সমস্যায় পড়তে পারে পাকিস্তান সুপার লিগ। কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে ভারত। তাদের বিরুদ্ধে এই হামলায় মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার প্রতিবাদে পাকিস্তান সুপার লিগে কর্মরত ভারতীয়দের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান সরকার। এই কর্মীরা পাকিস্তান সুপার লিগে সম্প্রচারের কাজে যুক্ত ছিলেন। তাঁরা চলে গেলে সমস্যায় পড়তে পারে সে দেশের টি-টোয়েন্টি লিগ।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, শাহবাজ় শরিফ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তানের লিগে কর্মরত ভারতীয়দের ফেরত পাঠানো হবে। তিনি বলেন, “পাকিস্তান সুপার লিগ সম্প্রচারের দায়িত্বে অনেক ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন। তাঁদেরকে ভারতে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার, প্রোডাকশন ম্যানেজার, ক্যামেরাম্যান রয়েছেন। তাঁরা চলে গেলে লিগের সম্প্রচারে সমস্যা হতে পারে। কারণ, দ্রুত তাঁদের পরিবর্ত বাছা কঠিন।” তিনি আরও জানিয়েছেন, যত ক্ষণ না তাঁরা ভারতে ফিরছেন তত ক্ষণ তাঁদের হোটেলে ছেড়ে বার না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের উপর নজর রাখছেন নিরাপত্তারক্ষীরা।
জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় মঙ্গলবারের জঙ্গিহানার ঘটনায় অন্তত ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় কয়েকটি সূত্রের মতে, নিহতের সংখ্যা অন্তত ২৮। সূত্রের খবর, হামলাকারীরা সংখ্যায় ছিল পাঁচ-ছ’জন। তার প্রতিবাদে বুধবার রাতে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সিন্ধু জলচুক্তি আপাতত স্থগিত রাখছে ভারত। পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া বন্ধ না-করা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বজায় থাকবে। ভারতের এই সিদ্ধান্তে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে পাকিস্তান। রয়টার্স অনুসারে, সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে নয়াদিল্লির সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামাবাদ।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স অনুসারে, পাকিস্তান জানিয়েছে তারা ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধ করে দিচ্ছে। ভারতকে তৃতীয় কোনও দেশে বাণিজ্যের জন্যও তারা নিজেদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না। শুধু তা-ই নয়, নিজেদের আকাশসীমাও ভারতকে আর ব্যবহার করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। প্রতিটি ভারতীয় উড়ান সংস্থার জন্য এই নিয়ম কার্যকর থাকবে বলে জানিয়েছে তারা। ইসলামাবাদে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলা জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক শেষ হতেই বিবৃতি প্রকাশ করেছে শাহবাজ় শরিফের সরকার।
আরও পড়ুন:
বুধবার রাতে সাংবাদিক বৈঠক করে ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী জানিয়েছিলেন, নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানি হাইকমিশনে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত আধিকারিকদের ‘অবাঞ্ছিত’ হিসাবে ঘোষণা করেছে নয়াদিল্লি। এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই সময়েই তিনি জানান, ইসলামবাদেও ভারতীয় হাইকমিশন থেকে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত আধিকারিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি। উভয় দেশেই দূতাবাসের আধিকারিক সংখ্যাও ৩০-এ নামিয়ে আনা হবে বলেও জানিয়েছিলেম মিস্রী। বৃহস্পতিবার বিকেলে ইসলামাবাদ থেকে আবার সেই ঘোষণাই করা হয়েছে। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসে থাকা প্রতিরক্ষা আধিকারিকদের পাকিস্তান ছাড়ার জন্য বলেছে শাহবাজ় প্রশাসন। দূতাবাসে কূটনীতিকের সংখ্যাও ৩০-এ নামিয়ে আনার কথা বলেছে তারা।
পাকিস্তান আরও জানিয়েছে, এখন থেকে তারাও ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দিচ্ছে। যে ভারতীয়েরা ওয়াঘা সীমান্ত হয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছেন, তাঁদের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পাকিস্তান থেকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তারা। ভারতীয়দের জন্য ‘সার্ক’ ভিসা বাতিল করার কথাও ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ‘সার্ক’ ভিসায় যে ভারতীয়েরা পাকিস্তানে রয়েছেন, তাঁদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বস্তুত, বুধবার রাতে সীমান্ত বন্ধ এবং ভিসা বাতিল সংক্রান্ত একই নির্দেশ দিয়েছে ভারতও। এ বার তার প্রভাব পড়েছে ক্রিকেটেও।