Advertisement
E-Paper

পাকিস্তানের সমীর মিনহাস একাই ১৭২, ভারত শেষ ১৫৬ রানে! বৈভবদের ১৯১ রানে পর্যুদস্ত করে ছোটদের এশিয়া সেরা পাকিস্তান

গ্রুপ পর্বে হারের বদলা ফাইনালে নিল পাকিস্তান। দুবাইয়ের মাঠে ব্যাটে-বলে ভারতকে টেক্কা দিল তারা। অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে শেষ পাঁচ বারের সাক্ষাতে এটি ভারতের চতুর্থ হার।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:০৭
cricket

শতরানের পর উল্লাস পাকিস্তানের সমীর মিনহাসের। ছবি: এক্স।

চাপের মুখে ভেঙে পড়ল ভারতের ব্যাটিং। বড় রান করতে পারলেন না আয়ুষ মাত্রে, অভিজ্ঞান কুন্ডুরা। আরও এক বড় ম্যাচে ব্যর্থ ভারতের ১৪ বছরের তারকা বৈভব সূর্যবংশী। দুবাইয়ের মাঠে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে লজ্জার হার হল ভারতের। সমীর মিনহাসের ১৭২ রানে ভর করে ভারতের সামনে ৩৪৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল পাকিস্তান। ভারত মাত্র ২৬.২ ওভারে ১৫৬ রানে অল আউট হয়ে গেল। ১৯১ রানের বিশাল ব্যবধানে হারলেন আয়ুষেরা। সমীরের একার রানই টপকাতে পারল না ভারত।

এই প্রথম বার ছোটদের এশিয়া কাপে একক চ্যাম্পিয়ন হল পাকিস্তান। এর আগে ২০১৩ সালে ভারতের সঙ্গে যৌথ ভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। ১২ বছর পর সেরা হল তারা।

ভারত-পাকিস্তানের লড়াইয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দাদারা যতই দাপট দেখান না কেন, ভাইয়েরা সেটা করতে পারছেন না। উল্টে বার বার পাকিস্তানের কাছে হারতে হচ্ছে। অন্তত অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে সেই ছবিটাই দেখা যাচ্ছে। গত পাঁচ বারের সাক্ষাতে ভারত হেরেছে চার বার। মোট ২৯ বারের সাক্ষাতে অবশ্য ভারত এগিয়ে। ১৬ বার জিতেছে তারা। পাকিস্তান জিতেছে ১২ বার। একটি ম্যাচ টাই হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে এগিয়ে পাকিস্তান।

টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত যে আয়ুষ কেন নিলেন তা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। গ্রুপ পর্বেই দেখা গিয়েছিল, রান তাড়া করতে সমস্যা হচ্ছে পাকিস্তানের। সেখানে ভারতের উচিত ছিল প্রথমে রান করে নেওয়া। সেই সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে হল। পুরো উল্টো ঘটনা দেখা গেল। পাকিস্তান নয়, রান তাড়া করতে নেমে চাপে খেই হারিয়ে ফেলল ভারত।

অধিনায়ক আয়ুষ ফর্মে ছিলেন না। এই ম্যাচেও সেটাই দেখা গেল। মাত্র ২ রানে আউট হলেন তিনি। বৈভব শুরুতে কয়েকটি বড় শট খেলে। কিন্তু তার খেলার ধরন একই রকম। থামতে জানে না সে। এক বার বৈভবের ক্যাচ ছেড়েছিল পাকিস্তান। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারল না সে। ১০ বলে ২৬ রান করে আউট হল। ভারতের ক্রিকেটে বেশ কয়েক দিন ধরে খেলছে বৈভব। আইপিএলে বিদেশিদের সঙ্গে সাজঘর ভাগ করেছে। তার বোঝা উচিত, প্রতি বলে মারা যায় না। যত তাড়াতাড়ি বৈভব সেটা বুঝবে তত মঙ্গল।

পাশাপাশি বড় ম্যাচে রান না করলে এগোনো কঠিন। এ বারের এশিয়া কাপে সেটা দেখা গেল না। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তান, সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কা ও সবশেষে ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রান পেল না বৈভব। একার কাঁধে ম্যাচ না জেতালে কিন্তু লম্বা রেসের ঘোড়া হতে পারবে না সে।

সেমিফাইনালে অ্যারন জর্জ ও বিহান মলহোত্র ভারতকে জিতিয়েছিলেন। তাঁরাও এই ম্যাচে পারলেন না। অ্যারন ১৬ ও বিহান ৭ রানে আউট হলেন। রানের চাপ এতটাই বেশি ছিল যে, হাত খোলা ছাড়া উপায় ছিল না। পাশাপাশি পাকিস্তানের বোলারেরা বুদ্ধি করে বল করলেন। বলের বৈচিত্র দেখালেন। কখনও বাউন্সার, কখনও স্লোয়ারে ভারতীয় ব্যাটারদের বিভ্রান্ত করলেন।

বৈভব, আয়ুষেরা আউট হওয়ার পর ভারতের একমাত্র আশা ছিলেন অভিজ্ঞান কুন্ডু। এই প্রতিযোগিতাতেই ২০২ রানের ইনিংস খেলেছেন বাংলার ব্যাটার। কিন্তু ফাইনালে তিনিও পারলেন না। ১৩ রান করে আউট হলেন। অভিজ্ঞান আউট হওয়ার পর ভারতের জয়ের আশা শেষ হয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ১৯১ রানের বিশাল ব্যবধানে হারতে হল ভারতকে।

পাকিস্তানের এই দলের মেন্টর সরফরাজ় আহমেদ। ২০১৭ সালে তাঁর নেতৃত্বেই ভারতকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে হারিয়েছিল পাকিস্তান। সেই ম্যাচেও প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুগেছিলেন বিরাট কোহলি। সেই ছবি আরও এক বার দেখা গেল। এ বার ডাগ আউটে বসে দলের জয় দেখলেন সরফরাজ়।

রবিবার দুবাইয়ের ২২ গজে আগ্রাসী ব্যাটিং করে ভারতীয় শিবিরে কাঁপুনি ধরিয়ে দিলেন সমীর। মুলতানের ১৯ বছরের ব্যাটার ইনিংসের শুরু থেকেই ছিলেন আগ্রাসী মেজাজে। ভারতের বোলারদের নিয়ে প্রায় ছেলেখেলা করেন ব্যাট হাতে। ৭১ বলে শতরান করলেন তিনি। সমীরের ১১৩ বলে ১৭২ রানের ইনিংসে রয়েছে ১৭টি চার এবং ৯টি ছক্কা। দ্বিশতরানের সুযোগ হাতছাড়া করলেও দলের রান ৩০০ পার করে সাজঘরে ফেরেন সমীর। দীপেশ দেবেন্দ্রনকে ছয় মারতে গিয়ে কণিষ্ক চৌহানের হাতে ধরা পড়েন পাক ব্যাটার।

এই ইনিংসের ফলে জোড়া বিশ্বরেকর্ড গড়েন সমীর। অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে সর্বাধিক রানের রেকর্ড গড়েছেন তিনি। এর আগে ২০১২ সালের ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে ১৩৪ রান করেছিলেন পাকিস্তানের সামি আসলম। তাঁর রেকর্ড ভেঙেছেন সমীর। অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ইতিহাসেও সর্বাধিক রান করেছেন সমীর। এই প্রতিযোগিতায় পাঁচটি ইনিংসে ৪৭১ রান করেছেন তিনি। দু’টি শতরান ও একটি অর্ধশতরান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। ১৫৭ গড়ে রান করেছেন পাক ব্যাটার। এর আগে এই রেকর্ডও ছিল সামির দখলে। ২০১২ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে পাঁচ ইনিংসে ১১৫.২৫ গড়ে ৪৬১ রান করেছিলেন তিনি। দু’টি শতরান ও দু’টি অর্ধশতরান করেছিলেন সামি। সেই রেকর্ড এত দিনে ভাঙল।

পাক ইনিংসের ৪৩তম ওভারে আউট হন সমীর। তখন পাকিস্তানের রান ৩০২। কিন্তু শেষ দিকের ব্যাটারদের ব্যর্থতায় প্রত্যাশিত রান তুলতে পারল না পাকিস্তান। পাকিস্তানের ব্যাটারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান চার নম্বরে নামা আহমেদ হুসেনের ৫৬। তাঁর ৭২ বলের ইনিংসে রয়েছে ৩টি চার এবং ১টি ছয়। সমীর আউট হওয়ার পর পাকিস্তানের আর কোনও জুটি ২২ গজে থিতু হতে পারেনি। শেষ ৬ উইকেট তারা হারিয়েছে ৪০ রানে। পাকিস্তানের বাকি ব্যাটারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রান শুধু তিন নম্বরে নামা উসমান খানের ৩৫। নইলে আরও বেশি লজ্জার হার হত ভারতের।

Under 19 Asia Cup India vs Pakistan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy