কলকাতা নাইট রাইডার্সের পরের প্রতিপক্ষ পঞ্জাব কিংস। শেষ ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে জয় পাওয়া অজিঙ্ক রাহানের দল মঙ্গলবার আত্মবিশ্বাসী থাকবে। তবে মঙ্গলবারের ম্যাচে কলকাতার আসল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারেন শ্রেয়স আয়ার।
শ্রেয়সের নেতৃত্বে গত মরসুমে ১০ বছরের ট্রফি খরা কাটিয়েছিল কেকেআর। তৃতীয় বার আইপিএল জয়ের অন্যতম কারিগরকে এ বার দলে রাখেননি কেকেআর কর্তৃপক্ষ। ট্রফিজয়ী অধিনায়ককে দল থেকে ছেঁটে ফেলা অপ্রত্যাশিত। অথচ সেটাই করেছেন বেঙ্কি মাইসোরেরা। মুম্বইকরকে বাদ দিয়ে কেকেআর অধিনায়ক করেছে মুম্বইয়েরই আর এক ক্রিকেটার রাহানেকে।
পঞ্জাবের বিরুদ্ধে ম্যাচ কেকেআরের কাছে তাই মর্যাদার রক্ষার লড়াই। এ বারের আইপিএলে কলকাতা এবং পঞ্জাব ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ। কেকেআরের বিরুদ্ধে শ্রেয়সের অনুযোগ, অধিনায়ক হিসাবে আইপিএল জিতিয়েও প্রত্যাশিত গুরুত্ব পাননি। গত বারের ফাইনালের পর তাঁর সঙ্গে নাকি সে ভাবে যোগাযোগই রাখেননি কেকেআর কর্তৃপক্ষ। নিলামের আগেই দু’পক্ষের দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়কের নাম ছিল না কেকেআরের রিটেনশন (যে ক্রিকেটারদের ধরে রাখা হয়) তালিকায়। শোনা গিয়েছিল, শ্রেয়স যে টাকা দাবি করেছিলেন, তা দিতে রাজি হননি কেকেআর কর্তৃপক্ষ। অগত্যা নিজের চাহিদা যাচাই করতে নিলামে নাম লেখান সাদা বলের ক্রিকেটে দেশের অন্যতম সেরা মিডল অর্ডার ব্যাটার। সেই নিলামে শ্রেয়সকে পেতে কেকেআর কর্তৃপক্ষকে মরিয়া হয়ে ঝাঁপাতে দেখা যায়নি। শ্রেয়সের জন্য যে দর পর্যন্ত উঠেছিলেন বেঙ্কিরা, তার অনেক বেশি অর্থ খরচ করে নিলাম থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে বেঙ্কটেশ আয়ারকে। বিষয়টা দুই আয়ারের মধ্যে এক জনকে বেছে নেওয়ার ছিল না। শ্রেয়স এবং কেকেআর উভয় পক্ষের তরফেই অনীহা, অনাগ্রহ ছিল স্পষ্ট। বিচ্ছেদের লিখন আগেই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল।

আরও পড়ুন:
শ্রেয়স হাতছাড়া হওয়ায় কেকেআর কর্তৃপক্ষের হয়তো তেমন আক্ষেপ নেই। একই ভাবে শ্রেয়সেরও আক্ষেপ থাকার কথা নয়। ভাল দামে (২৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা) পঞ্জাবে গিয়েছেন। নেতৃত্বও পেয়েছেন। এ বারের আইপিএলে একাধিক ভাল ইনিংস খেলেছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেকেআর কী হারিয়েছে। মুল্লানপুরের (পঞ্জাবের ঘরের মাঠ) ২২ গজে কেকেআরকে আরও ভাল ভাবে বুঝিয়ে দিতে চাইবেন গত বারের অধিনায়ক। অবহেলা, অসম্মানের জবাব দিতে চাইবে তাঁর ব্যাট। মঙ্গলবারের ম্যাচে এটাই সবচেয়ে দুশ্চিন্তার কেকেআরের কাছে।
শুধুই কি তাই? শ্রেয়স জানেন কেকেআর শিবিরের সব কিছু। কলকাতার শক্তি, দুর্বলতা কিছুই অজানা নয় তাঁর। কেকেআরের প্রথম দলের প্রায় ক্রিকেটারকে হাতের তালুর মতো চেনেন। কারণ গত মরসুমেও দলটা ছিল তাঁর। স্বভাবতই ঘরের মাঠে কেকেআরের বিরুদ্ধে রণকৌশল তৈরি করতে সমস্যা হওয়ার কথা নয় পঞ্জাব শিবিরের।
শ্রেয়স ছাড়াও আইপিএলের সপ্তম ম্যাচে কেকেআরের প্রতিপক্ষ হয়ে দেখা দিতে পারে মুল্লানপুরের পিচ। এই মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা নেই কলকাতার ক্রিকেটারদের। শ্রেয়সকে সামলে নেওয়া গেলেও পিচকে বশ করা কঠিন হতে পারে। অ্যাওয়ে ম্যাচে পিচ নিয়ে চিন্তা থাকেই। অচেনা ২২ গজ আরও বিপজ্জনক। আগের ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কাছে হারতে হয়েছে পঞ্জাবকে। তাই কলকাতার বিরুদ্ধে জয়ের জন্য মরিয়া থাকবে শ্রেয়সের দল।
শক্তির নিরিখে শাহরুখ খান এবং প্রীতি জ়িন্টার দলের মধ্যে খুব পার্থক্য নেই। রাহানের হাতে সুনীল নারাইন, কুইন্টন ডি’কক বেঙ্কটেশ, রিঙ্কু সিংহ, বরুণ চক্রবর্তী, আন্দ্রে রাসেলের মতো ক্রিকেটারেরা আছেন। যাঁরা একার হাতেই ম্যাচের রং বদলে দিতে পারেন। তেমনই শ্রেয়সের হাতে রয়েছেন প্রিয়াংশ আর্য, প্রভসিমরন সিংহ, যুজবেন্দ্র চহাল, অর্শদীপ সিংহ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টোইনিসের মতো ক্রিকেটারেরা আছেন। দু’দলের সমানে সমানে লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। যদিও ‘এক্স ফ্যাক্টর’ হতে পারেন কেকেআরের ‘বিতাড়িত’ শ্রেয়স এবং তাঁর নতুন ঘর মুল্লানপুর।