(বাঁ দিকে) বিরাট কোহলি এবং গৌতম গম্ভীর। ছবি: পিটিআই।
বিরাট কোহলি এবং গৌতম গম্ভীরের সম্পর্ক যে কিছু দিন আগেও তলানিতে এসে ঠেকেছিল, সকলের জানা। আইপিএলের সময় দু’জনের ঝামেলা প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। এর পর গম্ভীর ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার পর থেকে একটাই প্রশ্ন বার বার উঠেছে— ভারতীয় দলের সাজঘরের পরিবেশ ঠিক থাকবে তো? কোহলি-গম্ভীর খটাখটি লাগবে না তো?
হয়তো অতীতের কথা ভেবেই সতর্ক দু’জনে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডও সচেতন। এক টেবিলে বসিয়ে দিয়েছে দু’জনকে। সেখানে কোহলিকে দেখা গিয়েছে গৌতম গম্ভীরের সাক্ষাৎকার নিতে। এ বার অন্য একটি সাক্ষাৎকারে কোহলির প্রশংসা করলেন গম্ভীর। এই প্রশংসার বহর এতটাই যে, মনে করা হচ্ছে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এ নেমেছেন দু’জনে।
কোহলির লাল বলের ক্রিকেটে ফেরার কথা বলতে গিয়ে গম্ভীর জানিয়েছেন, বিরাটের মতো খিদে বিশ্বের আর কোনও ক্রিকেটারের মধ্যে দেখেননি তিনি। ঘটনা হল, কোহলির শেষ শতরান এসেছে গত বছর নভেম্বরে। নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক দিনের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ১১৭ রান করেছিলেন। তার পর থেকে টেস্ট, এক দিনের ম্যাচ এবং টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ১৮টি ইনিংসে কোহলির রান ৪৬৪। গড় মাত্র ২৫.৭৭। এর পরেও গম্ভীর বলেছেন, “খেলার প্রতি বিরাটের খিদে বিশ্বের সবার সেরা। নেট বা জিমে ওর অনুশীলন উদাহরণযোগ্য। মানসিক ভাবে কোহলি যদি সেরা জায়গায় থাকে তা হলে আপনারা জানেন ও কী করতে পারে।”
রানের খিদেয় এই মুহূর্তে কোহলিকে কী করে বিশ্বের সেরা বাছলেন গম্ভীর, অন্য একটি পরিসংখ্যানের বিচারেও তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। এখন টেস্ট ক্রিকেটে কোহলি, জো রুট, কেন উইলিয়ামসন ও স্টিভ স্মিথ, এই চার ব্যাটারের (ফ্যাব ফোর) মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই চলছে। গত চার বছরে মাত্র দু’টি শতরান করে ‘ফ্যাব ফোর’এর তালিকায় শতরানের বিচারে এক থেকে চার নম্বরে চলে গিয়েছেন কোহলি। আর চার বছর আগে চার নম্বরে থাকা রুট এখন এক নম্বরে।
২০২০ সালে টেস্টে বিরাটের শতরান ছিল ২৭টি। স্মিথ ছিলেন দ্বিতীয় স্থানে (২৬)। উইলিয়ামসন ছিলেন তৃতীয় স্থানে (২১)। ‘ফ্যাব ফোর’এর মধ্যে সকলের পিছনে ছিলেন রুট। তিনি ১৭টি শতরান করেছিলেন। চার বছরে এই তালিকা উল্টে গিয়েছে। ৩৩টি শতরান করে শীর্ষে এখন রুট। দ্বিতীয় স্থানে যুগ্ম ভাবে উইলিয়ামসন এবং স্মিথ। তাঁদের দু’জনেরই শতরানের সংখ্যা ৩২। আর সকলের পিছনে কোহলি। টেস্টে তাঁর শতরানের সংখ্যা এখন ২৯।
অর্থাৎ, কোহলি গত চার বছরে টেস্টে মাত্র দু’টি শতরান করেছেন। রুট করেছেন ১৬টি শতরান। উইলিয়ামসন করেছেন ১১টি শতরান। স্মিথ করেছেন ছ’টি শতরান। চার বছরে কি তা হলে কোহলি ব্যর্থ? পরিসংখ্যান তেমনই ইঙ্গিত করছে। কারণ, এই চার বছরে তাঁর গড় ৩৩.৫৯। ২৯টি টেস্টে তিনি করেছেন ১৬৪৬ রান।
বাকি তিন জন অনেকটাই এগিয়ে। রুট গত চার বছরে ৫৬টি টেস্টে ৪৯১৫ রান করেছেন। তাঁর গড় ৫৪.৬১। উইলিয়ামসন ২২টি টেস্টে ২৩৬৪ রান করেছেন। তাঁর গড় ৬৭.৫৪। স্মিথ ৩৭টি টেস্টে ২৫২১ রান করেছেন। গড় ৪৫.০১। অর্থাৎ, ‘ফ্যাব ফোর’এর তালিকায় থাকা চার জনের মধ্যে রান, গড় এবং শতরান, সবেতেই এখন পিছিয়ে কোহলি।
কিন্তু গম্ভীরের সংযোজন, “এত বছর ধরে সেই কাজ কোহলি করে এসেছে। বাংলাদেশ সিরিজ়ে ওর প্রস্তুতি এবং অস্ট্রেলিয়া সিরিজ় নিয়ে ওর মানসিকতা গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। কোহলি, অশ্বিন এবং জাডেজা এখনও সাফল্যের প্রতি ক্ষুধার্ত। ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য এটা ভাল। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে একটা উদাহরণ রেখে যাচ্ছে ওরা।”
প্রতিভা, যোগ্যতা এবং মানের দিক থেকে এই চার ক্রিকেটারকে আলাদা করা সম্ভব নয়। কিন্তু দিনের শেষে পরিসংখ্যানই থেকে যায়। বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এই চার ক্রিকেটার সমমানের। তাঁদের আলাদা করা মুশকিল। কিন্তু বিরাট যখন সেরা ফর্মে ছিল, তখন ও পর পর শতরান করেছিল। সেটা এখন হচ্ছে না। আর এত দিন বিরাট তিন ধরনের ক্রিকেটই খেলছিল, সেখানে রুট শুধু টেস্ট খেলে। টি-টোয়েন্টি থেকে এখন অবসর নিয়েছে বিরাট। সেটা মনে হয় আগামী দিনে বিরাটকে টেস্টে বেশি মনোযোগ দিতে সাহায্য করবে।”
প্রায় একই সুর সাবা করিমের গলাতেও। ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার মনে করেন, “বিরাট খুবই পরিশ্রমী। ও অনুশীলনে নিজেকে উজাড় করে দেয়। কিন্তু গত চার বছরের মধ্যে বিরাটের একটা সময় ছন্দ পাচ্ছিল না। সেই সময় কোনও ধরনের ক্রিকেটেই রান পায়নি ও। যা বাকিদের থেকে বিরাটকে একটু পিছিয়ে দিয়েছে। এমনটা হতেই পারে। ও কিন্তু সব ধরনের মাঠে রান করেছে। ফলে যোগ্যতায় বাকিদের থেকে ওকে পিছিয়ে রাখা যাবে না। এখন বিরাট টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছে। টেস্টে বেশি সময় দেওয়ার সুযোগ পাবে। আশা করি আগামী দিনে যে টেস্ট সিরিজ়গুলো রয়েছে, সেখানে শতরান পাবে বিরাট।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy