Advertisement
E-Paper

দীপাকে তো চিনি, ও নির্বিকার থাকবে

আন্তর্জাতিক পদকজয়ী প্রথম ভারতীয় জিমন্যাস্ট এবং দীপার সতীর্থ। লিখছেন শুধু আনন্দবাজারে...বিরাট কোহালি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে নামলে গোটা ভারত টিভির সামনে মন্ত্রমুগ্ধের মতো বসে যায়। বিশ্বকাপ ফুটবলে কারা চ্যাম্পিয়ন হল তা দেখতেও রাত জাগে মণিপুর থেকে মহারাষ্ট্র।

আশিস কুমার

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৬ ০৩:১১
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

বিরাট কোহালি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে নামলে গোটা ভারত টিভির সামনে মন্ত্রমুগ্ধের মতো বসে যায়। বিশ্বকাপ ফুটবলে কারা চ্যাম্পিয়ন হল তা দেখতেও রাত জাগে মণিপুর থেকে মহারাষ্ট্র।

রবিবার রাত সওয়া এগারোটায় আমার সেই ভারত টিভি খুলে বসবে। অলিম্পিক্স জিমন্যাস্টিক্সের ভল্ট ফাইনালে আমার বন্ধু দীপা কর্মকারকে দেখতে। ব্যাপারটা ভাবলে দারুণ এক্সাইটেড লাগছে। অলিম্পিক্স জিমন্যাস্টিক্স ফাইনালে এক ভারতীয়, তা-ও আবার স্বাধীনতা দিবস শুরুর মুহূর্তে!

দেশে বসে আমার নিজেরই যখন মন এ রকম আনচান করছে, তখন রিওয় দীপার মনের অবস্থাটা কী, তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। ২০১০ কমনওয়েলথ গেমস ফাইনালে যে দেশের হয়ে নামলাম, তার আগের রাতে ঘুমোতে পারিনি। এত টেনশনে ছিলাম।

সেই কমনওয়েলথের পরে দীপা যখন প্রোদুনোভা ভল্ট নিয়ে ট্রেনিং শুরু করল, তখন খুব কাছ থেকে ওকে দেখতাম। ল্যান্ডিংয়ের সময় শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে কী কী করতে হবে, সেটা নিয়ে কয়েক বার ছোটখাটো পরামর্শও দিয়েছি। আসলে মেয়েদের হাঁটু ছেলেদের তুলনায় একটু কমজোরি হয়। তাই ল্যান্ডিংয়ের সময় ভারসাম্যের কথা মাথায় রাখতে হয়। আমি যে ভল্ট নিয়ে পরামর্শ দিয়েছি, সেই ভল্টই যদি আমার বন্ধুর কিট ব্যাগে অলিম্পিক্স পদক এনে দেয়, তার চেয়ে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে!

কাগজেই পড়লাম দীপা আর নন্দী স্যর (কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী) মিলে ফাইনালের যে স্ট্র্যাটেজি ঠিক করেছেন তাতে প্রথমে প্রোদুনোভা ভল্ট নেই। একদম ঠিক সিদ্ধান্ত। প্রোদুনোভা ভল্ট গত চার বছরে দীপা এত নিখুঁত ভাবে রপ্ত করেছে যে ওটার পেটেন্ট ও পকেটে নিয়ে ঘোরে। যেটা বাকি সাত ফাইনালিস্টের মধ্যে একমাত্র পারে উজবেকিস্তানের ওকসানা। ও কিন্তু রিওয় প্রোদুনোভা ভল্ট এখনও দেয়নি। সেক্ষেত্রে শুরুতে প্রোদুনোভা দিলে এনার্জি নষ্ট হবে। বরং সেই জায়গায় সুকাহারা ৭২০ ডিগ্রি টার্ন ভল্ট সহজ। সেটা শুরুতে দিয়ে পয়েন্ট বাড়িয়ে শেষবেলায় নিজের প্রধান অস্ত্রে জান লড়িয়ে দেওয়ার স্ট্র্যাটেজিটা খুব ভাল।

এখন প্রশ্ন, অলিম্পিক্স ফাইনালের চাপ দীপা সামলাতে পারবে তো? একশো কোটিরও বেশি দেশবাসীর প্রত্যাশা ওর ফোকাস নড়িয়ে দেবে না তো? আমার মনে হয়, না। দীপা এই চাপ ঠিক ট্যাকল করে নেবে। দীর্ঘ দিন ওর সঙ্গে জাতীয় ক্যাম্পে কাটিয়েছি বলে জানি, মানসিক ভাবে ও কতটা শান্ত। কতটা নাছোড়।

মনে আছে, ক্যাম্পে এক বার একটা ভল্ট দু’জনে পাশাপাশি প্র্যাকটিস করছিলাম। প্রথমে দু’জনের ভুল হচ্ছিল। মেজাজ হারিয়ে ফ্লোরে লাথি মেরে ফেলেছিলাম। কিন্তু দীপা একেবারে নির্বিকার। চার-পাঁচ ঘণ্টা টানা ট্রেন করে গেল। ব্যাপারটা পারফেক্ট করে তবে ছাড়ল। আর তখনও ওর চোখমুখ কী অদ্ভুত শান্ত!

অনেকেই জানতে চাইছে, রিওয় থাকলে আমি ‘চক দে ইন্ডিয়া’-র কবীর খানের মতো দীপাকে ভোকাল টনিক দিতাম কি না। কিন্তু জানেন তো, হকি, ফুটবল, বক্সিং বা কুস্তিতে যে আগ্রাসী মনোভাব দরকার তার চেয়েও বেশি করে জিমন্যাস্টিক্সে চাই একটা শান্ত মন। কারণ এক্ষেত্রে বেশি অ্যাড্রিনালিন ঝরলে পেশির সমস্যা হতে পারে। বরং শনিবার রাতে যদি রিওয় থাকতাম, তা হলে আমার বন্ধুকে দুটো কথা বলতাম।

এক, ভুলে যা রবিবার ফাইনাল। মাথায় রাখ তোকে দু’টো ভল্ট দিতে হবে। তার পর ঠিক মতো ল্যান্ডিং করতে হবে।

দীপার সঙ্গে ট্রেনিং করেছি বলে জানি, ও গান শুনতে ভালবাসে। কিশোরকুমারের গানের পোকা। আর মন শান্ত রাখতে ধ্যানও করে। তাই আমার দু’নম্বর পরামর্শ হত— একটু কিশোরকুমার শুনে নে। আর স্টেডিয়াম যাওয়ার আগে মনটা শান্ত রাখতে সকালে পারলে একটু ধ্যান করে যাস।

Rio Olympics Dipa karmakar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy