২৬ বছর বয়সে টেনিস বলে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন। এখন তিনি ৩৪। এর মধ্যেই নিজেকে টি-টোয়েন্টির অন্যতম সেরা বোলার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ভারতের সংক্ষিপ্ত ওভারের দলে তাঁর জায়গা পাকা। সেই বরুণ চক্রবর্তী জীবনের নানা কথা তুলে ধরলেন এক সাক্ষাৎকারে। সেখানে তাঁর ক্রিকেটে আসা, তার আগের জীবন নিয়ে বিভিন্ন কথা বলেছেন।
ইউটিউবে ‘ব্রেকফাস্ট উইথ চ্যাম্পিয়ন্স’-এ সঞ্চালক গৌরব কপূর শুরুতেই এশিয়া কাপের প্রসঙ্গ তুলে আনেন। উঠে আসে ফাইনালের পর কফি কাপ নিয়ে ছবি পোস্ট করার প্রসঙ্গও। হাসতে হাসতে বরুণ বলেন, “আমি জানতাম যে, দল জিতবে। দ্বিতীয় ম্যাচ জেতার পরেই বুঝেছিলাম যদি ফাইনালে পাকিস্তানের সঙ্গে দেখা হয় সেখানেও আমরা জিতব।”
বরুণ জানিয়েছেন, কাপ নিয়ে শুয়ে থাকার উৎসব তাঁর আগে থেকেই পরিকল্পনা করা ছিল। তাঁর কথায়, “আমি আগে থেকেই সব ভেবে রেখেছিলাম। ঠিক করেছিলাম ঘুমোব এবং তার পাশে ট্রফি নিয়ে ছবি তুলে পোস্ট করব। ম্যাচের পর আমাদের সামনে কিছুই ছিল না। একটা কফি কাপ ছিল ঘরে। সেটা নিয়েই ছবি তুলেছি। আসলে আমরা জানতাম সব ম্যাচ জিতব। কারণ আমরাই বিশ্বের এক নম্বর দল। ট্রফি নিয়ে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন আমরাই।”
বরুণ পড়াশোনা করেছেন স্থাপত্যশিল্প নিয়ে। ক্রিকেটে আসার ইচ্ছা কোনও দিনই ছিল না। সে কারণে স্কুলজীবনে ক্রিকেট খেললেও পড়াশোনায় মন দিতে এক সময় তা ছেড়ে দেন। তবে স্থাপত্যশিল্পে বেশ কয়েক বছর কাজ করলেও সেখানে বেতন ভাল পেতেন না। নিজের সংস্থা খোলেন। সেখানেও ধাক্কা খেতে হয়। এ ছাড়া তিনি ভিডিয়ো এডিটিং, মিক্সিং, গিটার বিভিন্ন জিনিস শিখেছেন।
২৪ বছর বয়সের পর সিনেমার দিকে ঝোঁকেন। মণিরত্নম, রাজামৌলির সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। নিজে এখনও পর্যন্ত তিনটি ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন। সিনেমায় ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয় করাও হয়ে গিয়েছে। লিখতে খুবই ভালবাসেন। তাই আগামী দিনেও নিয়মিত লেখালিখির কাজ চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। এক কথায়, ক্রিকেট মাঠের বাইরে বরুণের জীবন আদ্যোপান্ত ‘অলরাউন্ডার’-এর মতোই।
২৬ বছর বয়স থেকে ক্রিকেটে মন দেন বরুণ। শুরুতে টেনিস বল খেলতেন। অত বেশি বয়সে কোনও অ্যাকাডেমিতে ভর্তি নিতে চায়নি। তাই ইউটিউবে সুনীল নারাইন, শাহিদ আফ্রিদি, হরভজন সিংহদের বোলিংয়ের ভিডিয়ো ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেখে বোলিং শিখেছিলেন বরুণ। ধীরে ধীরে চামড়ার বলে ক্রিকেট খেলা শুরু। সেখানেও সহজে ঠাঁই মেলেনি। চেন্নাইয়ের ক্রিকেটকর্তা টিএস মোহনকে ফোন করলেও তিনি বিশেষ আমল দেননি। এই সময় বরুণকে প্রভূত সাহায্য করেন দীনেশ কার্তিক। তিনিই কেকেআরে ট্রায়ালের ব্যবস্থা করে দেন। পরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন অভিষেক নায়ার। কেকেআরে আসা, ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া এবং নিজেকে এক নম্বর বোলার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে তোলা এঁদের দু’জনকে ছাড়া হত না বলে জানিয়েছেন বরুণ।
ক্রিকেট খেলায় এতটাই মোহিত হয়ে পড়েন যে, বল ছাড়া থাকতেই পারেন না। নিজেই হাসতে হাসতে বলেছেন, “ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে এখানে বল নিয়ে আসিনি। বিয়ের রিসেপশনে অজানতেই হাতে একটা বল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলাম। বুঝতেই পারিনি। পরে সবাই বলায় ওটা ভাইয়ের হাতে দিয়ে দিই। আপনার সঙ্গে যেখানেই দেখা হোক, আমার হাতে একটা বল দেখতে পাবেন। আমার শরীরের অংশই হয়ে গিয়েছে এটা। যদি শরীরের সঙ্গে বলের স্পর্শ না হয়, আমার মধ্যে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে।”
টি-টোয়েন্টির সেরা বোলার হলেও তিন জন ব্যাটারকে বল করতে ভয় পাবেন বলে জানিয়েছেন বরুণ। তাঁর কথায়, “ক্রিস গেল, বিরাট এবং এখনকার মধ্যে, অভিষেক শর্মা। অভিষেককে পরের বার বলবেন বোলাদের যেন একটু দয়া দেখায়। ভারতের হয়ে ও ভাবে ব্যাট করুক, হায়দরাবাদের হয়ে যেন না করে।”
আরও পড়ুন:
ক্রিকেট খেললেও অন্য খেলার প্রতি আগ্রহ রয়েছে বরুণের। বলেছেন, “আমি দাবার খবর রাখি এখন। গুকেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর বলেছিল, আমি এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারি। কিন্তু এক নম্বর হল ম্যাগনাস কার্লসেন। আমিও বলছি, এখন বিশ্বের সেরা বোলার হতে পারি, কিন্তু এক নম্বর জসপ্রীত বুমরাহই।”
ভারতীয় দলে অনেক মজার চরিত্র থাকলেও তিনি তাঁদের মতো নন। সারা ক্ষণ হইচই করতে ভালবাসেন না। বরুণের দাবি, “আমি বরাবরই লাজুক। অর্শদীপ বা অভিষেক নায়ারের মতো নই। দুমদাম জোক্স বলতে পারি না। অনুশীলনের পর ঘরে গিয়ে নিজেকে কিছু ক্ষণ ক্রিকেট থেকে দূরে রাখি। লেখালেখি করি। ওটা করলে নিজের ভেতরের সবটা বেরিয়ে আসে। দিনের শেষে ভুলে যাই যে আমি একজন ক্রিকেটার এবং পরের দিন আমার ম্যাচ রয়েছে।”