সমর্থন: ইডেনে স্ত্রী ফরজ়ানাকে নিয়ে হাজির জ়েইন। নিজস্ব চিত্র।
যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৩ সাল থেকে। আমেরিকায় ব্যবসার কাজ ফেলে স্ত্রীকে নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিয়নে। উপলক্ষ বিশ্বকাপে ভারত-পাক দ্বৈরথ। সইদ আনোয়ারের শতরানের পরেই শোয়েব আখতার, ওয়াসিম আক্রমদের বিরুদ্ধে সচিন তেন্ডুলকরের বিধ্বংসী ৯৮ রানের ইনিংস দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। সে দিনের পর থেকে একটিও ভারত-পাক ম্যাচ বাড়িতে বসে দেখেননি। বিশ্বের যে প্রান্তেই নামুক দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী, ছুটে যেতেন তাঁরা।
বর্তমানে সান ফ্রান্সিস্কোর বাসিন্দা জ়েইন জিওয়ানজি ও তাঁর স্ত্রী ফারজ়ানা জিওয়ানজি। মোট ১৪টি কোম্পানির মালিক তাঁরা। শেষ ২০ বছর ধরে সারা বিশ্ব ঘুরে চলেছেন শুধুমাত্র ভারত-পাক ম্যাচের সাক্ষী থাকার জন্য। পাকিস্তানের টিম হোটেলেই উঠেছেন জ়েইন। এসেছেন প্রিয় বন্ধু মোহসিন কাজ়ি।
আনন্দবাজারকে ৬৮ বছরের জ়েইন বলছিলেন, ‘‘সেঞ্চুরিয়নে আনোয়ার ও সচিনের ব্যাটিং দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। জিতেছিল ভারত। কিন্তু শোয়েব আখতারের বলে সচিন যে হুক করে ছক্কাটা মেরেছিল, সেই ছবি এখনও হৃদয়ে তরতাজা।’’ যোগ করেন, ‘‘মোট ২০টির উপরে ভারত-পাক ম্যাচ দেখেছি। টেস্ট, ওয়ান ডে, টি-টোয়েন্টি কিছুই বাদ দিইনি। ছেলেকে বলেছি ব্যবসা তুমি সামলাও। এখন আমার জীবন উপভোগ করার সময়। তোমার মা-কে নিয়ে সারা বিশ্ব ঘুরব আর ভারত-পাক ম্যাচ দেখব।’’
জ়েইন সব চেয়ে খুশি হয়েছিলেন ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে পাকিস্তানের ট্রফি তোলার দৃশ্য দেখে। বলছিলেন, ‘‘আমি ও স্ত্রী দু’জনেই কেঁদে ফেলেছিলাম। ভারত সেই প্রতিযোগিতার সব চেয়ে শক্তিশালী দল ছিল। প্রথম সাক্ষাতে ভয়ঙ্কর ভাবে হারিয়েছিল আমাদের। ফাইনালে কোনও আশা না নিয়েই মাঠে গিয়েছিলাম। আরও একটি পরাজয়ের প্রহর গুনছিলাম। অঙ্কটা পাল্টে দিল ফখর জ়মান। এ বার ওর ব্যাটে রান নেই। কিন্তু সেদিন ভারতকে হারিয়ে ট্রফি জয়ের মূল কান্ডারি ছিল ফখর।’’ যোগ করলেন, ‘‘সেই দিনের পর থেকে ফখর যতই খারাপ খেলুক, ওর সমালোচনা করতে পারিনি। সকলকে বলেছি ও যা দিয়েছে তা নিয়ে কৃতজ্ঞ থাকো।’’
ক্রিকেটীয় বিচারে মেলবোর্নে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিরাট কোহলির ইনিংসকে সব চেয়ে উপরে রাখছেন জ়েইন। তিনি যেখানে বসেছিলেন, ঠিক তার কয়েকটি আসন আগে হ্যারিস রউফকে মারা বিরাটের সেই বিশাল ছয় এসে পড়েছিল। ভারতকে আরও এক বার হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হারাতে চেয়েছিল পাকিস্তান। সেই আশায় জল ঢেলে দেন কোহলি। ৫৩ বলে ৮২ রানে অপরাজিত থেকে ভারতকে অভাবনীয় জয় উপহার দেন। সেই মুহূর্তের অন্যতম সাক্ষী জ়েইন। তাঁর কথায়, ‘‘এতটা টানটান ম্যাচ খুব কম দেখেছি। বোঝাই যাচ্ছিল না কারা শেষ হাসি হাসবে। ১৮তম ওভার পর্যন্ত নিশ্চিত ছিলাম আমরাই জিতছি। তার পর ধীরে ধীরে ম্যাচ বেরিয়ে যায়। রউফের ওভারে বিরাট দু’টো ছয় মারার পরে আমার স্ত্রী চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি। কিন্তু আমি মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলাম। সেঞ্চুরিয়নে সচিনকে দেখেছিলাম একা ম্যাচ নিয়ে যেতে। মেলবোর্নে দেখলাম তার উত্তরসূরিকে। যেন একই কাঠামোর দুই ভিন্ন মূর্তি।’’
আমদাবাদে ভারত-পাক ম্যাচ দেখতে গিয়ে সব চেয়ে আশ্চর্য হয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘২০১৬ সালে কলকাতায় এসেও দেখেছি পাক ক্রিকেটারেরা ভাল খেললে অভ্যর্থনা জানানো হয়। আমদাবাদে সিরাজকে এক ওভারে ইমাম-উল-হক তিনটি চার মারার পরে এক লক্ষ ১০ হাজার দর্শক নিস্তব্ধ! তা নিয়ে যদিও কোনও অভিযোগ
করছি না।’’
কলকাতায় পাকিস্তান-বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়েও উত্তেজিত তিনি। বলে গেলেন, ‘‘বিশ্বকাপের শেষ চারে খেলার নিরিখে এই ম্যাচের কোনও গুরুত্ব নেই। কিন্তু দু’দেশের ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে, এই ম্যাচের মাহাত্ম্য অন্য রকম। তাও আবার কলকাতার বুকে। তাই এই শহরে ফিরে আসা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy