Advertisement
১১ মে ২০২৪

হারের থেকেও ভয়ের, টিমটাকে মাঝেমাঝে ছন্নছাড়া দেখানো

রোহিত শর্মাকে ম্যাচের পর দেখে খারাপই লাগছিল। চুপচাপ হয়ে ঘুরছে। বিশেষ কথা-টথা কারও সঙ্গে বলছে না। টিভি শো করার ফাঁকেই ওকে দেখে বুঝতে পারছিলাম, ছেলেটা ভেতরে-ভেতরে যন্ত্রণায় টুকরো-টুকরো হয়ে যাচ্ছে। অথচ কাউকে কিছু বলতেও পারছে না।

দাপট দেখিয়েও হার। শুক্রবার ধর্মশালায়। ছবি: রয়টার্স।

দাপট দেখিয়েও হার। শুক্রবার ধর্মশালায়। ছবি: রয়টার্স।

দীপ দাশগুপ্ত
ধর্মশালা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৪৯
Share: Save:

রোহিত শর্মাকে ম্যাচের পর দেখে খারাপই লাগছিল। চুপচাপ হয়ে ঘুরছে। বিশেষ কথা-টথা কারও সঙ্গে বলছে না। টিভি শো করার ফাঁকেই ওকে দেখে বুঝতে পারছিলাম, ছেলেটা ভেতরে-ভেতরে যন্ত্রণায় টুকরো-টুকরো হয়ে যাচ্ছে। অথচ কাউকে কিছু বলতেও পারছে না।

রোহিতের কতটা যন্ত্রণা হচ্ছিল, বুঝতে পারছিলাম। আমি নিজেও ক্রিকেটটা খেলেছি। কোনও ম্যাচে ভাল খেলার পরেও যদি দেখতাম টিম হেরে গেল, মনে হত রান করেও আমার লাভ কী হল? রোহিতেরও হয়তো সে রকমই মনে হচ্ছিল। কিংবা আরও বেশি কিছু। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সেঞ্চুরি করা কঠিন নয়, খুব কঠিন। রোহিত আজ টি-টোয়েন্টিতে ওর প্রথম সেঞ্চুরিটা করল। টিমকে প্রায় দু’শো ছুঁইয়ে দিল। কিন্তু তার পরেও দেখল, দু’টো বল বাকি থাকতে ম্যাচটা দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে চলে যাচ্ছে! একটা জেপি দুমিনি স্রেফ গোটা সত্তর রানের ইনিংস দিয়ে ম্যাচ নিয়ে চলে যাচ্ছে।

দেখুন, একটা ম্যাচ দেখে গোটা সফরের বিচার আমি করব না। বরং বলব, সিরিজ সবে শুরু হয়েছে। দু’টো টিমের মধ্যে তফাতও খুব বেশি নেই। আজ দক্ষিণ আফ্রিকা জিতল মানে কটকে যে ভারত কামব্যাক করবে না, এটা বলাটা মূর্খামি হবে। মনে রাখতে হবে, টিমটা আবার এখন ধোনির টিম। বহু দিন পরে, প্রায় মাস তিনেক। ক্রিকেটারদের তো একটু সময় দিতে হবে মানিয়ে নেওয়ার। মানে, ধোনির সেই অধিনায়কত্বের স্টাইলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কথা বলছি। টিমটাকে এ দিন কখনও কখনও আমার একটু ছন্নছাড়া মনে হয়েছে। আগে ভারতীয় টিমে সব মেশিনের মতো চলত। সবাই জানত, ম্যাচের কোন সময়ে কার কী কাজ। ধোনিকে বলতে হত না। স্টিরিওটাইপ ভাবে প্লেয়াররা সেটা নিজেরাই করত। আজ কিন্তু তেমন দেখলাম না। একটা উদাহরণ দিই। দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের শেষ ওভারে দেখলাম, সুরেশ রায়না কভারে। রোহিত বাউন্ডারিতে। যা কখনও হত না। উল্টোটা হত। অরবিন্দের ওই বল থেকে দু’টো রান হল। তার পর দেখলাম, রোহিত চলে এল কভারে। রায়না চলে গেল বাউন্ডারিতে। আগে যা বলতে হত না।

আমি বলতে চাইছি, ধোনির দর্শনে টিমকে পুরনো দিনের মতো সেট হতে একটু সময় দিতে হবে। কিন্তু সেটা হয়েও যাবে। দু’তিনটে ম্যাচ পরেই দেখতে পাবেন যে, সব আগের মতোই চলছে। মেশিনের মতো। কিন্তু একটা জিনিস না পাল্টালে মেশিন অকেজো হয়ে যেতে পারে।

বোলিং কম্বিনেশনের কথা বলছি।

ভুবনেশ্বর কুমার, মোহিত শর্মা আর শ্রীকান্ত অরবিন্দকে একসঙ্গে খেলিয়ে কোনও লাভ নেই। ওরা তো প্রায় একই ধরনের পেসার। যারা গতির দিকে বেশি না গিয়ে বলের মুভমেন্টের উপর ভরসা রাখে। মনে হয় এদের মধ্যে থেকে যে কোনও দু’জনকে খেলিয়ে কোনও আক্রমণাত্মক বোলার খেলানো ভাল। ভারতের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে বরুণ অ্যারন বা উমেশ যাদব নেই। অর্থাৎ, প্রচণ্ড গতিসম্পন্ন কাউকে পাওয়া যাবে না। তা হলে স্পিনে বৈচিত্র বাড়ানো হোক। অমিত মিশ্রকে খেলানো যেতে পারে। আর উইকেটও তা হলে এ রকম সবুজ আভা করার দরকার নেই। এমন উইকেট রাখুক যেখানে স্পিনার কিছুটা সাহায্য পেতে পারে। অমিত ভাল লেগস্পিনার। রান দিলেও উইকেট নেবে। আজ ভারতকে দেখে মনে হয়েছে যে ওরা উইকেট-টেকিং বোলারের অভাবে ভুগেছে।

আরও কয়েকটা ছোটখাটো স্ট্র্যাটেজিক ভুল চোখে পড়ল। যেমন দুমিনি ক্রিজে আসার পর বাঁ হাতি স্পিনার অক্ষরকে নিয়ে আসা। বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান সহজেই বাঁ হাতি স্পিনারকে ম্যানেজ করে নিতে পারে। লিফট করে ফেলে দেবে। ওখানে এক-আধটা ওভার রায়নাকে দেখে নেওয়া যেত। জেপি শুরুর দিকে অফস্পিন খেলতে সমস্যায় পড়ে। অশ্বিন এক দিক থেকে তো করছিলই। আর এক দিক থেকে রায়নাও করলে, দুমিনির বিধ্বংসী ইনিংসে ব্রেক মারা গেলেও যেতে পারত।

কিন্তু পাশাপাশি এটাও বলব যে, ভারতের বেশ কিছু জিনিস বিপক্ষেও গিয়েছে। যেগুলো এমএসের হাতে ছিল না। এ সব মাঠে, যেখানে শিশির-ফ্যাক্টর খুব বেশি, টস প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। ধোনি টস আজ হেরে গেল। তার পর দেখুন, দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের সতেরো নম্বর ওভারে দুমিনি পরিষ্কার এলবিডব্লিউ ছিল ভুবির বলে। আম্পায়ার দিলেন না। কী করে এত মারাত্মক হল, জানি না। ভারতীয় ইনিংসে বিরাট-রোহিতের পরপর আউট হয়ে যাওয়াটাও ক্ষতি করে দিল টিমের। রান যদি আর গোটা দশেক বেশি হত, তা হলে দক্ষিণ আফ্রিকার জেতা মুশকিল ছিল। প্লাস, ধোনি যদি অক্ষরকে পনেরো নম্বর ওভারে দুমিনির সামনে না ফেলে ফাটকা না খেলত, শেষের দিকে রান তোলা খুব সহজ হত না। ওই ওভারেই ম্যাচটা ঘুরে গেল। তিনটে ছয় মেরে ওই ওভার থেকে ২২ তুলে নিল দুমিনি।

দুমিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার নিয়ে গেল ঠিকই, কিন্তু আমার মতে ওটা রোহিতকেও দেওয়া যেত। কী খেলল ছেলেটা! অনেকে বলতে পারেন মাঠ ছোট, বোলারদের বল গ্রিপ করতে অসুবিধে হয়েছে। কিন্তু তার পরেও ৬৬ বলে ১০৬ করতে ক্ষমতা লাগে। বারোটা বাউন্ডারি, পাঁচটা ওভার বাউন্ডারি এমনি-এমনি মারা যায় না। আর একশো কুড়ি বলের ইনিংসে কোনও এক জনের একশো করে যাওয়া খুব সহজ নয়। ভারতীয়দের মধ্যে আর একজনেরই আছে। সুরেশ রায়নার। দুঃখের ব্যাপার একটাই।

রায়ানাও টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি পেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকারই বিরুদ্ধে। রোহিতও তাই। শুধু রায়নার সেঞ্চুরিতে টিম জিতেছিল। রোহিত সেঞ্চুরি করেও টিমকে জেতাতে পারল না।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত

২০ ওভারে ১৯৯-৫

(রোহিত ১০৬, কোহলি ৪৩, অ্যাবট ২-২৯)

দক্ষিণ আফ্রিকা

২০ ওভারে ২০০-৩

(দুমিনি ৬৮ নট আউট, ডে’ভিলিয়ার্স ৫১, অশ্বিন ১-২৬, অরবিন্দ ১-৪৪)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE