শীর্ষ বৈঠক। বুধবারের ইডেন। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
আলিপুরের অভিজাত হোটেলের ৪২৪ নম্বর ঘরটা যেন জীবন্ত মিউজিয়াম হয়ে গিয়েছে।
ওখানে ঢুকলে এখন নাকি আধশোয়া দেখা যাচ্ছে তাঁকে। ফ্লোরে নামানো ক্রিকেট-কিট, বিছানার আশেপাশে ভিডিও সিডি। ছড়ানো-ছেটানো, অবিন্যস্ত। এক-আধটা নয়, বেশ কয়েকটা। তাঁর এক যুগের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবনের নানা ‘স্মারক’ ওগুলো। কোনওটায় লুকিয়ে তাঁর অতীত সাফল্য। সোনার দিনের কথা। কোনওটার ‘মেমরি’-তে জলজ্যান্ত যন্ত্রণা, ব্যর্থতার গলিঘুঁজি। সামনের টিভি স্ক্রিনে মাঝেমধ্যে যা চলছে। প্রয়োজন মতো।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এখন অতীতের মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে খুঁজছেন। হোটেল রুমে বসে। একাকী।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এখন ডুব দিচ্ছেন ভিডিও পৃথিবীর দুনিয়ায়। খুঁজে আনতে চাইছেন দুর্মূল্য সেই বিষল্যকরণী যা তাঁকে অফ ফর্ম নামক মারণ-রোগের প্রতিষেধকের সন্ধান দিয়ে যাবে।
গত রাতে ভারত অধিনায়কের সঙ্গে টিম হোটেলে দেখা করতে গিয়েছিলেন পরিচিত এক ক্রিকেট কর্তা। এতটা চাপে থাকা, এতটা বিমর্ষ এমএসডিকে দেখবেন, তিনি আশা করতে পারেননি। শোনা গেল কথা বলতে বলতে বহু বার নাকি আনমনা হয়ে যাচ্ছিলেন ভারত অধিনায়ক। সৌজন্যের কুশল বিনিময়, চা-পানের প্রস্তাব, জগমোহন ডালমিয়ার প্রয়াণে দুঃখপ্রকাশ— ব্যস, এটুকু। বরং বর্তমান ধোনি নাকি নিজের পুরনো বিধ্বংসী ব্যাটিং-ভিডিও দেখছেন বারবার। খুঁজছেন, সমস্যাটা কোথায়। শট খেলার সময় কোথায় গণ্ডগোল হয়ে যাচ্ছে। দেখছেন, একটা সময় কী ভাবে দেশের জার্সিতে বার করেছেন একের পর এক ম্যাচ। বলা হল, ম্যাচ না থাকলে সন্ধেটা নিজের রুমে একা কাটাতে খুব একটা পছন্দ করতেন না ধোনি। ফুরফুরে ভাবে কাটাতে চাইতেন। কিন্তু আপাতত সে সবের পাট চুকেছে।
যা এতটুকু অস্বাভাবিক নয়। অফ ফর্মের অন্ধ গলিতে সাফল্যের আলো খুঁজতে বহু প্রখ্যাত ব্যাটসম্যানই নিজেদের পুরনো ব্যাটিং নিয়ে বসেছেন। ধোনিও বসছেন। তা ছাড়া তাঁর পারফরম্যান্সের বিচার তো শুধু নিজস্ব ব্যাটিংয়ে আবদ্ধ নেই। অধিনায়কত্ব নামক মহাচাপের পর্বতমালাও আছে। এবং সেখানেও তাঁকে জাতীয় মিডিয়া ছাড়ছে না। অজিঙ্ক রাহানের বদলে কোন যুক্তিতে অম্বাতি রায়ডু, কেন অমিত মিশ্র বসে থাকছেন, তাঁর বিখ্যাত ফিনিশিং কোথায়— প্রশ্নের অগ্নিবাণ এক নয়, একশো। হাতের উইলো চললে তবু এ সব কমত। কিন্তু সেটাও তো টানা বিশ্বাসঘাতকতা করে চলেছে।
দুপুরের ইডেনে এ দিন দেখা গেল, মাঠের মধ্যে একপ্রস্ত মিনি বৈঠক চলছে। ধোনি। কোহলি। শাস্ত্রী। রাঠৌর। কথাবার্তা কী হল, জানা সম্ভব নয়। এটুকু আন্দাজ করা যায়, টি-টোয়েন্টি সিরিজে যে অপমান নাগাড়ে চলছে তাকে থামানোর একটা অন্তিম প্রচেষ্টা।
ভারতীয় শিবির থেকে যা বলা হল তার সারমর্মও মোটামুটি এ রকম যে, সিরিজ শেষ সবাই জানে। কিন্তু ওয়ান ডে যুদ্ধের আগে যদি একটা ম্যাচও জেতা না যায়, তা হলে অবসাদ আরও বাড়বে। মৃদু একটা অভিযোগ নাকি এমনিতেই শাস্ত্রী-ধোনিদের শিবির থেকে আসছে যে, আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বিচারে চলতি সিরিজের ফর্ম্যাটটা একটু অদ্ভুত। প্রথমে তিনটে টি-টোয়েন্টি। তার পর ওয়ান ডে। শেষে টেস্ট। কারও কারও নাকি মনে হচ্ছে, টি-টোয়েন্টি আরও ক’টা পেলে ভাল ছিল। ঘনিষ্ঠমহলে নাকি ধোনিও দুঃখ করেছেন যে, গুছনোর সময়টাই তিনি পেলেন না। সঠিক কম্বিনেশন বার করার আগেই টি-টোয়েন্টি সিরিজটা শেষ হয়ে গেল।
শোনা গেল, ওয়ান ডে সিরিজ শেষ হলে মুম্বইয়ে ভারতীয় টিমকে নিয়ে বসতে পারেন নতুন বোর্ড প্রেসিডেন্ট শশাঙ্ক মনোহর। মার্চে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে তখন গোটা কয়েক টি-টোয়েন্টির চাহিদা যদি সেখানে পেশ করা হয়, অবাকের কিছু থাকবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
কিন্তু সেটা ২৫ অক্টোবর-পরবর্তী অধ্যায়ের কথা। আগে তো ৮ অক্টোবর, বৃহস্পতিবারের ইডেন। সেখানে কী হবে? পারবেন ধোনি? ফিরবেন চেনা ধোনিতে?
ইডেনের উইকেট প্রসন্ন করেছে ভারত অধিনায়ককে। কিউরেটরকে বলেও এসেছেন, ঠিকঠাক আছে। ভারত অধিনায়কের নেটে ব্যাটিং সাধনা দেখলেও অপ্রসন্ন হওয়ার জায়গা নেই। চেনা মেজাজে সেই বোলারকে তুলে তুলে ফেললেন, ঠিক যে ভাবে ফেলতেন।
শহরে দেবীপক্ষের আগে ধোনি-পক্ষের সূচনার আশাবাদ তাই অন্যায় নয়। ঘনিষ্ঠমহলে তাঁর আরও একটা কথা ধরলে তো আরওই নয়।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি নাকি এটাও বলে রেখেছেন যে, টি-টোয়েন্টি, ওয়ান ডে দু’টো তাঁর কাছে আলাদা সিরিজ নয়। অসীম গুরুত্বের একই সিরিজ।
জীবনের সিরিজ!
আফ্রিকান শক্তি
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য কতটা তৈরি দক্ষিণ আফ্রিকা? পুরো শক্তির দল না নামিয়েও ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করা কি সম্ভব হবে? এমনিতে এ দিন অপশনাল প্র্যাকটিস থাকায় এবি ডে’ভিলিয়ার্স-সহ কয়েক জন আসেননি। কিন্তু তাতে দক্ষিণ আফ্রিকান পেশাদারিত্ব এবং শৃঙ্খলাবোধের কমতি হয়নি। হোটেলে বলে দেওয়া হয়েছে, বিশেষ মিটিং রুম লাগবে, যেখানে অডিও-ভিসুয়্যাল সিস্টেম থাকবে। যেখানে রোজ টিমের কেউ না কেউ ‘ইনসপিরেশনাল স্পিচ’ দিচ্ছেন। যার ভিডিও রেকর্ডিং দেখানো হচ্ছে। আর টিমের সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে, কোথাও এক মিনিটের জন্যও দেরি করা চলবে না। টিম বাসের যদি দুটোয় ছাড়ার কথা থাকে, তা হলে দুটো বেজে এক মিনিটে কেউ এলে তাঁকে নিজের ব্যবস্থা নিজে করে নিতে হবে। বিশ্বকাপেই চোকার্স তকমাটা মুছে ফেলতে চায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ইডেনে হোয়াইটওয়াশ যার একটা স্টেজ রিহার্সাল হতে পারে।
ভারত : দক্ষিণ আফ্রিকা
তৃতীয় টি-টোয়েন্টি, ইডেন, সন্ধে ৭-০০
স্টার স্পোর্টস ওয়ান
শহরের আকাশ
সকাল থেকে আংশিক মেঘাচ্ছন্ন থাকবে। বিকেল তিনটের পর হাল্কা বৃষ্টি হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy