Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Rishabh Pant

‘পন্থের গাড়িটা কি আমার গাড়ি’, ঋষভের দুর্ঘটনা বাংলার ক্রিকেটারকে ফেরাল ১৩ বছর আগে

শুক্রবার ভোরে গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন পন্থ। সেই সময় ডিভাইডারে ধাক্কা মারেন তিনি। এমনই দুর্ঘটনা ঘটেছিল অভীকের। তাঁর জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল ক্রিকেটটাই।

ঋষভ পন্থের গাড়ি দুর্ঘটনা অভীক চৌধুরীকে মনে করিয়ে দিচ্ছে তাঁর ঘটনার কথা।

ঋষভ পন্থের গাড়ি দুর্ঘটনা অভীক চৌধুরীকে মনে করিয়ে দিচ্ছে তাঁর ঘটনার কথা। —ফাইল চিত্র

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:৫৮
Share: Save:

পার হয়ে গিয়েছে ১৩ বছর। কিন্তু এখনও প্রতিটি মুহূর্ত মনে আছে অভীক চৌধুরীর। ভোলা সম্ভবও নয়। একটা গাড়ি দুর্ঘটনা যে অভীকের পুরো জীবনটাই পাল্টে দিয়েছে। শুক্রবার সকালে ঋষভ পন্থের গাড়ি দুর্ঘটনার পর তাঁর গাড়িটি দেখে নিজের গাড়ির কথা মনে পড়ছিল বাংলার প্রাক্তন প্রতিশ্রুতিমান অলরাউন্ডারের।

১৮ অক্টোবর, ২০০৯। প্রাক্তন বান্ধবী এবং তাঁর বোনেদের নিয়ে বাইপাসের উপর গাড়ি চালাচ্ছিলেন অভীক। সকালেই ইডেনে বাংলার অনুশীলন ম্যাচ খেলেছিলেন। পরের দিন বাংলার হয়ে খেলতে ধানবাদ যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সব বদলে দিল একটা দুর্ঘটনা। রুবি মোড়ের কাছে সেই দিন দুপুরে ডিভাইডারে ধাক্কা মারেন অভীক। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, “পন্থের ভাগ্য ভাল ও বেরিয়ে আসতে পেরেছে। দুর্ঘটনার পর আমারও জ্ঞান ছিল, কিন্তু বেরনোর মতো অবস্থা ছিল না। পরে হাসপাতালে জ্ঞান হারাই।” গলায় আক্ষেপ রয়েছে ১৩ বছর পরেও।

শুক্রবার ভোরে গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন পন্থ। সেই সময় ডিভাইডারে ধাক্কা মারেন তিনি। গাড়িতে আগুন লেগে যায়। পন্থ উইন্ডস্ক্রিন ভেঙে বেরিয়ে আসেন। অভীক বললেন, “সকালে গাড়িটার ছবি দেখেই আমার নিজের গাড়িটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। একই রকম ভাবে তুবড়ে গিয়েছিল। পন্থের গাড়িতে যদিও আগুন লেগে যায়। আমারটায় আগুন ধরেনি, কিন্তু তুবড়ে গিয়েছিল ওই রকম ভাবে।” দুর্ঘটনার পর কাছের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অভীকদের। তিনি বললেন, “সঙ্গে সঙ্গে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে ওখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই আমার শিরদাঁড়ার অস্ত্রোপচার হয়।” ২০ দিন সেই হাসপাতালে ছিলেন। পরে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লিতে।

দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে বাংলার ক্রিকেটার অভীক চৌধুরী।

দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে বাংলার ক্রিকেটার অভীক চৌধুরী। ছবি: আনন্দবাজারের আর্কাইভ থেকে

প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন অভীক। কিন্তু শেষ হয়ে গিয়েছে ক্রিকেট খেলা। বাংলার হয়ে তত দিনে রঞ্জি অভিষেক হয়ে গিয়েছিল তাঁর। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলে ফেলেছিলেন সাতটি ম্যাচ। লিস্ট এ ক্রিকেটে খেলেছিলেন ১৩টি ম্যাচ। অলরাউন্ডার অভীককে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিল বাংলা। কিন্তু সব শেষ করে দিল একটি দুর্ঘটনা। অভীক বললেন, “প্রথমে বুঝতে পারিনি যে আর কোনও দিন ক্রিকেট খেলতে পারব না। কলকাতায় থাকার সময় আমাকে কেউ বলেনি যে আর খেলা সম্ভব নয়। দিল্লিতে গিয়ে জানতে পারি। বিশ্বাস হচ্ছিল না। কলকাতা ফিরে নিজেই পড়াশোনা করি। বুঝতে পারি যে আর হাঁটতে পারব না। ক্রিকেট খেলা আর হবে না। খারাপ লাগছিল। এখনও খারাপ লাগে। এই যন্ত্রণাটা কখনও ভোলার নয়।”

পন্থের মাথায়, পিঠে, হাঁটুতে চোট রয়েছে। চিকিৎসকদের তরফে জানানো হয়েছে যে, পন্থের মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের এমআরআই করা হয়েছে। দু’টি রিপোর্টই স্বাভাবিক এসেছে। এ ছাড়া মুখের চোট, শরীরে তৈরি হওয়া বিভিন্ন ক্ষত এবং ছড়ে যাওয়ার জায়গায় প্লাস্টিক সার্জারি করা হবে। ওই সূত্রের খবর, গোড়ালি এবং হাঁটুর জন্য এমআরআই হবে। পন্থের শরীরের প্রচণ্ড ব্যথা রয়েছে। হাঁটু এবং গোড়ালির যে জায়গায় আঘাত লেগেছে, সেটি বেশ ফোলা। তাই শুক্রবার এমআরআই করা সম্ভব হয়নি। অভীক বললেন, “আশা করি পন্থ খেলতে পারবে। এখনও পর্যন্ত যা পড়ছি তাতে না খেলতে পারার তো কিছু দেখিনি। হয়তো বেশ কিছু দিন বিশ্রাম নিতে হবে। আশা করব খুব তাড়াতাড়ি ক্রিকেটে ফিরবে পন্থ।”

ইডেনে তরুণ ক্রিকেটারদের সঙ্গে অভীক চৌধুরী।

ইডেনে তরুণ ক্রিকেটারদের সঙ্গে অভীক চৌধুরী। ছবি: আনন্দবাজারের আর্কাইভ থেকে

৩৮ বছরের অভীকের ক্রিকেট খেলা শেষ হয়ে গিয়েছিল ২৫ বছর বয়সে। তবে জেদ কমেনি। তাই তিনি ক্রিকেটে ফিরেছেন। খেলতে পারেন না, কিন্তু প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছেন। গত দু’বছর ধরে আবার ময়দানে ফিরেছেন অভীক। বালিগঞ্জের প্রথম শ্রেণির একটি ক্লাবের কোচ তিনি। তাঁর পাশে রয়েছেন বন্ধু অনুষ্টুপ মজুমদার। যিনি এখন বাংলার সিনিয়র দলের সদস্য। লক্ষ্মীরতন শুক্লর নেতৃত্বে অভিষেক হয়েছিল অভীকের। সেই লক্ষ্মী এখন বাংলার কোচ। কথা হয় তাঁর সঙ্গেও। ময়দানে ফিরেছেন অভীক। তিনি বলেন, “আমি হয়তো দাঁড়িয়ে ফিল্ডিং অনুশীলন করাতে পারি না, বা দেখাতে পারি না কী ভাবে পা-টা রাখব। কিন্তু ব্যাট ধরে দেখাতে পারি। কথা বলে বুঝিয়ে দিতে পারি কী করতে হবে। আমাকে সাহায্য করার জন্য সহকারী কোচ আছেন। অসুবিধা হয় না।” তাঁর মতো মানসিক জোর থাকলে অসুবিধা হওয়ার কথাও নয়। উঠতি ক্রিকেটাররা যে কোচের থেকে এই মানসিক জোরটা শিখতে পারছে, তাদেরও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

স্ত্রী অলকানন্দার সঙ্গে অভীক চৌধুরী।

স্ত্রী অলকানন্দার সঙ্গে অভীক চৌধুরী। ছবি: আনন্দবাজারের আর্কাইভ থেকে

ক্রিকেটার অভীকের স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছিল ১৩ বছর আগের একটি দুর্ঘটনা। তাঁর সেই সময়ের সতীর্থদের কেউ কেউ এখন কেরিয়ারের শেষ পর্বে, কেউ কোচিং করাচ্ছেন। অভীক লড়াই করছেন। তিনি বলছিলেন, “একটু তো সাবধানে থাকতেই হয়। খাওয়া দাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু জিনিস মেনে চলতে হয়। জল খাওয়ার ক্ষেত্রেও। অনেক কিছুই হয়তো করতে পারি না। ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছি। কিছু তো করার নেই। এ ভাবেই চলতে হবে। আবার ক্রিকেটে ফিরেছি। নিয়মিত খেলা দেখি। বাংলার ক্রিকেটের সব খবর রাখি। ভাল আছি এখন।”

পন্থও চাইবেন ক্রিকেটে ফিরতে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ় খেলে দেশে ফিরেছিলেন ভারতীয় উইকেটরক্ষক। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সাদা বলের সিরিজ়ে যদিও রাখা হয়নি তাঁকে। তাই বাড়ির সকলের সঙ্গে নতুন বছরের শুরুটা কাটাবেন বলে ফিরছিলেন পন্থ। রাতের অন্ধকারে বেরিয়েছিলেন দিল্লি থেকে। কিন্তু বাড়ি পৌঁছনোর আগেই ঘটে গেল দুর্ঘটনা। আপাতত ক্রিকেট থেকে দূরে পন্থ। অভীক জানেন এই কষ্টটা। তাই বললেন, “আশা করব পন্থ তাড়াতাড়ি মাঠে ফিরবে। ওর খেলা আবার দেখতে পাব আমরা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rishabh Pant Team India bengal cricket CAB
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE