লর্ডসে দ্বিতীয় ইনিংসে চার উইকেট পেয়েছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। অথচ ম্যাঞ্চেস্টারে প্রথম ইনিংসে তাঁকে বল দেওয়া হল ৬৯তম ওভারে। কোন যুক্তিতে?
ভারতের প্রাক্তন প্রধান কোচ রবি শাস্ত্রী এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ। তিনি মনে করেন, ভারতীয় স্পিনারদের উপরে আস্থা নেই শুভমনের। তাই এত দেরীতে বল দেওয়া হচ্ছে।
চতুর্থ টেস্টের তৃতীয় দিন ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে শাস্ত্রী বলেছেন, ‘‘শুভমন ওর দলের স্পিনারদের উপরে আস্থা দেখাতে পারছে না। অথচ স্পিনাররাই ভারতকে উইকেট দিচ্ছে। শেষ দিন জাডেজা উইকেট পেল। তার পরেও চতুর্থ দিনে ওকে বেশি বল করানো হল না। ওয়াশিংটন সুন্দরকে তো ৬৭ ওভার পর্যন্ত বলই করানো হল না।’’ শাস্ত্রী আরও বলেছেন, ‘‘ভারতীয় বোলাররা সমানে লেগস্টাম্পে বল করে চলেছে। জানি না কে এই নির্দেশ দিয়েছে। যদি শুভমন দিয়ে থাকে, তা হলে লেগস্লিপ থাকবে না কেন? বোলারের উপরে আস্থা রেখে সেই অনুযায়ী তো ফিল্ডিং সাজাতে হবে।’’
ম্যাচের শেষে যা নিয়ে ভারতের বোলিং কোচ মর্নি মর্কেল সাংবাদিকদের বলেছেন, “শুভমন দীর্ঘক্ষণ পেসারদের দিয়ে বল করাতে চাইছিল। কিন্তু পরে এলেও ওয়াশিংটন নিজের কাজ ঠিক ভাবে করেছে।”
শাস্ত্রী মনে করেন, ভারতের বোলিং কোচের বোঝানো উচিত সকলকে। তাঁর কথায়, ‘‘পেসারদের সঙ্গে আলোচনা করুক মর্কেল। কেন এই পিচেও ওরা ফায়দা তুলতে পারছে না? প্রথম তিনটি টেস্টের মতো পিচ তো নয়। মর্কেলের বোঝানো উচিত, কোন জায়গায় বল ফেললে এই পিচে বেশি ফায়দা তোলা যাবে।’’
সফল: ব্রুক আউট। সতীর্থদের অভিনন্দন ওয়াশিংটনকে। ছবি: পিটিআই।
শুভমনের অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্টুয়ার্ট ব্রডও। তাঁর কথায়, ‘‘জানি না কী চিন্তা করছে শুভমন? যে স্পিনার তোমাকে শেষ ম্যাচে জয়ের মুখে নিয়ে গিয়েছিল, তাকে ৬৭ ওভার পর্যন্ত শুধু ফিল্ডিং করতে হল? এক ওভারও বল পেল না? মনে রাখতে হবে ওয়াশিংটন এসেই কিন্তু দু’টি উইকেট তুলে নিয়েছে।’’
প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন মনে করেন, বিরাট কোহলির মানসিকতা ফেরানো উচিত শুভমনের। না হলে এই সিরিজ় জেতা সম্ভব নয়। ভন বলেছেন, ‘‘তৃতীয় দিনে ইংল্যান্ড অসাধারণ খেলেছে। আমার মনে হয় এই জায়গা থেকে ভারতের জয়ের সম্ভাবনা খুবই কম। শুভমন গিলের নেতৃত্ব দেখে অবাক হলাম। ভাঙা পা নিয়ে ঋষভ পন্থ যে ইনিংস খেলে গেল, তা পুরো জলে দিয়ে দিল শুভমনরা।’’ যোগ করেন, ‘‘বিরাট কোহলির মতো মানসিকতা যদি তৈরি করতে না পারে, শুভমনের অধিনায়কত্ব চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। টেস্ট ক্রিকেটে ভয়ডরহীন ভাবে নেতৃত্ব দিতে হয়।’’
আইপিএলের পরেই পাঁচ টেস্টের সিরিজ় খেলতে হচ্ছে ভারতকে। ইতিমধ্যে চোটের কবলে পড়েছেন আরশদীপ সিংহ, আকাশ দীপ, নীতীশ কুমার রেড্ডিরা। তাই মর্কেল জানাচ্ছেন, পেসারদের পরিশ্রমের মাত্রা ঠিক করাটা জরুরি। তাঁর কথায়, “আইপিএলের মতো লম্বা প্রতিযোগিতার পাঁচ টেস্টের টেস্ট সিরিজ় খেলা সত্যিই পরিশ্রমের। টেস্টের উপযুক্ত পরিশ্রমের মাত্রা ধরে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।”
টেস্ট সিরিজ় শুরুর আগেই যশপ্রীত বুমরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি তিনটির বেশি টেস্ট খেলবেন না। মহম্মদ সিরাজ ইতিমধ্যে চতুর্থ টেস্ট খেলছেন। ম্যাঞ্চেস্টারে দেখা গিয়েছে, দু’জনেরই বলের গতি আগের তুলনায় অনেকটা কমে গিয়েছে। তবে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে অভিষেক হওয়া অংশুল কম্বোজকে নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। দেখা গিয়েছে, প্রতি ঘণ্টায় ১২৫ কিলোমিটার গতিতে করা তাঁর বল একেবারেই সমস্যায় ফেলতে পারেনি ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের।
যা নিয়ে মর্কেল বলেছেন, “প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অংশুল জোরেই বল করে। হয়তো আন্তর্জাতিক স্তরে এসে নিজের সেরাটা দিতে পারছে না। বুঝতে হবে, এই পর্যায়ে লুকিয়ে বাঁচার রাস্তা পাওয়া যায় না।”
কেন ম্যাঞ্চেস্টারেও কুলদীপ যাদবকে খেলানো হয়নি? মর্কেল বলেছেন, “কুলদীপ অন্যতম সেরা বোলার। দলের ভারসাম্যের দিকটাও ভেবে দেখতে হবে। আমরা ব্যাটিং ক্রম আরও বড় করতে চেয়েছি। কারণ গত ম্যাচে দ্রুত উইকেট হারাতে হয়েছিল।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)