দিল্লিতে মঙ্গলবার বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই! সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকতে পারে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শনিবারের মতো আবহাওয়া স্বস্তি দিতে পারবে না অজিঙ্ক রাহানেদের। আইপিএলে প্লে-অফের দৌড়ে টিকে থাকতে হলে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে স্বস্তির ব্যবস্থা রাহানেদেরই করতে হবে।
পঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে কলকাতা নাইট রাইডার্সের মানরক্ষা করেছিল প্রকৃতি। ঝুলিতে এসেছিল এক পয়েন্ট। সেই এক পয়েন্টই গত বারের চ্যাম্পিয়নদের আশা জিইয়ে রেখেছে। অক্ষর পটেলদের বিরুদ্ধে জিততে না পারলে সেই আশাটুকুও যমুনার জলে ভাসিয়ে কলকাতার বিমান ধরতে হবে কেকেআরকে।
এ বারের আইপিএলে মঙ্গলবার দিল্লির বিরুদ্ধে প্রথম খেলবে কলকাতা। অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের পিচ অচেনা রাহানেদের কাছে। যদিও দলে রয়েছেন দিল্লির জোরে বোলার হর্ষিত রানা। কিন্তু প্রতিযোগিতার অর্ধেক হয়ে যাওয়ার পরও কেকেআর শিবির ঘরের মাঠ ইডেন গার্ডেন্সের ২২ গজের চরিত্র ঠিকমতো বুঝতে পারছে না! এ বার গৌতম গম্ভীরও নেই সঙ্গে। ফলে দিল্লির পিচ কঠিন লাগতে পারে রাহানেদের।
এ ছাড়া আরও একটা বড় সমস্যা রয়েছে নাইটদের। প্রথম একাদশ এখনও ঠিক করতে পারলেন না চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত, ডোয়েন ব্র্যাভোরা। শনিবার প্রথম খেলানো হয় রভম্যান পাওয়েল এবং চেতন সাকারিয়াকে। প্রথম একাদশ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে চালাতে প্লে-অফে পৌঁছোনোর সম্ভাবনাও প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। স্পেনসার জনসন, মইন আলি, রহমানুল্লা গুরবাজ়, কুইন্টন ডি’কক, অনরিখ নোখিয়েদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো হচ্ছে। কেকেআর কর্তৃপক্ষ রমনদীপ সিংহের উপর আস্থা হারালেও ম্যাচের পর ম্যাচ ডুবিয়ে যাওয়া আন্দ্রে রাসেলকে খেলিয়ে চলেছে। তাঁকে আবার ঠিকমতো ব্যবহারও করা হচ্ছে না। দিল্লির বিরুদ্ধেও বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামলে আবার শুকনো মুখ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হতে পারে রাহানেকে। ব্যাটিং এবং বোলিংয়ে কোনও ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে না। প্রত্যাশিত ফর্মে নেই কেউই। দলের সফলতম ব্যাটার টেস্ট ক্রিকেটের বিশেষজ্ঞ হিসাবে পরিচিত রাহানে! এই তথ্যটুকুই কেকেআরের বেহাল দশা বোঝানোর জন্য যথেষ্ট। অধিনায়ক ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছেন ঠিকই। তাতে লাভের লাভ কিছু হচ্ছে না।
প্রতিপক্ষ হিসাবে দিল্লি কঠিন। ছন্দে রয়েছেন অক্ষরেরা। ন’ম্যাচে ছ’টি জয় তাঁদের। রবিবার ঘরের মাঠে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর কাছে হেরে যাওয়া দিল্লি কেকেআরের বিরুদ্ধে মরিয়া থাকবে সন্দেহ নেই। লোকেশ রাহুল, ফ্যাফ ডুপ্লেসি, করুণ নায়ার, মিচেল স্টার্ক অভিষেক পোড়েল, ট্রিস্টান স্টাবস, কুলদীপ যাদবদের মতো ক্রিকেটারকে নিয়ে গড়া দিল্লি বেশ শক্তিশালী। আত্মবিশ্বাসীও। রয়েছেন বাংলার দুই ক্রিকেটার অভিষেক পোড়েল এবং মুকেশ কুমারও। কলকাতার বিরুদ্ধে মাঠে নামবেন এ বারের আইপিএলের একমাত্র বাঙালি ক্রিকেটার। নিজের শহরের দলের বিরুদ্ধে রান করতে মুখিয়ে থাকতে পারেন ফর্মে থাকা চন্দননগরের তরুণও।
যদি-কিন্তুর জালে আটকে থাকা কেকেআর চাপে আছে নিঃসন্দেহে। টানা দু’ম্যাচ হারের পর এ দিন সাংবাদিকদের সামনে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল বৈভব অরোরাকে। ২ মিনিট ৫২ সেকেন্ডে শেষ হয়ে গিয়েছিল প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। আমতা আমরা করে বৈভব জানিয়েছিলেন, তাঁদের সামনে প্লে-অফের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়নি। কিন্তু রাস্তা পরিষ্কার কে করবেন? উত্তর জানা নেই নাইটদের।
দলের প্রথম সারির ক্রিকেটারদের লুকিয়ে রাখতে হচ্ছে। যেমন মাঠে, তেমনই সাংবাদিকদের থেকে। পারফরম্যান্স নেই। কথা বলার মুখও নেই। প্লে-অফে জায়গা পেতে হলে বাকি পাঁচটি ম্যাচই জিততে হবে কেকেআরকে। একটি ম্যাচে হার মানেই অন্য দলগুলির উপর নির্ভর করবে ভাগ্য। দু’টি ম্যাচে হার মানে খেতাবরক্ষার লড়াই থেকে প্রায় ছিটকে যাওয়া। অর্থাৎ, জেতা ছাড়া উপায় নেই। কেকেআরের কাছে সব ম্যাচই এখন মরণবাঁচন। জিতলেও স্বস্তি ফেরার তেমন সুযোগ নেই কেকেআর শিবিরে। মঙ্গলবারের ম্যাচে চাপে থাকবে নাইটরাই। পারফর্ম করার চাপ। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার চাপ। রাহানেরা কঠিন থেকে কঠিনতর করে ফেলেছেন চ্যালেঞ্জ। দিল্লির আকাশও এক পয়েন্টের আশা দেখাতে পারছে না!