের জন্ম আমেরিকাতে হলেও, তিমিল গুজরাতের আমদাবাদের ছেলে।

আমেরিকার এই দলের কোচ জে অরুণকুমার, যিনি এক সময় কর্ণাটকের হয়ে দাপিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন। কর্ণাটকের হয়ে শতাধিক প্রথম শ্রেণির ম্যাচে সাত হাজারের উপর রান রয়েছে অরুণকুমারের। আইপিএল-এর প্রথম সংস্করণে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়েও খেলতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। কর্ণাটকের রঞ্জি দলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ছিলেন কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের ব্যাটিং কোচও।

কোচ জে অরুণকুমার

কোচ জে অরুণকুমার

আমেরিকায় কোনও ভারতীয়ের যোগদানের সাম্প্রতিক উদাহরণ উন্মুক্ত চন্দ। দেশীয় ক্রিকেট ছেড়ে তিনি আমেরিকায় পাড়ি দিয়ে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছেন।

ক্রিকেট আমেরিকায় কোনও দিনই সে ভাবে পাত্তা পায়নি। তবে গত কয়েক বছর ধরেই তাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমেরিকা থেকে জুনিয়র ক্রিকেটার তুলে আনার উদ্দেশে সে দেশে চালু হয়েছে মাইনর ক্রিকেট লিগ। এ বছর থেকেই তা চালু হয়েছে এবং দেশের পাঁচটি অঞ্চল থেকে মোট ২৭টি দল তাতে অংশ নিয়েছে। ছিল মোটা পুরস্কারও।

ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার লক্ষ্যে দেশের নানা প্রান্তের তৈরি হচ্ছে ক্রিকেট অ্যাকাডেমি। সম্ভাবনাময় অনেক ক্রিকেটারই উঠে আসছেন। আমেরিকার ক্রিকেট সংস্থার মনে হচ্ছে, এই ক্রিকেটারদের আত্মপ্রকাশের জন্য একটা মঞ্চ দরকার ছিল। সেই অভাব মেটাতেই মাইনর ক্রিকেট লিগ চালু করা হয়েছে। এটি সফল হলে ভবিষ্যতে মেজর ক্রিকেট লিগের দরজাও খুলে যেতে পারে।

ভারত তো বটেই, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবোয়ের মতো দেশ থেকেও ক্রিকেটাররা অর্থ এবং সুযোগের লক্ষ্যে আমেরিকায় পাড়ি দিচ্ছেন। এমনকী ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ থেকেও আমেরিকায় পাড়ি দিচ্ছেন একের পর এক ক্রিকেটার। তবে খেলাটার সঙ্গে আত্মীয়তার কারণেই সম্ভবত দল ভারী ভারতীয়দের। আগামী দিনে আমেরিকা বিশ্বকাপে খেললে ভারতীয়দের অবদান সেখানে স্বর্ণাক্ষরেই লেখা থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE