Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
ICC ODI World Cup 2023 Final

শেষ বেলায় ১৪০ কোটির স্বপ্নভঙ্গ, অস্ট্রেলিয়ার ‘হেড’ হারাল বিরাট আবেগকে, ষষ্ঠ বার বিশ্বজয়ী অসিরা

প্রথমে ব্যাট করে ভারত তুলেছিল ২৪০ রান। আমদাবাদে বিশ্বকাপের ফাইনালে সেই রান তুলতে খুব একটা অসুবিধা হল না অস্ট্রেলিয়ার। ট্রেভিস হেডের শতরান কাজটা আরও সহজ করে দিল।

Virat Kohli

হতাশ বিরাট কোহলি। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ২১:২১
Share: Save:

২০ বছর আগের বদলা হল না। ১২ বছর পর বিশ্বকাপ জয় হল না। ১০ বছর ধরে আইসিসি ট্রফি না পাওয়ার খরা কাটল না। আমদাবাদে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারত হেরে গেল। এ বারের বিশ্বকাপে একটি মাত্র ম্যাচ হারল ভারত। আর সেটা ফাইনাল ম্যাচ। প্রথমে ব্যাট করে ২৪০ রান করা ভারতের বিরুদ্ধে ট্রেভিস হেডের শতরানে ভর করে অস্ট্রেলিয়া জিতল ৬ উইকেটে।

শুধু ট্রেভিস হেড নয়, ভারত হেরে গেল অস্ট্রেলিয়ার দুরন্ত ক্রিকেট মস্তিষ্কের কাছেও। টস জিতে আগে বল করা হোক বা ফিল্ডিং সাজানো, সব দিকেই ছিল অস্ট্রেলিয়ার বুদ্ধির ছাপ। ব্যাটিংয়েও সেটা দেখালেন হেড এবং মার্নাস লাবুশেন।

টস জিতে কামিন্স আগে বল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। বিশ্বকাপজয়ী প্রাক্তন অধিনায়ক রিকি পন্টিং ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় বলেন, “টস জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ বোঝা গেল না। এই পিচে আগে ব্যাট করে নিলেই বোধ হয় সুবিধা হত।” কিন্তু ২০০৩ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে ভুল প্রমাণিত করলেন কামিন্স এবং অস্ট্রেলিয়ার বাকি বোলারেরা।

রোহিত এ বারের বিশ্বকাপে যে ভাবে খেলছিলেন, এই ম্যাচেও তার অন্যথা হল না। নেমেই দ্রুত রান তুলতে শুরু করেন তিনি। বড় শট খেলতে গিয়েই আউট হলেন। তখন তাঁর ৪৭ রান। কিন্তু নিজের ৫০ নয়, দলকে বড় রান দেওয়াই ছিল রোহিতের লক্ষ্য। সেটা করতে গিয়েই উইকেট দিলেন। আর তিনি আউট হতেই ধাক্কা খেল ভারত। রোহিত আউট হওয়ার পর ভারতের বাকি ইনিংসে হল মাত্র চারটি বাউন্ডারি। রোহিত নিজে তিনটি ছক্কা এবং চারটি চার মেরেছিলেন। বিরাট কোহলির মারা চারটি চারও এসেছিল রোহিত ক্রিজ়ে থাকাকালীন। ভারত অধিনায়ক আউট হতেই কেমন গুটিয়ে গেল ভারত।

indian fans

আমদাবাদে হতাশ দর্শকেরা। ছবি: পিটিআই।

টানা ১০টি ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল ভারত। সেই জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েই। ফাইনালে সেই অস্ট্রেলিয়া। যারা টানা আটটি ম্যাচ জিতেছে। বিশ্বকাপের বহু ম্যাচ ভারত একপেশে ভাবে জিতলেও বিশ্বকাপের ফাইনালে যে তা হবে না, সেটাই জানাই ছিল। পাঁচ বারের বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া গ্রুপ পর্বে হারলেও ফাইনাল অন্য ধরনের ম্যাচ। প্রথম ওভার থেকেই অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডিং সেটাই বুঝিয়ে দিচ্ছিল। ডেভিড ওয়ার্নার হয়তো তাঁর শেষ এক দিনের ম্যাচ খেলে ফেললেন। ৩৭ বছরের সেই ক্রিকেটার যে ভাবে ফিল্ডিং করলেন তা বাকিদের উদ্বুদ্ধ করতে বাধ্য। সেটাই হল। রোহিতের ক্যাচ নেওয়ার সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে বাউন্ডারির দিকে দৌড়ে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে ট্রেভিস হেড ক্যাচ নিলেন। অন্য ফিল্ডারেরাও চার হতে দিচ্ছিলেন না। ভারতের অন্তত ৩০ রান আটকে দেন অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডারেরা।

বিরাট এবং রাহুল অবস্থা বুঝে সিঙ্গলস নিতে শুরু করলেন। কোনও বোলারকে মেডেন নিতে দেননি তাঁরা। ওভারে অন্তত চারটি করে সিঙ্গলস নিয়ে স্কোরবোর্ডকে সচল রাখলেন বিরাটেরা। ভারতীয় সমর্থকেরা আফসোস করছিলেন শ্রেয়স আয়ারের উইকেট হারানো নিয়ে। মাত্র চার রান করে আউট হয়ে যান তিনি। শ্রেয়স থাকলে আরও কিছু রান বেশি হতে পারত বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু রোহিত আউট হওয়ার চার বলের মধ্যেই আউট হন শ্রেয়স। ভারতের বড় ধাক্কা ছিল সেটা। বিরাট এবং রাহুলের কাছে উপায় ছিল না বড় শট খেলার ঝুঁকি নেওয়ার। তাই বিরাট ৬৩ বলে করলেন ৫৪ রান আর রাহুল ১০৭ বল খেলে করলেন ৬৬ রান। কামিন্সের বল বিরাটের ব্যাটে লেগে উইকেট ভেঙে দেয়। আর নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের ১ লক্ষের বেশি দর্শক হতাশায় চুপ করে যায়।

বিরাট আউট হতে রবীন্দ্র জাডেজা ব্যাট করতে নামেন। রাহুলের সঙ্গে ইনিংস গড়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু ২২ বল খেললেও ৯ রানের বেশি করতে পারেননি জাডেজা। ভারতের আশা ছিল সূর্যকুমার যাদবের উপর। আইপিএলে ঝোড়ো ইনিংস খেলা সূর্য যদি শেষ বেলায় দ্রুত ৫০ রানও করে দিতে পারতেন, তাহলে বোলারদের হাতে আরও কিছু রান বেশি থাকত। কিন্তু সূর্য পারলেন না। তিনি কখনও শামি, কখনও কুলদীপ যাদবকে এগিয়ে দিলেন কামিন্স, স্টার্ককে খেলার জন্য। আর বড় শট খেলতে যেতেই নিজের উইকেট দিয়ে এলেন। বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচে ভারতের উপরের দিকে ব্যাটারেরা এত রান করেছেন যে, সূর্যকুমারের রান না পাওয়া সমস্যায় ফেলেনি। ফাইনালে সেই ফাঁকটা বিরাট হয়ে দেখা দিল। ২৮ বলে ১৮ রান করে যাওয়া সূর্য ভারতকে রানের আলো দেখাতে পারলেন না। এ বারের বিশ্বকাপে প্রথম বার ১০ উইকেট হারাল ভারত। উঠল ২৪০ রান।

ব্যাটারেরা ফাইনালে সে ভাবে নজর কাড়তে ব্যর্থ হওয়ায় ভারতের আশা ছিল বোলারদের উপর। গোটা প্রতিযোগিতায় বুমরা, শামিরা যে দাপট দেখিয়েছিলেন, তাতে তাঁদের উপর ভরসা করাই যেত। কিন্তু শুরুতেই বুমরার বলে খোঁচা দেওয়া ওয়ার্নারের ক্যাচ বিরাট এবং শুভমনের মাঝখান দিয়ে চারে চলে যায়। ভারতীয় ফিল্ডিংয়ের দুর্দশা সেখানেই ধরা পড়ে। ম্যাচ যত এগিয়েছে, তত ছন্নছাড়া দেখিয়েছে রোহিতদের ফিল্ডিং। আশা জাগিয়েছিলেন শামি। নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। মাত্র ৭ রান করে আউট হয়ে যান ওয়ার্নার। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে মিচেল মার্শকে তুলে নেন বুমরা। সপ্তম ওভারে স্মিথকেও আউট করেন তিনি। তার পরেই শামিদের সামনে দেওয়াল তুলে দিলেন হেড এবং লাবুশেন।

head

শতরান করার পর ট্রেভিস হেড। ছবি: পিটিআই।

ফাইনাল খেলতে নামার শামি ছ’ম্যাচে নিয়েছিলেন ২৩টি উইকেট। কিন্তু ফাইনালে প্রথম ওভার থেকেই তাঁর লাইন, লেংথ ঘেঁটে গেল। নতুন বলে বল করছিলেন তিনি। একটি উইকেট নিলেও শামি চাপ তৈরি করতে পারছিলেন না। বুমরা কিছুটা চেষ্টা করলেও ভারতের যাবতীয় চাপ ছিল প্রথম ১০ ওভারে। বাকি তিন বোলারদের অস্ট্রেলিয়ার হেড এবং লাবুশেন সহজেই খেলে দিলেন। রবীন্দ্র জাডেজা, কুলদীপ যাদব এবং মহম্মদ সিরাজ কোনও ভাবেই চাপ তৈরি করতে পারলেন না। বলা ভাল হেড এবং লাবুশেন চাপ তৈরি হতে দিলেন না। প্রথম থেকেই তাঁদের লক্ষ্য ছিল ওভারে পাঁচ রান করে তুলতে থাকা। প্রতি ওভারেই তাঁরা শুরুতে একটি করে বাউন্ডারি মেরে নিজেদের কাজটা সহজ করে নিচ্ছিলেন। বাকি বলগুলিতে সিঙ্গলসও নিচ্ছিলেন। ফলে প্রাথমিক চাপ কাটিয়ে ক্রিজ়ে থিতু হয়ে যাওয়ার পর আর অসুবিধাই হচ্ছিল না হেড এবং লাবুশেনের। বিশ্বকাপের ফাইনালে শতরান করলেন হেড। অর্ধশতরান করে লাবুশেন ধরে রাখলেন উল্টো দিক। উইকেটই ফেলতে পারল না ভারত।

ফাইনালে হারের দায় কিছুটা নিতেই হবে অধিনায়ক রোহিতকে। হাতে মাত্র ২৪০ রান নিয়ে আরও আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজানোর প্রয়োজন ছিল তাঁর। কুলদীপ এবং জাডেজা বল করার সময় স্লিপে কোনও ফিল্ডার রাখলেন না তিনি। সেখান দিয়েই চার গলালেন হেড। আর শতরান করার পর তো ভারতীয় বোলারদের তুলে তুলে মাঠে বাইরে পাঠিয়ে দিলেন। তাঁকে আটকানোর মতো কোনও পরিকল্পনাই দেখাতে পারলেন না রোহিত।

গোটা বিশ্বকাপে ভারতের ব্যাটিং দাঁড়িয়ে ছিল রোহিত, বিরাট এবং রাহুলের উপর। শেষ দিকে রান করেন শ্রেয়সও। কিন্তু তাঁদের এক দিন খারাপ গেলে ভারতের লোয়ার মিডল অর্ডারের পক্ষে যে দলকে ভরসা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না, সেটা বোঝা গেল রবিবার। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। নক আউট মানে তো একটি ম্যাচেই সব শেষ।

এ বারের বিশ্বকাপের ট্যাগলাইন ছিল ‘ইট টেকস ওয়ান ডে’। সত্যিই এক দিনের খেলা। গোটা প্রতিযোগিতায় জিতে এক দিন হেরেই সব শেষ ভারতের। আর অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার মুখ থেকে ফিরে এসে ট্রফি জিতে নিল। সত্যি ক্রিকেট বড়ই অনিশ্চয়তার খেলা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE