Advertisement
E-Paper

মুখস্থবিদ্যেয় পরীক্ষা দিতে এসে ফার্স্ট বয়ের কাছে হার, শুভমনের গুজরাতের সামনে উড়ে গেল রাহানের কলকাতা

এ বারের আইপিএলের প্লে-অফে ওঠার আশা প্রায় শেষ হয়ে গেল কলকাতা নাইট রাইডার্সের। জঘন্য খেলার খেসারত দিল তারা। আরও একটি ম্যাচে জঘন্য অধিনায়কত্ব করলেন অজিঙ্ক রাহানে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:১৯
cricket

অজিঙ্ক রাহানে। —ফাইল চিত্র।

আরও একটা ম্যাচ হারল কলকাতা নাইট রাইডার্স। আরও একটা ম্যাচে স্পষ্ট হয়ে গেল একজন খারাপ অধিনায়ক থাকলে দলের কী হাল হয় আরও একটা ম্যাচে পরিষ্কার হয়ে গেল, পরিকল্পনা না করে দল তৈরি করলে কী হাল হয়। আসলে আইপিএলের নিলামেই এ বারের প্রতিযোগিতার ভাগ্য স্পষ্ট হয়েছিল কেকেআরের। একেবারে শেষ মুহূর্তে দলে নেওয়া অজিঙ্ক রাহানেকে অধিনায়ক করতে হয়েছিল। ২৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকায় বেঙ্কটেশ আয়ারকে কার বুদ্ধিতে কেকেআর কিনল তা আজও অজানা। ব্যাটে বলই লাগাতে পারেন না তিনি। আইপিএলের আগে যিনি অধিনায়ক হতে চেয়েছিলেন, সেই বেঙ্কটেশকে মাঠে চোখে পড়ে না। ঠিক তেমনই কিছু না করেও দিনের পর দিন খেলে যান আন্দ্রে রাসেল। বাকিদের অবস্থাও তথৈবচ। আগের কয়েকটি ম্যাচেই কেকেআরের কঙ্কালসার অবস্থা বেরিয়ে গিয়েছিল। গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে কফিনে শেষ পেরেক পোঁতা হয়ে গেল। শুভমন গিলদের কাছে হেরে এ বারের আইপিএল প্রায় শেষ হয়ে গেল কলকাতার। তবে যে ভাবে রাহানেরা খেলছেন তাতে এই দল যদি পয়েন্ট তালিকার একেবারে শেষে শেষ না করে তা হলে সেটাই হবে তাঁদের নৈতিক জয়।

বৈভব অরোরাকে দিয়ে বোলিং শুরু। পঞ্চম ওভারে হর্ষিত রানা। ষষ্ঠ ওভারে বরুণ চক্রবর্তী। ১২ বা ১৩তম ওভারে আন্দ্রে রাসেলকে দিয়ে এক ওভার করানো। ১৬তম ওভারে বরুণের স্পেল শেষ। ডেথ ওভারে হর্ষিত ও বৈভবকে দিয়ে শেষ করা। এই হল কলকাতা নাইট রাইডার্সের ২০ ওভারের ইতিবৃত্ত। বলা ভাল, এই হল রাহানের অধিনায়কত্বের সারসংক্ষেপ। না কোনও পরিকল্পনার বৈচিত্র, না মাঠে পরিস্থিতি অনুযায়ী কোনও সিদ্ধান্ত বদল। প্রতিপক্ষ গুজরাত টাইটান্সই হোক বা তালতলা ক্লাব— রাহানের এই বাঁধা ছকে কোনও বদল নেই। ভাল করে মুখস্থ করে নেমেছেন। মাঠে নেমে সেই ছকেই সব করছেন। যে অধিনায়কের অধিনায়কত্বে কোনও চমক নেই, সেই দলের খেলায় কী ভাবে চমক থাকবে? তার ফলে যা হওয়ার তা-ই হল। আরও একটা ম্যাচ হারল কলকাতা নাইট রাইডার্স।

ম্যাচ শুরুর আগে জানা গিয়েছিল, ইডেনের উইকেট শুষ্ক। সেই উইকেটে টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নিলেন রাহানে। অতিরিক্ত স্পিনার খেলালেন। কিন্তু প্রতিটি ম্যাচ যদি কোনও অধিনায়ক একই ছকে খেলেন তা হলে প্রতিপক্ষকে কী ভাবে সমস্যায় ফেলবেন তিনি? শুভমন গিল ও সাই সুদর্শন বুঝতে পারেন, এই উইকেটে প্রতি বলে চালানো যাবে না। ফলে তাঁরা দৌড়ে রান নেওয়ার নীতি নেন। প্রায় প্রতি বলে দৌড়ে রান নিচ্ছিলেন তাঁরা। সেই সময় রাহানের উচিত ছিল সিঙ্গল আটকানো। ৩০ গজ বৃত্তের মধ্যে বেশি ফিল্ডার রাখা। কিন্তু রাহানে তা না করে শুরু থেকে লং অন, লং অফে ফিল্ডার রাখলেন। ফলে আরাম করে স্কোরবোর্ড সচল রাখলেন দুই ব্যাটার। মাঝেমাঝে খারাপ বলে বড় শট মারলেন। ফলে কোনও চাপ পড়ল না শুভমন, সুদর্শনের উপর। সেখানেই খেলার রাশ বেরিয়ে গেল কলকাতার হাত থেকে।

যেখানে উইকেট থেকে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায় না, সেখানে বলের গতির হেরফের করতে হয়। এই কথাটা পাড়ার স্তরের বোলারও জানেন। হর্ষিত ছাড়া কাউকে দেখে মনে হল না, কোনও বৈচিত্রের চেষ্টা করছেন। বরুণ ও নারাইন ক্রমাগত শর্ট বল করে গেলেন। মাঝপিচে বল ফেললে যে কোনও ব্যাটারই তাতে বড় শট খেলবেন। শুভমন, সুদর্শন বা তিন নম্বরে নামা জস বাটলার সেটাই করে গেলেন।

গুজরাতের ব্যাটারদের আরও সুবিধা করে দিল কেকেআরের ফিল্ডিং। চোখে দেখা যায় না বৈভব, বেঙ্কটেশদের। বাটলারের দুটো ক্যাচ পড়ল। মণীশ পাণ্ডে যে ক্যাচটি ফেললেন সেটা কঠিন ছিল। কিন্তু বৈভব যেটা গলালেন তা ক্ষমার অযোগ্য। পাশাপাশি অবলীলায় যে ভাবে গুজরাতের ব্যাটারেরা দৌড়ে দু’রান নিলেন তাতে মনে হচ্ছিল, মাঠে ১১ জন ফিল্ডার রয়েছে তো! রাসেলকে তো এক বার গুনতেও দেখা গেল কত জন ফিল্ডার রয়েছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে গুজরাতের ফিল্ডিং দেখে শিক্ষা নেওয়া উচিত কেকেআরের। রশিদ খান, শাহরুখ খান, সুদর্শনেরা যে ভাবে প্রতি বলের জন্য ঝাঁপালেন তা দেখার মতো। জেতার কী অদম্য ইচ্ছা। কলকাতাকে দেখে মনে হল, জেতার ইচ্ছাই নেই। খেলতে হয় বলে খেলছে।

ব্যাটার রাহানেকে অবশ্য ততটা দোষ দেওয়া যায় না। তিনি বাদে এই দলে কোনও ব্যাটারও নেই। কুইন্টন ডি’ককের বদলে গুজরাতের বিরুদ্ধে খেলানো হয়েছিল রহমানুল্লা গুরবাজ়কে। তিনি সোজা বলে আউট হলেন। তাঁর চেয়ে ডি’কক যে কোনও দিন ভাল ক্রিকেটার। নারাইনের লাগলে তুক, না লাগলে তাক। তাঁকে আউট করার উপায় সব দল বুঝে গিয়েছে। বেঙ্কটেশকে দেখে মনে হয়, শুরু থেকেই ক্লান্ত। অনেক চেষ্টা করছেন। কিন্তু ব্যাটে-বলে হচ্ছে না। আইপিএলের মাঝে বেঙ্কটেশ বলেছিলেন, ২৩ কোটির বদলে ২৩ লক্ষ টাকা পেলেও তিনি একই ভাবে লড়াই করতেন। সত্যি, ২৩ লক্ষ টাকা দিলেই হয়তো ভাল হত। তা হলে অন্তত ভাল ক্রিকেটার নিতে পারত কেকেআর।

১৯৯ রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং প্রয়োজন। সেখানে পাওয়ার প্লে-তে যে ভাবে কেকেআর ব্যাট করল, তাতে অন্তত আর যা-ই হোক, ম্যাচ জেতা যায় না। একটা সময় টানা ৩৪ বল কোনও চার মারতে পারেনি কেকেআর। বলে যে কোনও জুজু ছিল তা-ও নয়। সোজা বলে উইকেট পড়েছে। আসলে বুদ্ধি কাজে লাগিয়েছে গুজরাত। তাদের কোচ আশিস নেহরা কখনও ডাগআউটে বসেন না। বাউন্ডারির ধারে ঘুরে বেড়ান। যখন যাঁকে দরকার, গিয়ে পরামর্শ দেন। ইডেনেও সেটা দেখা যাচ্ছিল। শুভমনের কানের কাছে অনেক কিছু বললেন। পরের ওভারেই নারাইন আউট হলেন। বোঝাই গেল, পুরোটাই পরিকল্পনার ফসল। অপর দিকে কেকেআরের প্রধান কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত ঠিক কী করেন তা অজানা। তাঁর কাজটা কী? সারা ক্ষণ হতাশ মুখে ডাগআউটে বসে থাকেন। কারও সঙ্গে কথাও বলেন না। দলটার আসলে কোনও অভিভাবকই নেই। অভিভাবকহীন দলের যে হাল হওয়া উচিত, তা-ই হচ্ছে কেকেআরের।

রান তাড়া করতে নেমে রাহানে খেলছিলেন। অন্তত চেষ্টা করছিলেন। অর্ধশতরানও করলেন। কিন্তু তার পরেই আউট হয়ে গেলেন। রাহানে বিধ্বংসী ব্যাটার নন। তিনি ভাল ইনিংস খেলবেন। কিন্তু একার কাঁধে ম্যাচ জেতাতে পারবেন না। এ বার কেকেআরে তেমন কোনও ব্যাটারই নেই, যিনি এই কাজটা করতে পারেন। সেখানেই সব দলের কাছে পিছিয়ে পড়ছে তারা। অঙ্গকৃশ রঘুবংশী প্রতি ম্যাচে রান করছিলেন। তাঁকে এই ম্যাচে ৯ নম্বরে নামাল কেকেআর। এই একটা সিদ্ধান্ত পরিষ্কার করে দেয় তাদের পরিকল্পনা কী। বেঙ্কটেশের বদলে রঘুবংশী নামলে হয়তো জিততেও পারত তারা। কিন্তু তাদের তো জেতার ইচ্ছাই নেই। প্রতি ম্যাচে সেটা আরও পরিষ্কার হচ্ছে।

কেকেআরের সবচেয়ে বড় শক্তি বরুণ ও নারাইন। দু’জন বিশ্বমানের স্পিনার। কিন্তু তাঁদের শিক্ষা নিতে হবে রশিদ খান, সাই কিশোর, ওয়াশিংটন সুন্দরদের কাছে। কী ভাবে শুকনো পিচ কাজে লাগাতে হয় তা দেখালেন গুজরাতের স্পিনারেরা। বলের গতি কম রাখলেন। ফলে বল পিচে পড়ে ঘুরল। তাতে উইকেটও এল। কিন্তু নারাইন, বরুণেরা ক্রমাগত যে গতিতে বল করে গেলেন, তাতে ব্যাটারদের কোনও সমস্যা হল না। বোলারদের পরিকল্পনায় সাহায্য করেন অধিনায়ক। কিন্তু গোটা ম্যাচে রাহানের অধিনায়কত্ব দেখে মনে হল, কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। চাপে রয়েছেন। ফলে আরও বেশি ভুল করছেন। নৌকার মাঝিরই যদি এই হাল হয়, তা হলে সেই নৌকা কী ভাবে এগোবে? উত্তাল সমুদ্রে সে তো ডুবে যাবে। সেটাই হচ্ছে কেকেআরের সঙ্গে।

ম্যাচ হারলেও প্রতিটা দল চেষ্টা করে সেখান থেকে ইতিবাচক কিছু পেতে। থাকেও। কিন্তু কেকেআরের এই খেলায় ইতিবাচক কিছুই নেই। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধুই হতাশা। যে রশিদ প্রতি ম্যাচে রান দিচ্ছিলেন, সেই রশিদকেও ফর্মে ফিরিয়ে দিল কেকেআর। এত খারাপ খেলার পরেও মাঠ ভরাচ্ছেন সমর্থকেরা। কিন্তু তাঁদের কোনও আনন্দ দিতে পারছে না কলকাতা। প্রতিটি ম্যাচে হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হচ্ছে। এই ম্যাচের পর চলতি মরসুমে কেকেআরের কাছে কিছু আশা করা উচিত নয়। প্রত্যেক নাইট সমর্থক এখন চাইছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মরসুম শেষ হোক। এই করুণ দশা যাতে আর দেখতে না হয়। আরও এক বার কেকে-হার হয়ে উঠেছে দল। তার নেপথ্যে বড় ভূমিকা রাহানের। তাঁকে বুঝতে হবে, শুধু পিচের দোষ দিলে হবে না, ম্যাচ জিততে গেলে ভাল খেলতে হবে। সেটাই তো ভুলে গিয়েছেন তাঁরা।

Ajinkya Rahane Kolkata Knight Riders
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy