Advertisement
E-Paper

জকোভিচের উইম্বলডনে বেকারের প্রতিশোধ

আনন্দবাজারেই বছর দেড়েক আগে লিখেছিলাম, রজার ফেডেরারের আর সতেরো থেকে আঠারো গ্র্যান্ড স্ল্যাম হবে না। তখন ও মেজরগুলোয় সেমিফাইনাল কিংবা কোয়ার্টার ফাইনালের বেশি এগোচ্ছে না। রবিবার ও গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল খেলল পাক্কা দু’বছর পর। আমার ভবিষ্যদ্বাণী ভুল হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা ছিল। দিনের শেষে আমি ভুল প্রমাণিত না হলেও ফেডেরারের জন্য কিন্তু ভীষণ খারাপ লাগছে!

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৪ ০৩:৪১
চ্যাম্পিয়নের কান্না। রবিবার জকোভিচ। ছবি: এএফপি।

চ্যাম্পিয়নের কান্না। রবিবার জকোভিচ। ছবি: এএফপি।

আনন্দবাজারেই বছর দেড়েক আগে লিখেছিলাম, রজার ফেডেরারের আর সতেরো থেকে আঠারো গ্র্যান্ড স্ল্যাম হবে না। তখন ও মেজরগুলোয় সেমিফাইনাল কিংবা কোয়ার্টার ফাইনালের বেশি এগোচ্ছে না। রবিবার ও গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল খেলল পাক্কা দু’বছর পর। আমার ভবিষ্যদ্বাণী ভুল হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা ছিল। দিনের শেষে আমি ভুল প্রমাণিত না হলেও ফেডেরারের জন্য কিন্তু ভীষণ খারাপ লাগছে!

ফের একটা মহাকাব্যিক উইম্বলডন ফাইনালে শেষমেশ ওকে পরাজিত খেলোয়াড় হিসেবে কোর্ট ছাড়তে হল। তবে নোভাক জকোভিচের কাছে এ দিনের ৭-৬ (৯-৭), ৪-৬, ৬-৭ (৪-৭), ৭-৫, ৪-৬ গেমে রজারের হার না মানা হার ওর ২০০৮ উইম্বলডন মহাকাব্যিক ফাইনালকেও আমার মতে ছাপিয়ে গিয়েছে। সেই ফাইনালে নাদাল-ফেডেরারের অনবদ্য লড়াইকেও আজ জকোভিচ-ফেডেরারের অবিশ্বাস্য ফাইনাল পিছনে ফেলে দিয়েছে। নাটকীয়তায়। টেনিসের সর্বোচ্চ স্ট্যান্ডার্ডে। পরতে-পরতে ম্যাচের রং-বদলে। এক মাস পরেই তেত্রিশে পা দিতে চলা একটা লোককে সুপার পাওয়ার আর সুপার ফিটনেস সর্বস্ব টেনিসের যুগে গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে শীর্ষ বাছাইয়ের বিরুদ্ধে চার ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধের পঞ্চম সেটেও ক্লান্ত দেখাচ্ছে না, এটাকে কল্পনাতীত বললেও কম বলা হবে! ফেডেরার আর জকোভিচকে আমি দু’টো আলাদা প্রজন্মের টেনিস প্লেয়ার ধরি। ২০০৩-এ ফেডেরারের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার সময় জকোভিচ নিজের দেশে অনূর্ধ্ব ষোলো ফিউচার্স জিতত!

সেই ছ’বছরের জুনিয়রের বিরুদ্ধে ১-২ সেটে পিছিয়ে পড়ে, চতুর্থ সেটে প্রতিপক্ষের চ্যাম্পিয়নশিপ গেম ব্রেক করে ফাইনালকে অভাবনীয় ভাবে পঞ্চম সেটেই শুধু টেনে নিয়ে যায়নি ফেডেরার, নির্ণায়ক সেটেও দশম গেমের আগে বড় ভুল করেনি। কিন্তু ওই একটা সার্ভিস ব্রেকই ফেডেরারের তরীকে তীরে টেনে এনেও ডোবাল! জকোভিচ ওর দ্বিতীয় উইম্বলডন খেতাব জিতে কোর্টে দাঁড়িয়েই সঠিক কথাটা বলে ফেলেছে! “রজার, আমাকে জিততে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।” সত্যিই, শেষ ছ’টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালের পাঁচটায় হেরে বসা জকোভিচ এ রকম নাটকীয় ভাবে ফেডেরারের উইম্বলডনে সর্বকালীন রেকর্ড সংখ্যক আটবার ট্রফি পাওয়াকে আটকে দেওয়ার পর আর কী বলতে পারত! তবে আমার মতে উইম্বলডন এবং ফেডেরার এই চিরকালীন আবেগকে সরিয়ে রেখে নির্মম পেশাদার দৃষ্টিতে বিচার করলে জকোভিচই এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা টেনিস প্লেয়ার। সব কোর্টে সমান ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার ক্ষমতা এখন ওর মধ্যেই অন্য সবার চেয়ে বেশি। গ্রেট চ্যাম্পিয়নকে এক জন গ্রেট ফাইটারই হারিয়েছে আজ!


লড়াই কাজে দিল না ফেডেরারের। ছবি: এএফপি

তৃতীয় সেট পর্যন্ত মনে হচ্ছিল, বহু বছরের মধ্যে একটা সর্বোত্তম মানের টেনিস ম্যাচ দেখছি। চতুর্থ সেট থেকে সেটা হয়ে দাঁড়াল অবিশ্বাস্য মানের টেনিস দেখা! উইম্বলডন ফাইনালের মতো চূড়ান্ত হাইভোল্টেজ লড়াই! তবু ম্যাচটা প্রথম থেকে শেষ পয়েন্ট পর্যন্ত অভাবনীয় স্তরে উঠে সেখানেই সারাক্ষণ বিরাজ করেছে। দুই প্রতিদ্বন্দ্বীই খুব কম আনফোর্সড এরর করছিল। দু’জনেই প্রায় সব বল কোর্টের ভেতর রাখছিল। ফেডেরার যেমন অসম্ভব ভাল সার্ভ করেছে, জকোভিচের তেমনই অনবদ্য রিটার্ন। ব্যাক কোর্ট থেকে অসাধারণ গ্রাউন্ডস্ট্রোক নিয়েছে। ফেডেরারের আবার নেট-প্লে এ দিন তেমনই দুর্ধর্ষ।

কিন্তু এ সব কিছুকেও ছাপিয়ে গেল চতুর্থ সেটে দু’জনের খেলা! মনে হচ্ছিল, অন্য গ্রহের টেনিস দেখছি! জকোভিচ দু’বার ব্রেক করে ৫-৩ এগিয়ে নবম গেমে যখন চ্যাম্পিয়নশিপ সার্ভিস করছে, ফেডেরার খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে ব্রেক করল। তার পরেই একাদশ গেমে আবার। পরের গেমে ও যখন ২-২ সেট করার জন্য সার্ভিস শুরু করছে, বিশ্বকাপ ফুটবলের মাঠের মতো গোটা সেন্টার কোর্ট ‘রজার...রজার...’ গলা ফাটাচ্ছে!

ফাইনালটা জকোভিচ-ফেডেরারে হওয়ায় আমার মনে হয়, ওদের দু’জনেরই নিজেদের একটা অন্য লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। জকোভিচের বরিস বেকার আর ফেডেরারের স্তেফান এডবার্গকে কোচ রাখাটা। আমার ধারণা, বিশেষ করে উইম্বলডনের ঘাসের কোর্টের কথা মাথায় রেখে ওরা এই সিদ্ধান্তটা আরও নিয়েছিল। ফেডেরারের মতোই বেকারের উইম্বলডন ঘরবাড়ি! তিন বার চ্যাম্পিয়ন। আরও চার বার ফাইনালিস্ট। এডবার্গও এখানে দু’বারের চ্যাম্পিয়ন। তবে দুই মহারথীর দুই মহাকোচের নিজেদের খেলোয়াড়জীবনে উইম্বলডন লড়াইয়ে বেকারের পারফরম্যান্স মোটেই ভাল নয়। অষ্টাশি থেকে টানা তিন বার দু’জনের মধ্যে উইম্বলডন ফাইনালে এডবার্গের কাছে দু’বার হেরেছে বেকার। শিষ্যের মধ্য দিয়েই তার একটা প্রতিশোধ নেওয়ার ব্যাপারও ছিল গুরুর।

আমার মতে দুই গুরুই অবশ্য এই রূপকথার ফাইনালটায় নিজেদের শিষ্যদের অসাধারণ পারফরম্যান্সের উপর ছাপ রেখেছে। ‘বুম বুম’ বেকারের কোচিংয়ে জকোভিচের সার্ভিসে যেমন চমকপ্রদ উন্নতি দেখা গেল, তেমনই এডবার্গের টিপসে ফেডেরারের ভলিতে সেই পুরনো কামড় ফিরে এসেছে। নেটেও আবার আগের মতো হরদম উঠেছে। প্রথম সেটটা টাইব্রেকারে ফেডেরার যখন জিতল, গ্যালারিতে এডবার্গের লাফ দেখে মনে হচ্ছিল ও-ই জিতেছে এবং গ্যালারিতে নেই, কোর্টের ভেতর রয়েছে! বেকার আবার তেমনই জকোভিচের বিগ পয়েন্টগুলো জেতার সময় বারবার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাত ছুড়ছিল। যেন নিজেই প্রতিপক্ষের সার্ভিস ব্রেক করেছে!

জকোভিচের ফেডেরার-বধ তাই এডবার্গের বিরুদ্ধে বেকারেরও মধুর প্রতিশোধ!

কলকাতার কোচ হচ্ছেন লোপেজ

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

আটলেটিকো দ্য কলকাতার কোচ হতে চলেছেন প্রাক্তন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার অ্যান্তোনিয় লোপেজ হাবাস। যিনি ফুটবলার জীবনে আটলেটিকো মাদ্রিদে খেলেছেন এবং কোচিং-ও করিয়েছেন। এ ছাড়াও প্রায় কুড়ি বছরের কোচিং জীবনে তিনি সেলটা, বলিভিয়া, ভ্যালেনসিয়া, বলিভার সহ মোট তেরো ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আজ সোমবার দুপুরে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারী ভাবে আই এস এলের টিম কলকাতার কোচ সহ মার্কি প্লেয়ারদের নাম ঘোষণা করবেন। কলকাতা টিমের জার্সি এবং লোগোও উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী।

roger federer novak djokovic wimbledon jaidip mukhopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy