Advertisement
E-Paper

ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস ছলচাতুরি, রাজনীতির হাওয়াই দিদির রাজ্য থেকে আইপিএল ফাইনাল নিয়ে গিয়ে ফেলছে মোদীর রাজ্যে!

এ বারের আইপিএল ফাইনাল কলকাতা থেকে অহমদাবাদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া নাকি প্রায় পাকা। কেন প্রথা ভেঙে এই পদক্ষেপ করছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড? শুধু বৃষ্টির পূর্বাভাসই কারণ?

West Bengal CM Mamata Banerjee and PM Narendra Modi

(বাঁ দিকে) পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২৫ ১৮:৩৫
Share
Save

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে কি কোনও আবহাওয়াবিদ আছেন? হয়তো আছেন। নইলে বিসিসিআই কী করে প্রায় তিন সপ্তাহ আগে জেনে গিয়েছে ৩ জুন কলকাতায় বৃষ্টি হবে? সঙ্গে ঝড়ও! সেই ‘পূর্বাভাস’-এর প্রেক্ষিতেই ওই দিনের আইপিএল ফাইনাল ইডেন থেকে সরিয়ে অহমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যত নিয়েই ফেলেছে বোর্ড। যদিও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও হয়নি।

ইদানীং অন্তরীক্ষে স্থাপিত আধুনিক উপগ্রহের সুবাদে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি অনেকটাই নিখুঁত ভাবে আগে থেকে বলা যায়। কিন্তু তা বলা যায় সাত দিন আগে। অন্তত আলিপুরের আবহাওয়া দফতরের তেমনই বক্তব্য। কোনও শহরের ক্ষেত্রেই ‘দীর্ঘকালীন পূর্বাভাস’ দেওয়া যায় না। খুব প্রয়োজনে আঞ্চলিক পূর্বাভাস দেওয়া হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ইন্ডিয়া মেটিওরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট’ ছ’দিনের পূর্বাভাস দেয়। কিন্তু ভারতীয় বোর্ডের কাছে এখনই ‘খবর’— আগামী ৩ জুন কলকাতায় বৃষ্টির সম্ভাবনা ৬৫ শতাংশ। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই ‘খবর’-এর উৎস আমেরিকার একটি বেসরকারি অ্যাপ। তাদের উপর ভিত্তি করেই বোর্ড কলকাতা থেকে আইপিএল ফাইনাল সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো বড় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে চলেছে। অথচ, ৩ জুন আইপিএল ফাইনাল হতে এখনও বাকি ১৮ দিন!

চলতি বছরের আইপিএল শুরুর সময়ে যে সূচি তৈরি হয়েছিল, তাতে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ও ফাইনাল দেওয়া হয়েছিল ইডেনে। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের তারিখ ছিল ২৩ মে। ফাইনাল ২৫ মে। কেন ফাইনাল কলকাতায়? কারণ, কেকেআর গত বারের চ্যাম্পিয়ন। প্রথা অনুযায়ী উদ্বোধনী ম্যাচ এবং ফাইনাল গত বারের চ্যাম্পিয়নের ঘরের মাঠেই হয়। দ্বিতীয়ত, ফাইনাল এবং দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের মধ্যে দিনের ব্যবধান প্রায় না-থাকায় দু’টি ম্যাচ একই মাঠে হয়। সেই হিসেবেও ফাইনাল এবং দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ইডেনে হওয়ার কথা।

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের কারণে আইপিএল কয়েক দিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল বোর্ডকে। ফলে বাকি ম্যাচের জন্য নতুন সূচি তৈরি করতে হয়েছে। গত ১৩ মে আইপিএলের পরিবর্তিত সূচিতে বলা হয়েছিল, প্লে-অফ এবং ফাইনাল-সহ বাকি ১৭টি ম্যাচ ছ’টি কেন্দ্রে হবে। বোর্ডের বিবৃতিতে ছ’টি শহরের নামও জানিয়ে দেওয়া হয়। সেগুলি হল বেঙ্গালুরু, জয়পুর, দিল্লি, লখনউ, মুম্বই এবং অহমদাবাদ। ওই বিবৃতিতে এ-ও বলা হয়েছিল যে, প্লে-অফের তিনটি ম্যাচ এবং ফাইনাল ম্যাচ কোন মাঠে হবে, তা পরে জানানো হবে।

ওইখানেই ‘খেলা’ হয়েছে বলে বাংলার ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত লোকজন এবং পশ্চিমবঙ্গের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা সিএবি মনে করছে। সংস্থার এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘এটা তো পরিষ্কার বলেই দেওয়া হয়েছে যে, ছ’টি জায়গায় বাকি সব ম্যাচ হবে। সেখানে তো কলকাতার নাম নেই! চালাকি করার জন্য প্লে-অফ এবং ফাইনালের মাঠের নাম পরে জানানো হবে বলা হয়েছে। এটা ভাঁওতা ছাড়া আর কী!’’ যদিও বঙ্গ ক্রিকেটের একটি অংশ এখনও ইডেন নিয়ে আশাবাদী। মূলত ওই অংশের উদ্যোগেই সিএবি আইপিএল ফাইনাল নিয়ে চিঠি দিয়েছে বোর্ডকে।

আইপিএল ফাইনাল স্থানান্তরণের নেপথ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ রাজনীতির লড়াইও বড় ভূমিকা নিয়েছে। ভারত-পাক সংঘাতে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে দাঁড়ালেও মোদী-দিদির রাজনৈতিক সম্পর্ক সুবিদিত। সেই কারণেই সুযোগ পাওয়া মাত্রই আইপিএল ফাইনালের মতো ‘ইভেন্ট’ কলকাতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অনেকের বক্তব্য। এর মধ্যে ‘অনুঘটক’ হিসেবে অনেকে অমিত-তনয় জয় শাহকেও দেখতে পাচ্ছেন। প্রাক্তন বোর্ড সভাপতি জয় এখন আইসিসি-র চেয়ারম্যান। দেশের ক্রিকেট প্রশাসনে অমিত শক্তিধর। সেই সূত্রেই প্রশ্ন উঠেছে অহমদাবাদ নিয়ে। আবহাওয়ার কারণে ম্যাচ যদি ইডেন থেকে সরাতেই হয়, তা হলে অহমদাবাদে কেন? মুম্বইয়ে কেন নয়? মুম্বইয়ে বোর্ডের সদর দফতর। ওয়াংখেড়েতে বিশ্বকাপ ফাইনাল (২০১১) এবং আইপিএল ফাইনাল হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। দ্বিতীয়ত, মুম্বই ‘ক্রিকেটের শহর।’

সেই সূত্রেই অনেকে মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত কলকাতা থেকে ফাইনাল (এবং দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার) সরিয়ে অহমদাবাদে নিয়ে যাওয়া হলে তার নেপথ্যে ঝড়-বৃষ্টি নয়, ‘রাজনীতির হাওয়া’ থাকবে। প্রথমত, অহমদাবাদ মোদী-শাহের রাজ্য। দ্বিতীয়ত, স্টেডিয়ামের নাম স্বয়ং নরেন্দ্র মোদীর নামে। ঘটনাচক্রে, ওই স্টেডিয়াম এশিয়ার বৃহত্তম ‘ক্রিকেট স্টেডিয়াম’। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের চেয়েও ওই স্টেডিয়ামের দর্শকসংখ্যা অনেক বেশি (১ লক্ষ ৩২ হাজার আসন)। কিন্তু সেখানে ক্রিকেট ছাড়া অন্য কোনও খেলা হতে পারে না। ঠিক যে কারণে ওই স্টেডিয়ামের ‘যথাযথ’ ব্যবহার হওয়া কঠিন। কারণ, ওই বিপুল পরিমাণ দর্শক টানতে হলে সেই পর্যায়ের ম্যাচের আয়োজনও করতে হবে। যেমন করা হয়েছিল গত বিশ্বকাপে। গোটা টুর্নামেন্টের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ দু’টি ম্যাচ ভারত বনাম পাকিস্তান এবং ফাইনাল হয়েছিল ওই স্টেডিয়ামে।

তা বাদ দিলে আইপিএলে গুজরাত টাইটান্সের সাতটি ‘হোম ম্যাচ’ ছাড়া আর কোনও খেলা সেখানে হয় না। এমনকি, রঞ্জি ট্রফির ম্যাচও হয় ‘নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম এ গ্রাউন্ড’ এবং ‘নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম বি গ্রাউন্ড’-এ। স্বাভাবিক। এমন দৈত্যাকার স্টেডিয়ামে ম্যাচ আয়োজনের পরিকাঠামো সংক্রান্ত খরচও কম নয়। কিন্তু স্টেডিয়াম তো হয়ে গিয়েছে। তার ‘কার্যকারিতা’ না দেখালে সমালোচনার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, এর আগে দু’টি আইপিএল ফাইনাল অহমদাবাদে হয়েছে। ২০২২ এবং ২০২৩। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই ‘প্রথা’ ভাঙা হয়নি। ২০২২ সালে কোভিডের জন্য দেশের সর্বত্র আইপিএলের ম্যাচ দেওয়া হয়নি। তাই ২০২১ সালের চ্যাম্পিয়ন হলেও ২০২২ সালে চেন্নাই ফাইনাল আয়োজন করতে পারেনি। ঘটনাচক্রে, সেই ফাইনাল হয়েছিল এই স্টেডিয়ামেই। আবার সে বছর গুজরাত চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় পরের বছর ২০২৩ সালের ফাইনালও হয়েছিল অহমদাবাদে।

বঙ্গ ক্রিকেটের একটি অংশ অবশ্য এখনও ‘আশাবাদী’। একটি সূত্রের দাবি, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ইডেনে ফাইনাল করানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন। তাঁর চেষ্টাতেই আইপিএলে নাইটদের একটি ম্যাচ গুয়াহাটি গিয়েও আবার দিন পাল্টে ফিরেছিল ইডেনে। এখন দেখার, ফাইনালের জন্য ‘দাদা’ দিদির হয়ে ব্যাট ধরেন কি না। ধরলেও রান আসে কি না।

Eden Gardens Narendra Modi Stadium

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।