Advertisement
E-Paper

পুরানই সেই দিনের কথা, ইডেনে ক্যারিবিয়ান ব্যাটারের ঝড়ে দিশাহারা কেকেআরের বোলিং

এ বারের আইপিএলে কমলা টুপি জেতার দৌড়ে সকলের আগে রয়েছেন নিকোলাস পুরান। পাঁচ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ২৮৮ রান। ২২৫ স্ট্রাইক রেট। একের পর এক ম্যাচে ঝড় তুলছেন ব্যাট হাতে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:০০
Picture of Nicholas Pooran

নিকোলাস পুরান। ছবি: আইপিএল।

ইডেন গার্ডেন্সের তপ্ত দুপুরে কলকাতা নাইট রাইডার্সের শিরদাঁড়ায় ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিলেন নিকোলাস পুরান। তাঁকে থামাতে পারলেন না কেকেআরের কোনও বোলার। ব্যাট হাতে মাঠের সব দিকে অনায়াস দক্ষতায় শট মারলেন। তাঁর ৩৬ বলে ৮৭ রানের ইনিংসের পরতে পরতে থাকল ক্যারিবিয়ান আগ্রাসী ক্রিকেটের ছোঁয়া।

মঙ্গলবারের ম্যাচের আগে পর্যন্ত সব মিলিয়ে পুরানের খেলা টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সংখ্যা ৩৮৮। রান ৮৮৪৩। স্ট্রাইক রেট ১৪৯.৫২। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় ২০ ওভারের ক্রিকেটে পুরান কতটা বিপজ্জনক। একাই প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিতে পারেন। সঞ্জীব গোয়েন্‌কা কেন তাঁকে ধরে রেখেছেন, তা পুরান বুঝিয়ে দিলেন দলের কর্ণধারের শহরেই। কেকেআরের বিরুদ্ধে পুরানের স্ট্রাইক রেট ২৪১.৬৬। মারলেন ৭টি চার এবং ৮টি ছক্কা। তাঁর ব্যাটে লেগে বল বার বার উড়ে গিয়েছে ইডেনে গ্যালারিতে। তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছু করার ছিল না অজিঙ্ক রাহানের। কোনও পরিকল্পনাই কাজে আসেনি। তাঁর সামনে দিশাহারা দেখাল কলকাতার সব বোলারকে। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে পুরান অপরাজিত থাকলেন শেষ পর্যন্ত। দলকে পৌঁছে দিলেন ২৩৮ রানের পাহাড়ে।

ক্রিকেটে বড় শট খেলতে হলে বড় চেহারা প্রয়োজন, এই ধারণা বদলে দিয়েছেন পুরান। ছোটখাটো চেহারার পুরান অনায়াসে যে কোনও বোলারের বল পাঠিয়ে দিতে পারেন মাঠের বাইরে। মারতে পারেন সব ধরনের শট। ‘বটম হ্যান্ড’-এ নিখুঁত টাইমিং, ব্যাট লিফ্‌ট এবং ব্যাট স্পিডের সহযোগে খেলেন। এতে বড় শট নিতে সুবিধা হয়। সঙ্গে রয়েছে ঝুঁকি নেওয়ার সাহস। মঙ্গলবারই আইপিএলে ১৫০টি ছয় মারার মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি। কেকেআরের বিরুদ্ধে ইনিংসের পর আইপিএলে ৮১ ম্যাচে ১৫১টি ছয় এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর ছক্কার সংখ্যা ৬১৫। চার ৫৯২। উড়িয়ে খেলতে পছন্দ করেন। বোলারদের শাসন করতে ভালবাসেন। তাঁর মারা চারের একটা বড় অংশ অল্পের জন্য ছয় হয়নি।

ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে চরিত্রের অভাব নেই। বছরের পর বছর বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদের উপহার দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। টেস্ট ক্রিকেট খেলেন না পুরান। দেশের হয়ে শুধু সাদা বলের ক্রিকেট খেলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ক্রিকেটের নবীনতম চরিত্র তিনিই। ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট এখন আর ৭০ বা ৮০র দশকের সমীহের জায়গায় নেই। ব্যতিক্রম পুরান। তাঁকে সমীহ করেন না, বিশ্বে এমন বোলার নেই। ২২ গজে পুরানের দাপট ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেয় ক্রিকেটপ্রেমীদের।

পুরানের বয়স এখন ২৯ বছর। চাইলে আরও পাঁচ-ছ’বছর অনায়াসে ক্রিকেট খেলতে পারেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ক্রিকেট কর্তাদের উচিত তাঁর মতো প্রতিভাকে আগলে রাখা। শুধু তাঁর ব্যাটই ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ক্রিকেটকে ফিরিয়ে দিতে পারে হৃত গৌরব। অন্তত সাদা বলের ক্রিকেটে তো বটেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার অধিকাংশ প্রতিযোগিতাতেই এখন খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে না ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। পুরানের মতো ক্রিকেটার থাকতেও পারে না। কারণ দেশের বোর্ডের কাছ থেকে যে যত্ন পাওয়া উচিত, তা পান না পুরানেরা। নিজেদের ইচ্ছায় ক্রিকেট খেলেন। বিভিন্ন দেশে লিগ খেলে বেড়ান।

ব্রায়ান লারার দেশের মানুষ পুরান। ত্রিনিদাদ এবং টোবাগো থেকে সুনীল নারাইন, কায়রন পোলার্ড, ডোয়েন ব্র্যাভোর মতো ক্রিকেটারেরা উঠে এসেছেন গত দু’-তিন দশকে। সেই তালিকায় শেষ সংযোজন পুরান। প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রের ক্রিকেটের নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি, যাঁকে সমীহ করে ক্রিকেট বিশ্ব। যেমন এক সময় আলাদা কদর ছিল গ্যারি সোবার্স, গর্ডন গ্রিনিজ, ক্লাইভ লয়েড, রোহন কানহাই, ভিভ রিচার্ডসদের। ব্যাটার পুরানকে দেখে পুরনো সেই দিনের কথা মনে পড়তেই পারে ক্রিকেটপ্রেমীদের।

Nicholas Pooran West Indies
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy