—ফাইল চিত্র।
মোহনবাগানে তাঁর খেলার কথাই ছিল না এ মরসুমে। কিন্তু এখন তাঁর পারফরম্যান্সের গ্রাফ এতটাই ঊর্ধ্বমুখী যে বুধবারের ডার্বিতে যদি তাঁর দল খেলে তা হলে তিনি-ই হবেন বাগান সমর্থকদের আশার সলতে। জেতানোর বারুদ।
ডার্বি নির্দিষ্ট দিনে হচ্ছে শোনার পর শনিবার ড্যানিয়েল বিদেমির মুখ থেকে বেরিয়েছে, ‘‘প্রথম ডার্বি খেলব। গোল করে ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখতে চাই। লিগ পেতে হলে ম্যাচটা জিততে হবেই।’’ কিন্তু যাঁর গলায় ডার্বির চার দিন আগে এই প্রতিজ্ঞা, সেই ড্যানিয়েল বিদেমির তো এ বার বাগানের জার্সি পরে খেলার কথাই ছিল না। যদি না আর এক ড্যানিয়েল মোহনবাগানের সঙ্গে চুক্তি ভেঙে চলে না যেতেন। ড্যানিয়েল সিবর্ন বিদেশি ক্লাবের প্রস্তাব পেয়ে চলে যাওয়ায় বাগান কর্তারা কলকাতা লিগের জন্য বিদেমিকে তড়িঘড়ি সই করান। অনেক দিনের চেনা বলে। আক্রমণে শক্তি বাড়াতে।
প্রায় নয় বছর ভারতে খেলে ফেলেছেন বিদেমি। ময়দানের ঘাস আর আবহ তাঁর চেনা। কলকাতার মহমেডান, ইউনাইটেড স্পোর্টস, ভবানীপুর, পোর্ট ট্রাস্টে তাঁর ইতিমধ্যে খেলা হয়ে গিয়েছে। খেলেছেন গোয়া, শিলংয়েও। কিন্তু কোনও দিন ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগানে খেলার সুযোগ পাননি বলে বিদেমির ডার্বি খেলাও হয়নি। গ্যালারিতে বসে অবশ্য বহু বার ম্যাচটি দেখেছেন। সে সময় তিনি ভাবতেন, কবে এই রকম একটা উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে নিজে নামবেন। এ বার সেই সুযোগ তাঁর সামনে। তাই নিজেকে প্রমাণে তিনি মরিয়া।
সব কিছু ঠিকঠাক চললে সবুজ-মেরুন জার্সি পরে ডার্বিতে বুধবার অভিষেক হওয়ার কথা বছর আঠাশের এই নাইজিরিয়ানের। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত তিনি নিশ্চিত ছিলেন না ৭ তারিখের ডার্বি হওয়ার ব্যাপারে! ভেতরের উত্তেজনা গোপন করতে পারেননি বিদেমি। হয়তো সেই চেষ্টাও করেননি। তিনি বলছিলেন, ‘‘বহু দিন মোহনবাগান কলকাতা লিগ পায়নি। চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে এই ম্যাচটা জিততেই হবে আমাদের। ইস্টবেঙ্গলকে ডার্বিতে হারাতে হবে। তিন পয়েন্ট আমাদের চাই-ই। আমি মানসিক ভাবে তৈরি।’’
ডু ডংয়ের মতো ফুটবলার রয়েছে ইস্টবেঙ্গলে। গত বছর যিনি কলকাতা লিগের ডার্বিতে মোহনবাগানকে কোণঠাসা করে দিয়েছিলেন। রক্ষণে আবার অর্ণব মণ্ডল, নারায়ণ দাসদের মতো ভারতের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডাররা রয়েছেন। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল নিয়ে ভাবতে রাজি নন বিদেমি। লাল-হলুদকে ভাল টিম বললেও তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘ডার্বির পরই দেখা যাবে কোন দল সেরা— ওরা না আমরা। আমাদের টিম কিন্তু ভাল ফর্মে রয়েছে।’’
বিদেমির নেপালি স্ত্রী সুপ্রভা এই মুহূর্তে নাইজিরিয়াতে রয়েছেন। ইউনাইটেড সিকিমে খেলার সময়ে সুপ্রভার সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। তার পর বিয়ে। নাইজিরিয়া থেকে সুপ্রভা প্রতি মুহূর্তে উৎসাহিত করে চলেছেন বিদেমিকে। নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার বলছিলেন, ‘‘সুপ্রভা আমাকে নানা পরামর্শ দেয়। সব সময় উৎসাহিত করে। যদি গোল পাই তবে সেটা আমার বউ আর চার বছরের ছেলে অভিষেককে উৎসর্গ করব।’’
আই লিগে হয়তো তাঁকে রাখবে না মোহনবাগান। তখন চলে আসবেন সনি নর্ডি। সে কথা ভাল করেই জানেন বিদেমি নিজেও। আর সে জন্যই নিজের সেরাটা দিতে চান তিনি। চোখে পড়তে চান সবার। আর নিজেকে প্রমাণ করার সবচেয়ে বড় মঞ্চ ডার্বি ছাড়া অন্য কী বা হতে পারে! ইউনাইটেড ম্যাচে জোড়া গোল পাওয়ার পর সোনালি চুলের ফুটবলারটির আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। কর্তারা শেষ পর্যন্ত কী করবেন তা নিয়ে ভাবতে চান না। বুধবারের ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে নামতে হবে ভেবে এখন গান শুনে, সিনেমা দেখে নিজের মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন তিনি। বলছিলেন, ‘‘যখন কোনও কিছুতে বেশি মনঃসংযোগ করতে হয় আমি গান শুনি। সিনেমাও দেখি। ফাঁকা সময়ে এগুলোই আমার সঙ্গী। ডার্বি হাইপ্রোফাইল ম্যাচ। দারুণ উত্তেজনা তৈরি হয় এই ম্যাচকে ঘিরে। সে জন্য নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকতে মনকে সবার আগে শান্ত রাখা উচিত।’’
সতীর্থ ডাফির প্রশংসা বারবার করছিলেন বিদেমি। বলছিলেন, ‘‘ওর সঙ্গে আমার একটা সমঝোতা হয়ে গিয়েছে। এ বার ডার্বিতে সেটা কাজে লাগাতে হবে।’’ কথা শুনে মনে হল ডাফির পাসে বিদেমির গোল—এই স্বপ্ন নিয়ে বুধবার কল্যাণীর মাঠে পা রাখবেন বাগানের নতুন আগুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy