E-Paper

গাড়ি পাহারা দেন বাবা, মাঠে ঘূর্ণিজাল বাংলার বাঁহাতি স্পিনার প্রিয়াংশুর

১৮ বছরের বাঁ-হাতি স্পিনারের বাবা রাইটার্স বিল্ডিংয়ের পেছন দিকে গাড়ি পাহারা দেন। পার্কিংয়ের দায়িত্বে তিনিই। কাঁকুড়গাছিতে একটি ঘরের মধ্যে থাকেন প্রিয়াংশু, তাঁর বাবা, মা ও দাদা।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:৪৫
An Image of the cricketer

প্রতিভা: কোচবিহার ট্রফিতে পাঁচ উইকেট প্রিয়াংশুর।  ছবি: সিএবি।

প্রতিকূলতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে উঠে আসাকেই হয়তো স‌ংগ্রাম বলে। জীবনে এই লড়াই প্রত্যেকটি দিন লড়ে চলেছেন বাংলার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বাঁ-হাতি স্পিনার প্রিয়াংশু পটেল। কোচবিহার ট্রফিতে তাঁর ঘূর্ণিতে ধরাশায়ী হয়ে যাচ্ছে বিপক্ষ। কিন্তু বাড়িতে অভাব অনটনের সেই ছবি পাল্টাতে পারছেন না তিনি।

ময়দানে অনেক ক্রিকেটারই আছেন যাঁদের কাছে প্রত্যেক দিন বাস ভাড়া দিয়ে অনুশীলনে আসারও সামর্থ নেই। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভাবেন, ‘‘আজ যদি ৩০ টাকা খরচ করে ফেলি, কাল কার কাছে হাত পাতব?’’ দ্বিতীয় ডিভিশনে বেশির ভাগ ক্লাবই ক্রিকেটারদের টাকা দিতে পারে না। যাতায়াত ভাড়াটুকুও দেওয়া হয়ে ওঠে না। অনেক কর্তাই আছেন, প্রথম একাদশে খেলানোর জন্য যাঁরা ক্রিকেটারদের থেকে টাকা চান। তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে লড়াই করে শুধুমাত্র প্রতিভা ও পরিশ্রমের জোরে এগিয়ে চলেছেন প্রিয়াংশু।

১৮ বছরের বাঁ-হাতি স্পিনারের বাবা রাইটার্স বিল্ডিংয়ের পেছন দিকে গাড়ি পাহারা দেন। পার্কিংয়ের দায়িত্বে তিনিই। কাঁকুড়গাছিতে একটি ঘরের মধ্যে থাকেন প্রিয়াংশু, তাঁর বাবা, মা ও দাদা। কয়েক মাস আগে দাদা নতুন চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু বাড়ির পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। একটাই খাট। পাশেই রান্নার জায়গা। বর্ষাকালে ছাদ থেকে জল পড়ে খাট ভিজে যায়। শীতকালে ঠান্ডা ঢোকে বেড়ার ফাঁক দিয়ে। প্রিয়াংশুর স্বপ্ন, ক্রিকেটার হয়ে মা, বাবা ও দাদাকে ভাল বাড়িতে রাখবেন।

কোচবিহার ট্রফিতে বাংলার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে পাঁচ ম্যাচে পেয়েছেন ২৯ উইকেট। পঞ্জাবের বিরুদ্ধে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৪৫ ওভারে ১০০ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নেন তিনি। প্রথম দিন সাত উইকেট হারিয়ে পঞ্জাবের রান ২৬৯। একটি করে উইকেট পেয়েছেন যুধাজিৎ গুহ ও রাহুল প্রসাদ।

নকআউট ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়ে রাহুল বলছিলেন, ‘‘সকলের আশীর্বাদ আমার সঙ্গে আছে। ছোটবেলা থেকে পরিশ্রম করছি। কোনও দিনও ক্রিকেটের সরঞ্জাম কিনতে পারিনি। কোচেরাই আমাকে সব কিছু দিয়েছেন।’’

প্রিয়াংশু খেলেন কুমারটুলির হয়ে। কোচবিহার ট্রফিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বাংলার হয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছেন তিনি। বলছিলেন, ‘‘আমার বাবা খুব পরিশ্রম করেন। কলকাতার ভয়াবহ গরমেও গাড়ি পাহারা দিতে হত বাবাকে। ছেলে হয়ে কী করে এই কষ্ট দেখি বলুন তো?’’

প্রিয়াংশুর কোচ আব্দুল মুনায়ামের কথায়, ‘‘খুবই প্রতিভাবান ছেলে। তবে ওকে আরও পরিশ্রম করতে হবে।’’

সংগ্রামই যাঁর প্রতিদিনের সঙ্গী, পরিশ্রমের কথা কি তাঁকে মনে করিয়ে দিতে হয়?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Spinner India Under 19 bengal cricket Bengal Cricket team

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy