শুরুটা ভাল করতে পারেনি ভারত। কিন্তু শেষটা ভাল করল তারা। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ় পকেটে পুরল ভারত। পুণেয় ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারালেন সূর্যকুমার যাদবেরা। ব্যাট হাতে দাপট দেখালেন হার্দিক পাণ্ড্য ও শিবম দুবে। বল হাতে স্পিনারের চমক দিলেন। এই ম্যাচে কনকাশন পরিবর্ত হিসাবে টি২০ অভিষেক হল হর্ষিত রানার। অভিষেকেই দলের জয়ে বড় ভূমিকা নিলেন তিনি। ৪ ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে হর্ষিত বুঝিয়ে দিলেন কেন তাঁর উপর এত ভরসা করেন কোচ গৌতম গম্ভীর। এই ম্যাচেও উইকেট নিলেন বরুণ চক্রবর্তী। শুরুতে চাপে পড়েও কেকেআরের দুই বোলারের দাপটে ম্যাচ জিতল ভারত। এই জয়ের ফলে মুম্বইয়ে সিরিজ়ের শেষ ম্যাচ নিয়মরক্ষার হয়ে দাঁড়াল।
সিরিজ়ে প্রথম টস হারলেন সূর্য
আগের তিনটি ম্যাচে টস জিতেছিলেন সূর্যকুমার। তিনটি ম্যাচেই প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পুণেয় টস হারলেন সূর্য। টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন জস বাটলার। সিরিজ়ে প্রথম বার আগে ব্যাট করে ভারত।
চমকের নাম সাকিব
এই ম্যাচে প্রথম বার খেললেন সাকিব মাহমুদ। তাঁকে আগে খেলেননি ভারতীয় ব্যাটারেরা। সেই সুযোগ নিলেন সাকিব। প্রথমে সঞ্জু স্যামসনকে আউট করেন তিনি। এই সিরিজ়ে বার বার একই বলে আউট হলেন সঞ্জু। তাঁর শরীর লক্ষ্য করে বল করেন সাকিব। বড় শট মারতে গিয়ে আউট হন তিনি। পরের বলেই ফর্মে থাকা তিলক বর্মাকে ফেরালেন সাকিব। তিলক এগিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে জোফ্রা আর্চারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। সেই ওভারের শেষ বলে অধিনায়ক সূর্যকে ফেরান সাকিব। তিলক ও সূর্য দু’জনেই শূন্য রানে আউট হন। ১২ রানে ৩ উইকেট পড়ে যায় ভারতের।
উইকেট ছুড়ে এলেন অভিষেক, রিঙ্কু
৩ উইকেট পড়ার পরে ইনিংস ধরেন অভিষেক শর্মা ও রিঙ্কু সিংহ। বড় শট খেলার পাশাপাশি সিঙ্গল, ডাবলসে রান এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা। ভারতের রান ৫০ পার করেন তাঁরা। দেখে মনে হচ্ছিল, এই দুই ব্যাটার দলকে বড় রানে নিয়ে যাবেন। ঠিক তখনই উইকেট ছুড়ে দিলেন তাঁরা। অকারণে বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হলেন। অভিষেক ২৯ ও রিঙ্কু ৩০ রানে আউট হন।
শিবম, হার্দিকের বিধ্বংসী ব্যাটিং
৭৯ রানে ৫ উইকেট পড়ে ভারতের। দেখে মনে হচ্ছিল, ১৫০ রানও করতে পারবে না ভারত। কিন্তু শিবম ও হার্দিক দেখালেন, তাঁরা কী করতে পারেন। উইকেট পড়লেও রান তোলার গতি কমতে দেননি তাঁরা। প্রায় প্রতি ওভারে বড় শট খেলছিলেন। স্পিনার, পেসার কাউকে রেয়াত করছিলেন না। প্রথমে হার্দিক ও তার পরে শিবম অর্ধশতরান করেন। হার্দিক ৩০ বলে ৫৩ রানে আউট হন। শিবম ৩৪ বলে ৫৩ রান করেন। তাঁদের ব্যাটেই ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৮১ রান করে ভারত।
আরও পড়ুন:
মারকুটে ব্যাটিং ইংল্যান্ডের দুই ওপেনারের
রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত করেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার ফিল সল্ট ও বেন ডাকেট। এই সিরিজ়ে তিনটি ম্যাচে রান পাননি সল্ট। এই ম্যাচে শুরু থেকে ভাল দেখাচ্ছিল তাঁকে। বেন ডাকেট আগের ম্যাচের ফর্মেই ব্যাট করছিলেন। নতুন বলে অর্শদীপ সিংহকে নিশানা করেন তাঁরা। তিনি রান দেওয়ায় চাপে পড়ে ভারত। পাওয়ার প্লে-র মধ্যে ৬০ রান পেরিয়ে যায় ইংল্যান্ডের।
স্পিনের দাপটে খেলায় ফেরে ভারত
ভারতকে খেলায় ফেরান স্পিনারেরা। খেলার গতির বিপরীতে আউট হন ডাকেট। রবি বিশ্নোইয়ের বলে বড় শট মারতে গিয়ে ৩৯ রানে আউট হন তিনি। পরের ওভারেই সল্টকে ২৩ রানের মাথায় বোল্ড করেন অক্ষর পটেল। তার পরের ওভারে ইংল্যান্ডকে বড় ধাক্কা দেন বিশ্নোই। ফর্মে থাকা অধিনায়ক বাটলারকে ২ রানে ফেরান তিনি। বিনা উইকেটে ৬২ রান থেকে ৬৭ রানে ৩ উইকেট পড়ে যায় ইংল্যান্ডের।
কনকাশন সাব হিসাবে অভিষেক হর্ষিতের
এই ম্যাচের প্রথম একাদশে ছিলেন না হর্ষিত রানা। কিন্তু তাঁকে খেলতে হল। ব্যাট করার সময় শেষ দিকে হেলমেটে বল লাগে শিবমের। ফলে তাঁর কনকাশন পরিবর্ত হিসাবে নামেন হর্ষিত। কনকাশন পরিবর্ত হওয়ায় বল করার সুযোগ ছিল তাঁর। নিজের দ্বিতীয় বলেই লিয়াম লিভিংস্টোনকে ফেরান তিনি। যদিও পরের ওভারে ১৮ রান দেন হর্ষিত। তার পরেও হর্ষিতের উপর ভরসা হারাননি সূর্য। পরের ওভারে জেকব বেথেলকে ফেরান তিনি। ডেথ ওভারে বল করেন হর্ষিত। ইংল্যান্ডের শেষ ভরসা ওভারটনকেও আউট করেন তিনি। ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন হর্ষিত।
অর্ধশতরান ব্রুকের
আগের তিনটি ম্যাচে রান না পেলেও এই ম্যাচে অর্ধশতরান করলেন হ্যারি ব্রুক। চাপের সময় দলকে টানেন তিনি। সিরিজ়ে ভারতের সেরা বোলার বরুণ চক্রবর্তীকে থিতু হওয়ার সুযোগ দেননি তিনি। হর্ষিতের এক ওভারে নেন ১৮ রান। বড় শট মারার পাশাপাশি দৌড়েও রান নিচ্ছিলেন তিনি। ২৫ বলে অর্ধশতরান করেন তিনি।
ভারতকে ফেরান বরুণ
প্রথম স্পেলে রান দিলেও ভারতকে ম্যাচে ফেরান সেই বরুণই। অর্ধশতরান করার পরে
বরুণের বলে উইকেটের পিছনে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ব্রুক। সেই ওভারেই ব্রাইডন
কার্সকেও আউট করেন বরুণ। এক ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে চাপে ফেলে দেন
বরুণ।
জিতে মাঠ ছাড়ল ভারত
অনেক চেষ্টা করেও ইংল্যান্ডের নীচের সারির ব্যাটারেরা দলকে জেতাতে পারলেন না। শেষ চার ওভার বল করলেন দুই পেসার অর্শদীপ ও হর্ষিত। তাঁরা দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন দু’বল বাকি থাকতে ১৬৬ রানে অল আউট হয়ে গেল ইংল্যান্ড। ম্য়াচ শেষে চওড়া হল কোচ গম্ভীরের মুখের হাসি।