E-Paper

রাসেলকে দক্ষিণ আফ্রিকা লিগে নিয়ে যাচ্ছেন সৌরভ

৩৭-এর বুড়িয়ে আসা রাসেলকে নেওয়ার জন্যও যে এমন প্রবল আগ্রহ কেউ দেখাতে পারে, কে জানত!

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৫ ০৭:৩৪
নায়ক: ইডেনে ঝড় তুলে জেতানোর পরে সৌরভের অভিনন্দন রাসেলকে। রবিবার ইডেনে।

নায়ক: ইডেনে ঝড় তুলে জেতানোর পরে সৌরভের অভিনন্দন রাসেলকে। রবিবার ইডেনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

আন্দ্রে রাসেল রবিবাসরীয় ইডেনে শুধু পুরনো রাসেলকেই ফিরিয়ে আনলেন না। শুধু কেকেআরের মৃতপ্রায় আইপিএল অভিযানকে বুস্টার ডোজ় দিয়ে বাঁচিয়েই তুললেন না। একই সঙ্গে নতুন টি-টোয়েন্টি লিগের লোভনীয় চুক্তিও জিতে ফেললেন। এই ৩৭-এর বুড়িয়ে আসা রাসেলকে নেওয়ার জন্যও যে এমন প্রবল আগ্রহ কেউ দেখাতে পারে, কে জানত!

আরও চমকপ্রদ, যিনি রাসেলের দিকে নতুন এই চুক্তিপত্র বাড়িয়ে দিলেন। তিনি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়— প্রাক্তন কেকেআর অধিনায়ক। এখন যিনি দিল্লি দলের সঙ্গে যুক্ত। আইপিএলের পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকা টি-টোয়েন্টি লিগে দল রয়েছে জেএসডব্লিউ গ্রুপের। সেই দলের নাম প্রিটোরিয়া ক্যাপিটালস। যারা প্রথম বারে এসএ-২০ লিগে রানার্স। রাসেলকে এই প্রিটোরিয়া ক্যাপিটালসের হয়ে আসন্ন মরসুমে খেলাতে চান সৌরভ।

রবিবার রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসকে ১ রানে হারায় কলকাতা নাইট রাইডার্স। নিষ্পত্তি হয় শেষ বলে। তার পরেই মাঠে গিয়ে রাসেলের সঙ্গে কথা বলেন সৌরভ। কী কথা হল দু’জনে? সৌরভ প্রথমেই রাসেলকে অভিনন্দন জানান দুর্ধর্ষ ইনিংসের জন্য। রাসেলকেও দেখা যায়, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। একটা সময় মনে হল, হাত জোড় করে বাঙালি কায়দায় কিছু বলছেন। এর পরেই তাঁর পরিকল্পনার কথা জানান সৌরভ। রাসেলকে বলেন, তোমাকে আমাদের প্রিটোরিয়া ক্যাপিটালস দলে খেলাতে চাই। জানা গিয়েছে, রাসেল খেলতে রাজিও হয়েছেন। ক্যারিবিয়ান লিগে কেকেআরের দল আছে, দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি লিগে তারা খেলে না। তাই রাসেলকে নেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মের দিক থেকে অসুবিধা নেই প্রিটোরিয়া ক্যাপিটালসের। ইডেন থেকে বেরোনোর সময় সৌরভকে বেশ আশাবাদী শোনাল রাসেলকে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়ার ব্যাপারে।

ইডেন তখন কেকেআরের বিজয়োৎসব চলছে। শেষ বলে রিঙ্কু সিংহের দারুণ থ্রো-তে জফ্রা আর্চার রান আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাগআউট থেকে সকলে ছুটে গেলেন। শাহরুখ খান সেই উদ্বোধনী ম্যাচের পরে আর আসেননি। কিন্তু জুহি চাওলা ছিলেন। তিনি মাঠে নেমে এসে রাসেল, নারাইনদের অভিনন্দন জানাতে থাকলেন। ডিজে জোরে বাজিয়ে দিয়েছেন ‘করব, লড়ব, জিতব রে’। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে যেন নিভে আসা প্রদীপ আবার জ্বলে উঠেছে। প্লে-অফে যেতে হলে শেষ চারটে ম্যাচের চারটেতেই জিততে হবে, এটা ছিল প্রথম সমীকরণ। তার পর দেখতে হবে, অন্যান্য দলগুলির অবস্থা। যাক, অন্তত প্রথম বাধাটা তো পেরোনো গেল।

আর কী দুর্ধর্ষ সব মোচড় আর অপ্রত্যাশিত বাঁক। কেকেআর খুব মন্থর শুরু করল। রাসেলের আগমনটা মনে করুন। ভীষণ মন্থর ভাবে শুরু করেছিলেন তিনিও। প্রথম ৯ বলে করলেন ২। তার পরের ১৬ বলে করলেন ৫৫। সব মিলিয়ে ২৫ বলে ৫৭ অপরাজিত। চারটি চার ও ছ’টি পেল্লাই ছক্কা সমেত। স্ট্রাইক রেট ২২৮। আঠারোতম ওভারে মহেশ তিক্ষণকে পর-পর তিনটি ছক্কা মারলেন। নাইট রাইডার্স ১৫ ওভার শেষে ছিল ১২১-৩। সেখান থেকে শেষ করল ২০৬-৪ নিয়ে। রাসেল আর রিঙ্কুকে কেন এত পরে নামানো হচ্ছে, তা নিয়ে বারবার কথা উঠেছে। বারবার লেখা হয়েছে। রাসেলের ফর্ম, ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি এটা নিয়েও চর্চা হয়েছে যে, ‘রাসেল মাস্‌ল’ দেখানোর মতো যথেষ্ট বল কি তিনি পাচ্ছেন? এ দিন হাতেনাতে প্রমাণ হয়ে গেল, চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতদের ‘পাণ্ডিত্য’-ই পুরো ভুল ছিল। রাসেল নিজেও তো খোঁচা দিয়ে গেলেন নাইট ম্যানেজমেন্টকে। বিরতিতে সম্প্রচারক চ্যানেলের সামনে পরিষ্কার বলে দিয়ে গেলেন, ‘‘যত বেশি বল পাব, তত বেশি আমি অবদান রাখতে পারব।’’ এর চেয়ে খোলাখুলি আর কী বলবেন?

রিঙ্কু সিংহকে জিজ্ঞেস করলেও বোধ হয় একই কথা বলতেন যে, আপনারা অঙ্গকৃশ, রামনদীপদের উপরে পাঠানোর কথা ভাবেন। আমি কী দোশটা করলাম? এ দিন রাসেল যদি ম্যাচের সেরা হন, তা হলে যোগ্য সঙ্গতের জন্য রিঙ্কুকে অন্তত ড্রেসিংরুম সম্মেলনে পুরস্কৃত করা উচিত। ৬ বলে ১৯। শেষ পাঁচ ওভারে কেকেআর তোলে ৮৫। এর মধ্যে শেষ তিন ওভারে ওঠে ৫৭। শেষ ওভারে ২২। রিঙ্কু দু’টো পর-পর ছক্কা মেরে ২০০ পার করলেন। এর পরেও কে ভেবেছিল, রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচটা প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে চলে যাবে!

হাসরঙ্গ যখন আউট হলেন রাজস্থান রয়্যালস ৭১-৫। বৈভব সূর্যবংশী ফিরে গিয়েছেন। যশস্বী জয়সওয়াল আউট। ৭৩ বলে চাই ১৩৬। ম্যাচ শেষ ধরে নিয়েছে গোটা ইডেন। অনেকে বাড়ি চলে যাবেন কি না ভাবছেন। কোথা থেকে হঠাৎ উদয় হলেন রিয়ান পরাগ। এমন এক ধুন্ধুমার কাণ্ড বাঁধালেন, যা আজ পর্যন্ত আইপিএলে কেউ পারেননি। পর-পর ছয় বলে ছয় ছক্কা, যদিও তা একটি ওভারে হয়নি। প্রথমে মইন আলির শেষ পাঁচ বলে পাঁচ ছক্কা মারলেন রিয়ান। ওই ওভারে নিলেন ৩২। এর পর বরুণের পরের ওভারে যে বলটা তিনি প্রথম খেললেন, রিভার্স সুইপে ছক্কা! বিস্মিত হয়ে ইডেন ভাবছে, আজও কি শনি নাচছে কপালে? পঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে ১১১ তুলতে গিয়ে হেরেছে। এই ইডেনে লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে জেতা ম্যাচ দিয়ে এসেছে। এ বার ধ্বংসকারীর নাম কি রিয়ান পরাগ?

বিধ্বংসী: ৪৫ বলে ৯৫ রান করার পথে রিয়ান পরাগ।

বিধ্বংসী: ৪৫ বলে ৯৫ রান করার পথে রিয়ান পরাগ। —নিজস্ব চিত্র।

ভাবতে না ভাবতেই নতুন মোড়। হর্ষিত রানা প্রথম দুই ওভারে দিয়েছিলেন ২৮। চলতি আইপিএলে একেবারেই ছন্দে নেই। শিমরন হেটমায়ার এবং রিয়ান পরাগ— সেই সময় বিপজ্জনক হয়ে ওঠা দু’জনকেই ফেরালেন হর্ষিত। ক্রিকেট কখন কাকে রাজা বানায়, কখন কাকে ফকির কে বলতে পারে! কিন্তু তাতেও নাটক শেষ হল না। শুভম দুবে যে রিয়ান পরাগ পার্ট টু হয়ে উঠতে পারেন, কে ভেবেছিল। শেষ ওভারে চাই ২২। বৈভব অরোরাকে একটা চার, দু’টো ছক্কা মেরে দিলেন শুভম। শেষ বলে চাই ৩। কোনও রকমে ২ নিতে পারলেই সুপার ওভার। বৈভব দারুণ নিশানায় ইয়র্কার করলেন। লং-অনে পাঠিয়েই দৌড়লেন শুভম। কুঁচকির চোট নিয়েই দুর্দান্ত থ্রো করলেন রিঙ্কু সিংহ। তার আগে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিশ্চিত বাউন্ডারি বাঁচিয়েছেন। ওই চারটা না আটকাতে পারলে বিজয়োৎসবের দৃশ্য তৈরি হত কি না সন্দেহ। রিঙ্কুর থ্রোতে রান আউট জফ্রা আর্চার। ১ রানে জিতে ভেসে থাকল কেকেআর। ব্যাটের পাশাপাশি বোলার রাসেলের কথাও বলতে হবে। ১৯তম ওভারে বল করতে এসে মাত্র ১১ রান দিলেন।

এক-এক সময় অবশ্য মনে হচ্ছে, ম্যাচের মতোই রুদ্ধশ্বাস সব ঘটনা দেখা গেল ম্যাচের শেষে। যেমন সৌরভের প্রস্তাব রাসেলকে। এক জনের হাতে শাহরুখ খানের দলের আইপিএল অভিযান শুরু হয়েছিল আজ থেকে আঠারো বছর আগে। অন্য জন কেকেআরের সর্বকালের সেরা ম্যাচউইনারদের এক জন। অধিনায়ক সৌরভ কখনও রাসেলকে পাননি। পেয়েছিলেন ক্রিস গেল-কে। এ দিন রাসেল যে ইনিংস খেললেন, তা অবশ্য সেরা সময়ের গেলের চেয়ে কম বিধ্বংসী কিছু নয়। গেল যদি ‘ইউনিভার্স বস’ হন, তিনি আন্দ্রে রাসেল ‘কলকাতা বস্‌’ তো বটেই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Andre Russell Riyan Parag

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy