Advertisement
E-Paper

পঞ্জাবের মাটিতে ব‍্যর্থ তিন ‘পঞ্জাব দা পুত্তর’! মুখ থুবড়ে পড়ল সাধের ব‍্যাটিং লাইন-আপ, প্রোটিয়াদের কাছে ৫১ রানে হার সূর্যের ভারতের

কটকে ভারত যতটা ভাল খেলেছিল, ঠিক ততটাই খারাপ খেলল মুল্লানপুরে। টস জিতে পরে ব্যাট করার সুবিধা নিতে পারল না তারা। বোলিং-ব্যাটিং দুই বিভাগই হতাশ করল। সিরিজ়ে সমতা ফেরাল দক্ষিণ আফ্রিকা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:৪৩
cricket

হতাশ সূর্যকুমার যাদব। ছবি: পিটিআই।

আর কত লজ্জা দেবেন গৌতম গম্ভীর? লাল বলের ক্রিকেটে দেশের মাটিতে এক বছরে চুনকাম হয়ে দু’বার সিরিজ় হেরেছে ভারত। টি-টোয়েন্টিতে এত দিন বাকিদের বিরুদ্ধে দাপট দেখাত ভারত। এ বার তাতেও কালি লাগল। মুল্লানপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ৫১ রানে হারল ভারত। পুরো ২০ ওভারও খেলতে পারল না তারা। প্রথম ম্যাচে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজ়ে সমতা ফেরাল দক্ষিণ আফ্রিকা। পঞ্জাবের মাটিতে ব্যর্থ পঞ্জাবের তিন ছেলে। বল হাতে অর্শদীপ সিংহ এবং ব্যাট হাতে অভিষেক শর্মা ও শুভমন গিল দাগ কাটতে পারলেন না।

এই হারের দায় মূলত তিন জনের। কোচ গম্ভীরের পাশাপাশি অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ও সহ-অধিনায়ক শুভমনও সমান দায়ী। তাঁরা দলের সিনিয়র ক্রিকেটার।কোথায় দলকে সামলাবেন, তা না নিজেরাই ফর্ম খুঁজছেন! আরও এক ম্যাচে রান পেলেন না দুই ক্রিকেটার। এই ম্যাচে জঘন্য বল করলেন জসপ্রীত বুমরাহ ও অর্শদীপ। ভারতের সিনিয়র ক্রিকেটারেরা যা খেললেন, তাতে অনেক প্রশ্ন উঠে গেল। যেখানে ভারতের পেসারেরা ভারতের মাটিতে একটিও উইকেট পেলেন না, সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারেরা ভারতের ১০টি উইকেটই নিলেন। দু’মাস পর ভারতের মাটিতেই এক দিনের বিশ্বকাপ। সেখানে এ রকম খেললে তো বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন মাঠে মারে যাবে।

cricket

এই ম্যাচেও ওপেনিং জুটি বদলায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ডি’ককের সঙ্গে ওপেন করতে নামেন রিজ়া হেনড্রিক্স। সিরিজ় প্রথম বার খেলতে নেমে ব্যাটে-বলে সমস্যা হচ্ছিল তাঁর। অপর প্রান্তে প্রথম বল থেকে হাত খেলা শুরু করলেন ডি’কক। কেন ভারতের মাটিতে তিনি এত সফল তা আরও এক বার দেখালেন দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটরক্ষক।

ভারতের দুই পেসার জসপ্রীত বুমরাহ ও অর্শদীপ সিংহকে নিশানা করেন ডি’কক। বিশেষ করে অর্শদীপের বলে শুরু থেকে হাত খুলছিলেন তিনি। পেস ব্যবহার করে শট মারছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথম ধাক্কা দেন বরুণ চক্রবর্তী। নিজের প্রথম বলেই হেনড্রিক্সকে আউট করেন তিনি।

দক্ষিণ আফ্রিকাকে বড় রানের পথে নিয়ে যান ডি’কক ও অধিনায়ক এডেন মার্করাম। দুই সিনিয়র ক্রিকেটার দায়িত্ব নিয়ে খেলেন। মার্করাম শুরুতে কিছুটা সময় নেন। কিন্তু ডি’কক থামার নাম করছিলেন না। তাঁর চাপে খেই হারিয়ে ফেলেন অর্শদীপ। এক ওভারে সাতটি ওয়াইড করেন তিনি। তা দেখে ডাগ আউটে বসে থাকা গৌতম গম্ভীরও মেজাজ সামলাতে পারেননি।

অর্ধশতরানের পরেও আগ্রাসী খেলা চালিয়ে যান ডি’কক। মার্করামও হাত খুলছিলেন। ভারতকে খেলায় ফেরান সেই বরুণ। তাঁর এক ওভারে জোড়া ছক্কা মারলেও শেষ বলে আউট হন মার্করাম। ২৯ রান করেন তিনি। ভাঙে ৮৩ রানের জুটি। যে ম্যাচে ভারতের বাকি বোলারেরা হতাশ করলেন, সেখানে ভাল বল করলেন বরুণ।

দেখে মনে হচ্ছিল শতরান করবেন ডি’কক। কিন্তু সেই বরুণের ওভারেই ফেরেন তিনি। উইকেটের পিছনে দুর্দান্ত কাজ করেন জিতেশ শর্মা। বরুণের বল ডি’ককের ব্যাটে লেগে পিছন দিকে যায়। ডি’কক রান নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার মধ্যেই বল ধরে রান আউট করেন দেন জিতেশ। ৯০ রানে আউট হন ডি’কক।

কিন্তু বরুণ একা কী করবেন? বুমরাহ ও অর্শদীপ জঘন্য বল করলেন। অর্শদীপের ৪ ওভারে এল ৫৪ রান। বুমরাহ ৪ ওভারে দিলেন ৪৫। অর্থাৎ, ভারতের প্রধান দুই পেসার ৮ ওভারে ৯৯ রান দেন। একটিও উইকেট পাননি। শিশিরে বল ধরতে সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু তার পরেও টি-টোয়েন্টিতে ১০০-র বেশি উইকেট নেওয়া অর্শদীপ, বুমরাহদের কাছে এর থেকে ভাল পারফরম্যান্স আশা করাই যায়। প্রশ্ন উঠবে সূর্যের অধিনায়কত্ব নিয়েও। বুমরাহ ও অর্শদীপ লাইন-লেংথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তার পরেও তাঁদের দিয়ে পুরো ৪ ওভার করে বল করালেন তিনি। তাঁদের বদলে অক্ষর, শিবম, হার্দিকদের দিয়ে বল করাতে পারতেন তিনি। দেখে মনে হল, বোলিং পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোনও বিকল্প ভাবনা নেই সূর্যের।

২০ ওভারে ২২ রান অতিরিক্ত দেয় ভারত। তার মধ্যে ১৬ রান আসে ওয়াইডে। অর্থাৎ, প্রায় ৩ ওভার অতিরিক্ত বল করতে হয় ভারতকে। তার সুবিধা নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ দিকে অর্ধশতরানের জুটি গড়েন ডেভিড মিলার ও ডোনোভান ফেরেইরা। তাঁদের ব্যাটে ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ২১৩ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা।

দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস দেখে মনে হচ্ছিল, ভারতের ব্যাটারেরাও হাত খুলে খেলবেন। কাজটা শুরু করেছিলেন অভিষেক শর্মা। কিন্তু শুভমন আরও একটি ম্যাচে ব্যর্থ। মুল্লানপুরে শূন্য রানে ফেরেন তিনি। প্রথম বলেই খোঁচা মারেন। শুভমনকে ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে ফিরিয়েছেন গম্ভীর। করেছেন সহ-অধিনায়ক। কিন্তু ব্যাট হাতে তাঁর যা ফর্ম তাতে গম্ভীরের আরও একটি সিদ্ধান্ত না ব্যুমেরাং হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্বকাপেও যদি শুভমন এই ফর্মে থাকেন, তা হলে ভুগতে হবে গম্ভীরকে।

প্রথম দুই ওভারে জোড়া ছক্কা মারলেও বড় রান করতে পারেননি অভিষেক। মার্কো জানসেনের একটি দুর্দান্ত বলে ১৭ রান করে ফেরেন তিনি। কিছু করার ছিল না অভিষেকের। মিডল স্টাম্পে পড়ে বল যে ভাবে সুইং করেছিল, তাতে যে কোনও ব্যাটার আউট হতেন। অভিষেক ফর্মে রয়েছেন। এক, দু’টি ম্যাচে ব্যর্থ হতে পারেন। তবে সূর্যকুমারের হয়েছে কী? সহ-অধিনায়কের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খারাপ খেলছেন অধিনায়ক। এই ম্যাচেও ৫ রান করে জানসেনের বলে খোঁচা মেরে আউট হন তিনি। ৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত।

ব্যাটিং অর্ডারে আরও এক ম্যাচে অক্ষরকে আগে নামালেন গম্ভীর। এ বার তো তিন নম্বরে। যেখানে তিলক, হার্দিকেরা রয়েছেন সেখানে এই সিদ্ধান্তের মানে কী? অক্ষর নেমে ২১ বল খেলে ২১ রান করলেন। যেখানে শুরু থেকেই ওভার প্রতি ১০ রানের উপর চায়, সেখানে অক্ষরের ইনিংস চাপ আরও বাড়িয়ে দিল।

তিলক ভাল খেলছিলেন। শুরু থেকে হাত খুলে মারছিলেন। তিনি ছিলেন বলেই ভারতের ইনিংস এগোচ্ছিল। কিন্তু তিনি একাই কত ক্ষণ খেলবেন। হার্দিক যখন নামলেন তত ক্ষণে জরুরি রান রেট ওভার প্রতি ১৩ পেরিয়ে গিয়েছে। চাপ বাড়ছিল তাঁদের উপর। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারেরা দেখালেন, শিশির পড়লেও কী ভাবে বুদ্ধি করে বল করতে হয়। বলের লাইন-লেংথ ক্রমাগত বদলালেন তাঁরা। ভারতীয় ব্যাটারদের থিতু হওয়ার সুযোগ দিলেন না।

মুল্লানপুরের মাঠ আয়তনে বড়। ইচ্ছা করলেই ছক্কা মারা যায় না। বড় মাঠ কাজে লাগিয়ে দৌড়ে অনেক রান করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতীয় ব্যাটারেরা সেটা করতে পারলেন না। উল্টে বড় শট খেলার চেষ্টায় একের পর এক ব্যাটার উইকেট ছুড়ে এলেন। প্রতিটি বলের পরে জরুরি রান রেট বাড়ছিল। বোঝা যাচ্ছিল, খেলা ভারতের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। সেখান থেকে ম্যাচ জিততে হলে তিলক ও হার্দিককে আরও এক বার বিধ্বংসী ইনিংস খেলতে হত। কিন্তু প্রতি ম্যাচে তো আর তাঁরা বাঁচাবেন না। গম্ভীরের পছন্দে শুভমন, সূর্যেরা আর কবে রান করবেন?

আগের ম্যাচে হার্দিক ঝোড়ো ইনিংস খেললেও এই ম্যাচে পারলেন না। এক বার তাঁর ক্যাচ পড়লেও ২০ রানে ফিরলেন। লড়াই ছাড়েননি তিলক। অর্ধশতরান করেন তিনি। তাঁকে সঙ্গ দেন জিতেশ। অবশ্য ভাগ্যও এক বার সঙ্গ দেয় তাঁকে। বার্টম্যানের বল বেলে লাগলেও বেল পড়েনি। ফলে বেঁচে যান জিতেশ। নইলে হয়তো আরও আগেই ভারতেই লড়াই শেষ হয়ে যেত। শেষ পর্যন্ত ২৭ রানে আউট হন তিনি। তিলক যতই চেষ্টা করুন না কেন, খেলা তত ক্ষণে ভারতের হাতের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ১৯.১ ওভারে ১৬২ রানে শেষ হল ভারতের ইনিংস। ৬১ রান করলেন তিলক।

India vs South Africa 2025 Suryakumar Yadav
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy