Advertisement
E-Paper

মোবাইল কেড়ে দীপাকে সেই ‘ওন্ডা বুয়েনা’ ধরালেন কোচ

রিও অলিম্পিক্সের পদক-প্রত্যাশার তীব্র চাপ থেকে বাঁচাতে শিষ্যার মোবাইল ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন তাঁর কোচ। নিয়ে রেখেছেন নিজের কাছে। আর কোচের ফোনের মাধ্যমে জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকার বলছেন, ‘‘পদকের কথা তো অনেক পরে। আগে তো ফাইনালে উঠি। শেষ আটে ওঠাই আমার প্রথম লক্ষ্য এখন। তার পর পরেরটা ভাবব।’’

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৬ ০৩:৪২
দিল্লি সাইয়ে প্র্যাকটিসে দীপা।

দিল্লি সাইয়ে প্র্যাকটিসে দীপা।

রিও অলিম্পিক্সের পদক-প্রত্যাশার তীব্র চাপ থেকে বাঁচাতে শিষ্যার মোবাইল ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন তাঁর কোচ। নিয়ে রেখেছেন নিজের কাছে। আর কোচের ফোনের মাধ্যমে জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকার বলছেন, ‘‘পদকের কথা তো অনেক পরে। আগে তো ফাইনালে উঠি। শেষ আটে ওঠাই আমার প্রথম লক্ষ্য এখন। তার পর পরেরটা ভাবব।’’

সকাল আটটা থেকে রাত আটটা। এর ভেতর চার দফায় প্রায় পাঁচ ঘণ্টার নানা অনুশীলন। তার মধ্যেই মনোবিদ থেকে পুষ্টিবিদ— নানা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া। ঘড়ি ধরে ঘুম থেকে ওঠা। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে যাওয়া। এক মুহূর্ত সময় নষ্টের ফুরসত নেই। দু’মাসও বাকি নেই, রিওর ফ্লোরে নামার। তাই কড়া শিডিউল এবং যেটা শৃঙ্খলায় মোড়া।

কিন্তু জিমন্যাস্টিক্স দুনিয়ায় বিস্ময় জাগানো বঙ্গতনয়া সামান্য বিশ্রাম বা ঘুমোতে পারছিলেন না। মোবাইল খুললেই বারবার বেজে উঠছে। মনঃসংযোগে তীব্র ব্যঘাত ঘটাচ্ছিল। দেশ-বিদেশ থেকে সবার একটাই প্রশ্ন— অলিম্পিক্স পদক হবে তো? এই ফোনগুলোর পরেই চাপে পড়ে যাচ্ছিলেন ভারতের প্রথম মেয়ে জিমন্যাস্ট হিসেবে অলিম্পিক্সে যোগ্যতা পাওয়া দীপা।

সব দেখেশুনে দীপার মোবাইল নিজের কাছে রেখে দিচ্ছেন কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী। সোমবার দুপুরে তাঁর ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘যে ফোন করছে সে-ই পদকের কথা বলছে। এটা ওকে মানসিক ভাবে চাপে ফেলে দিচ্ছে। দীপা মুক্ত মনে রিওতে নামুক এটাই চাই। অনেকেরই ধারণা নেই, জিমন্যাস্টিক্সে এক নম্বর হয়ে মূল রাউন্ডে ওঠা প্রতিযোগীও আট নম্বর হয়ে যায় স্রেফ একটা ভল্টেই। পদক শব্দটা আমি দীপার মাথা থেকে তাই একেবারে মুছে দিতে চাই। সে জন্যই মোবাইল ধরা ওর বন্ধ করে দিয়েছি।’’

ছাত্রীর অলিম্পিক্স পদকের জন্য দীপার কোচ স্বয়ং অবশ্য টার্গেট করছেন ভল্টিং ইভেন্টকে। বিশ্বের যে চার জিমন্যাস্ট দীপার পদকের পথে বাধা হতে পারেন তাঁদের সম্পর্কে নানা তথ্য জোগাড় করা চলছে। বিশ্বেশ্বরের মন্তব্য, ‘‘প্রোদুনোভা ভল্ট আমার ছাত্রীর তুরুপের তাস। আর তেত্রিশে ষোলো পয়েন্ট পেলেই পদক বাধা। কিন্তু সেটা করতে প্রচুর অনুশীলন দরকার। তাই কোথাও একটুও ফাঁক রাখছি না। সাইয়ের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে, দীপার জন্য ওরা সেরা বন্দোবস্ত করেছেন।’’

শুধু ফোন বন্ধ নয়, খারাপ ফল হলে মানসিকভাবে চাপে পড়ে যেতে পারেন দীপা, সেটা ভেবেও রিওর আগে দু’টো আন্তর্জাতিক টুনার্মেন্টে নামার প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছেন তাঁর কোচ। দীপার সঙ্গে পনেরো বছরেরও বেশি সময় ধরে যাঁর কোচিং-যোগ সেই বিশ্বেশ্বরবাবু বললেন, ‘‘চোট পেয়ে যেতে পারে। খারাপ ফল হলে মানসিক ভাবে ধাক্কা খেতে পারে, সে জন্যও বিদেশে পাঠাচ্ছি না। ওকে কোনও চাপ দিতে চাই না। সব চাপ আমি নিচ্ছি।’’

রিওতে আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সে কোন মিউজিকের সঙ্গে ফ্লোরে শরীরী বিভঙ্গ মেলাবেন বছর বাইশের মেয়ে। অনেক বাছাবাছির পর সেটাও ঠিক করে ফেলেছেন তাঁর কোচ। নব্বই সেকেন্ডের সেই সুরের মুচ্ছর্নার নাম ‘ওন্ডা বুয়েনা’। যে মিউজিক অ্যালবাম থেকে নেওয়া তাঁর ডিরেক্টর ব্যারি ডেল রিও। দীপার কোচ বললেন, ‘‘যে মিউজিক রিওতেই অলিম্পিক্স টিকিট পাওয়ার সময় দীপার জন্য বেছেছিলাম, সেটাই রাখছি। এখন আর নতুন কিছু বাছায় সময় নেই।’’ পয়মন্ত বলেই কি অলিম্পিক্সেও রাখছেন সেটা? প্রশ্নটা শুনে অনুশীলনে ক্লান্ত দীপার মন্তব্য, ‘‘পয়মন্ত বলে নয়। স্যার এটা পছন্দ করেন বলেই থাকছে।’’

রিওর বহু কাঙ্খিত টিকিটের মিউজিক-ই অগস্টের প্রথম সপ্তাহের কোনও এক দুপুরে ফের দীপা কর্মকারকে ভিকট্রি স্ট্যান্ডে তুলে দেয় কি না সেটাই দেখার।

Deepa Karmakar Rio Olympics Gymnastics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy