Advertisement
E-Paper

দাপটের দিন শেষ, সাঁইত্রিশে নেই দুই প্রধানের কেউই

কিংস কাপের জন্য বৃহস্পতিবার ভারতীয় ফুটবলারদের যে ৩৭ জনের তালিকা ইগর তৈরি করে পাঠিয়েছেন, তাতে সবাই আইএসএলেরই ফুটবলার। আই লিগের কেউ নেই। তালিকায় থাকা ফুটবলারদের যে চার জন গত বছর খেলেছেন আই লিগে, তাঁরা এ বার  নাম লিখিয়েছেন আইএসএলের ক্লাবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৯ ০৪:৩৭

স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন যে রাস্তায় হেঁটে জাতীয় দল তৈরি করতেন, তাঁর জায়গায় জাতীয় কোচ হয়ে আসা ক্রোয়েশিয়ার বিশ্বকাপার কোচ ইগর স্তিমাচের ভাবনায় কোনও ফারাক নেই।

কিংস কাপের জন্য বৃহস্পতিবার ভারতীয় ফুটবলারদের যে ৩৭ জনের তালিকা ইগর তৈরি করে পাঠিয়েছেন, তাতে সবাই আইএসএলেরই ফুটবলার। আই লিগের কেউ নেই। তালিকায় থাকা ফুটবলারদের যে চার জন গত বছর খেলেছেন আই লিগে, তাঁরা এ বার নাম লিখিয়েছেন আইএসএলের ক্লাবে। এঁরা হলেন জবি জাস্টিন, সালামরঞ্জন সিংহ, অমরজিৎ সিংহ এবং আনোয়ার আলি। সালামরঞ্জন আগে জাতীয় দলে ছিলেন। আই লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা জবি, অনূর্ধ্ব ১৭ যুব বিশ্বকাপে খেলা অমরজিৎ এবং আনোয়ার এই প্রথম ডাক পেলেন। তিন জনই অবশ্য চেনা নাম। কিন্তু আদিল খান, নন্দ কুমার, সাহিল আব্দুল, রিদিম তালাং-এর মতো অচেনা ফুটবলার জাতীয় দলের শিবিরে ডাক পাওয়ায় চমকে গিয়েছেন ফেডারেশন কর্তারাই। ফেডারেশন সূত্রের খবর, ক্রোয়েশিয়া থেকে ইগর নিজে ই-মেল করে তালিকা পাঠিয়েছেন। সেই তালিকায় প্রথমে নাম ছিল জেজে লালপেখলুয়া, হোলিচরণ নার্জারির মতো কিছু তারকা ফুটবলারেরও। কিন্তু দিল্লির ফুটবল হাউস থেকে ওই ফুটবলারদের চোট আছে জানানো হয় ইগরকে। ফের নতুন নাম পাঠান তিনি। যা থেকে স্পষ্ট, ভারতে কোচিং করতে আসার আগে লুকা মদ্রিচের দেশের কোচ ভাল করে আইএসএল ও আই লিগের ফুটবলারদের আতস কাচের তলায় ফেলে দেখে নিয়েছেন। এবং সেই কাটাছেঁড়া করার সময় ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের কোনও ফুটবলারকেই দেশের নতুন কোচের চোখে পড়েনি। সে জন্যই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, ভারতীয় দলে বাংলার ঐতিহ্যের দুই ক্লাবের ফুটবলারদের যুগ কি শেষ হয়ে গেল?

৩৭ জনের তালিকায় মোট চার জন বঙ্গসন্তান ডাক পেয়েছেন। এঁরা হলেন প্রীতম কোটাল, প্রণয় হালদার, নায়ারণ দাশ এবং শুভাশিস বসু। কিন্তু তাঁরা সকলেই খেলেন আইএলএলে। পাঁচ বছর আগে শুরু হয়েছে আইএসএল। তারপর থেকে জাতীয় দলের ফুটবলারদের নামের পাশ থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে দুই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের নাম। বছর পাঁচেক আগেও যখন জাতীয় দল ঘোষণা হত, অন্তত দশ-বারো জন ফুটবলার থাকতেন দুই প্রধানের। আইএসএলের ক্লাবগুলির সঙ্গে অর্থের লড়াইতেও অনেক পিছিয়ে পড়েছে কলকাতার ক্লাবগুলো। জবি জাস্টিনের কথাই ধরা যাক। ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে গত বছর আই লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা যে টাকা পেয়েছিলেন, এ বার এটিকেতে সই করে তার তিনগুণ টাকা পাচ্ছেন কেরলের ফুটবলার। জবির আর্থিক দাবি ইস্টবেঙ্গল পূরণ করতে পারেনি। সালামরঞ্জনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। গত চার-পাঁচ বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, দুই প্রধানে যে ফুটবলারই ভাল খেলছেন, তাকে নিয়ে নিচ্ছে এটিকে বা আইএসএলের অন্য কোনও ক্লাব। দুই প্রধানের দুই কর্তা স্বীকার করলেন, ‘‘অর্থের লড়াইতে আইএসএলের ক্লাবগুলোর সঙ্গে আমরা পেরে উঠছি না। তিন গুণ টাকা দিয়ে ওরা নিয়ে যাচ্ছে। খেলার সুযোগ পাবে না জেনেও নাম লেখাচ্ছে আইএসএলে।’’

এটিকে-তে তিন বছরে জন্য তিন কোটি টাকার চুক্তিতে সই করেছিলেন এক ফুটবলার। গত দু’বছর ম্যাচ খেলার তেমন সুযোগই পাননি। তাতে একটু দুঃখ থাকলেও আক্ষেপ নেই। বলছিলেন, ‘‘বাড়ি করেছি। গাড়ি কিনেছি। বাবা-মা খুশি। বিদেশি ভাল কোচের কাছে অনুশীলন পাচ্ছি। মাইনে পেতে কর্তাদের কাছে ধর্না দিতে হচ্ছে না। মোহনবাগানে থাকলে এগুলো পেতাম? খেলোয়াড়ের জীবন। কবে চোট পেয়ে জীবনে অন্ধকার নেমে আসবে জানি না। নিজেরটা তো বুঝতে হবে।’’

ফুটবলারদের এই আইএসএলমুখী স্রোত, আর্থিক সচ্ছলতার প্রলোভনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না বাংলার শতাব্দী প্রাচীন দুই ক্লাব বা আই লিগের ক্লাবগুলি। জাতীয় দলে বাংলা ও এটিকের ফুটবলার থাকলেও তাই নেই ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের প্রতিনিধিত্ব।

Football India East Bengal Mohun Bagan Kings Cup
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy