Advertisement
E-Paper

হার্দিকদের দেশে ফেরানো নিয়ে নাটক, তীব্র মতভেদ

সিডনিতে প্রথম একদিনের ম্যাচ যতই একপেশে ভাবে জিতে নিক অস্ট্রেলিয়া, মাঠের বাইরে কিন্তু রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের মতোই তীব্র নাটক চলল। আর সেই নাটকের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে গেলেন অধুনা ভারতীয় ক্রিকেটের সব চেয়ে বিতর্কিত দুই চরিত্র হার্দিক পাণ্ড্য এবং কে এল রাহুল।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪০
ধোঁয়াশা: দলের সঙ্গে হার্দিকরা থাকবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়।

ধোঁয়াশা: দলের সঙ্গে হার্দিকরা থাকবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়।

সিডনিতে প্রথম একদিনের ম্যাচ যতই একপেশে ভাবে জিতে নিক অস্ট্রেলিয়া, মাঠের বাইরে কিন্তু রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের মতোই তীব্র নাটক চলল। আর সেই নাটকের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে গেলেন অধুনা ভারতীয় ক্রিকেটের সব চেয়ে বিতর্কিত দুই চরিত্র হার্দিক পাণ্ড্য এবং কে এল রাহুল। সিডনিতেই তাঁরা অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড হয়েছেন। শনিবার তীব্র বাদানুবাদের সৃষ্টি হয় তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে কি না, তা নিয়ে।

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের শাসনভার এখন সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্সের (সিওএ) হাতে। তাদের দুই সদস্য সিওএ প্রধান বিনোদ রাই এবং ডায়ানা এডুলজির মধ্যে মতভেদ চরমে। কোনও ব্যাপারেই তাঁরা ঐকমত্য হতে পারছেন না। হার্দিকদের ঘটনা নিয়েও দু’জনে সম্পূর্ণ দুই মেরুতে। ডায়ানা দাবি করতে থাকেন, হার্দিকদের কড়া শাস্তি তো দিতেই হবে। তাঁদের অবিলম্বে দেশেও ফিরিয়ে আনা উচিত। অন্য দিকে বিনোদ রাই প্রথমে হার্দিকদের শাস্তির দাবি তুললেও আইনি জটিলতা বুঝতে পেরে পরের দিকে কিছুটা নরমভাবাপন্ন হন। তিনি বলতে থাকেন, বিশেষ প্যানেল তৈরি করে তাদের উপরেই সমস্ত ভার ছেড়ে দেওয়া হোক। ভারতীয় বোর্ডকর্তারা, যাঁরা লোঢা কমিটির আগমনে গুরুত্ব হারিয়েছেন, তাঁরাও এই পরিস্থিতিতে এখন ঘোলা দলে মাছ ধরতে শুরু করেছেন। শ্রীনিবাসন বৈঠক করেছেন বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে। সেখানে বিনোদ রাইয়ের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযাগ আনা হয়েছে। কিন্তু নিয়মবহির্ভূত ভাবে হার্দিকদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে কেন, তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেননি। আলোচনার পুরোটাই ছিল নিজেদের স্বার্থরক্ষার জন্য।

ও দিকে, হার্দিকরা টিমের সঙ্গে থাকবেন কি থাকবেন না, তাঁদের কতগুলি ম্যাচ বাইরে বসিয়ে রাখা হবে, তা নিয়ে সম্পূর্ণ ধোঁয়াশা তৈরি হয় ভারতীয় দলের মধ্যে। শনিবার প্রথম ওয়ান ডে খেলতে নামার আগে পর্যন্ত ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট জানত না হার্দিকরা কি ফেরার বিমান ধরছেন? তাঁরা কি দলের সঙ্গে মাঠে যাবেন? না কি এ দিনই তাঁদের সিডনি থেকে পত্রপাঠ বিদায় নিয়ে দেশের বিমান ধরতে হবে? এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, টিম হোটেল থেকে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে যে ভারতীয় দল বের হল, তা ছিল এক বিতর্কবিদ্ধ এবং বিভ্রান্ত ভারতীয় দল। কেউ কেউ মনে করছেন তার প্রভাব এ দিন খেলার মধ্যেও পড়েছে। তবে ভারতীয় বোর্ডের থেকে দেরিতে হলেও যোগাযোগ করা হয় টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে (সম্ভবত ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে)। কিন্ত টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনার পরেও জট খুলেছে বলে শনিবার রাত পর্যন্ত খবর নেই।

আরও পড়ুন: ওপেনারের সেঞ্চুরি সত্ত্বেও হার ভারতের, ধোনিকে চারে চান রোহিত

বেন স্টোকসের উদাহরণ তুলে এনে কেউ কেউ বলছেন, ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছিল। ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড তাঁকে নির্বাসিত করলেও আদালতে মামলা চলাকালীন স্টোকসকে ভারতের বিরুদ্ধে খেলার অনুমতি দেওয়া হয়। স্টোকস শুধু খেলেনইনি। এজবাস্টনে প্রথম টেস্টে বিরাট কোহালির উইকেট নিয়েই ভারতের জয়ের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিয়ে যান। গোটা সিরিজে দু্র্দান্ত খেলে ইংল্যান্ডকে সিরিজ জিততে সাহায্য করেন। ভারত অধিনায়ক স্বয়ং হার্দিক এবং রাহুলের মন্তব্যের নিন্দা করেছেন। বলেছেন, তাঁদের মন্তব্যের সঙ্গে দলের মনোভাবের কোনও মিল নেই। এটা একান্তই ব্যক্তিগত মন্তব্য। তবে যে ভাবে দুই ক্রিকেটারকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে বা দেশে ফিরিয়ে আনার কথা উঠছে, তাতেও কি সায় দেবেন কোহালিরা? মনে হয় না। বরং যা ইঙ্গিত, ভারতীয় দলের মধ্যে ভোট নিলে হার্দিকদের দু’ম্যাচ সাসপেনশন করা নিয়ে অনেকে হয়তো সায় দেবেন। কিন্তু দেশে ফিরিয়ে আনার প্রশ্নে কারও সায় আছে বলে মনে হয় না।

আরও প্রশ্ন উঠছে, স্টোকসের অপরাধ ছিল তিনি পানশালার বাইরে এক ব্যক্তিকে নির্মম ভাবে ঘুসি মারতে থাকেন। আদালত প্রমাণের অভাবে তাঁকে বেকসুর মুক্তি দেয়। হার্দিক এবং রাহুলের ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, ক্রিকেটের বাইরের ঘটনা নিয়ে ক্রিকেট বোর্ড কেন ওকালতি করছে? বোর্ডের আচরণবিধিতে কোথাও স্পষ্ট বলা নেই যে, টক শো’তে গিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করলে শৃঙ্খলাভঙ্গের শাস্তি দেওয়া যায় কি না। আরও প্রশ্ন উঠেছে, বোর্ডের সিইও রাহুল জোহরির বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ থাকলেও তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়নি। তা হলে হার্দিকদের একটি মন্তব্যের জন্য তড়িঘড়ি সাসপেন্ড করা হল কেন? না কি ভারতীয় ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের জন্য এক নিয়ম আর কর্তাদের জন্য আর এক রকম? শনিবার রাত পর্যন্ত হার্দিকরা সিডনিতেই আছেন। দেশের বিমান ধরেননি। ভারতের পরের ম্যাচ অ্যাডিলেডে। রবিবারই বিরাট কোহালিরা অ্যাডিলেডে চলে যাবেন। এটাই এখন দেখার হার্দিকরা দলের সঙ্গে অ্যাডিলেডে যাচ্ছেন, না দেশে ফিরছেন? শনিবার গভীর রাতে বোর্ড অবশ্য সরকারি ভাবে জানিয়ে দেয়, হার্দিকের পরিবর্ত হিসাবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে যাবেন বিজয় শঙ্কর। আর তরুণ ওপেনার শুভমন গিল নিউজিল্যান্ডে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন।

বোর্ডের মধ্যে গোটা বিষয় নিয়ে তীব্র বাদানুবাদ চলছে। ডায়ানা গোঁ ধরে বসে আছেন, হার্দিকদের দেশে ফেরানো হোক। আবার বিনোদ রাই এবং তাঁর অনুগামীরা মনে করছেন এতটা চরম মনোভাবাপন্ন হয়ে হঠকারিতা করতে গেলে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে। তাঁদের তাই মনে হচ্ছে তদন্ত কমিটি না গড়া পর্যন্ত দু’ম্যাচ পর্যন্ত সাসপেন্ড করা হোক। দেশে ফেরানোর দরকার নেই। পরে তদন্ত কমিটি দায়িত্ব নিলে তারা যা ভাল বোঝে সেটাই হোক। আবার এই প্রশ্নও রয়েছে, টক শো’তে করা একটি মন্তব্যকে নিয়ে কী আর তদন্ত করার আছে। সকলেই তো জানেন, তাঁরা কী বলেছেন। নতুন করে কী তথ্যানুসন্ধান করা হবে?

হার্দিকরা এখন আর ক্রিকেট নয়। ক্রিকেট রাজনীতির মুখ!

Cricket India Hardik Pandya KL Rahul
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy