Advertisement
E-Paper

প্লাজার জীবনকাহিনির মতোই রোমাঞ্চকর জয় ইস্টবেঙ্গলের

ম্যাচ শুরু হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে লাল-হলুদ শিবিরে। গোল করে চার্চিলকে এগিয়ে দেন পিটার ওমুদুয়েমুকে। ফের ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডারদের ব্যর্থতায় গোল। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে আক্রমণের লক্ষ্য প্লাজা!

শুভজিৎ মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:১৬
দর্শকদের অভিবাদন ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দর্শকদের অভিবাদন ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ। নাটকীয় জয়।

লাল-হলুদ শিবিরে উইলিস প্লাজা নায়ক। উইলিস প্লাজা-ই ত্রাতা।

শনিবার বারাসত স্টেডিয়ামে চার্চিল ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে দুরন্ত জয়ের রাত স্মরণীয় হয়ে থাকল প্লাজার
অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে।

লাল-হলুদ স্ট্রাইকারের জন্ম ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগোয়। প্রিয় বন্ধু সুনীল নারাইন। তাঁরও স্বপ্ন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলার। স্কুলে পড়তে পড়তেই অবশ্য প্লাজা বদলে ফেলেছিলেন লক্ষ্য। বেছে নিয়েছিলেন ফুটবলকে। তখন তাঁর বয়স পনেরো। ঠিক করেন পেশাদার ফুটবলারই হবেন। পরিবারের সদস্যরা তাঁর এই সিদ্ধান্তে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। পাশে পেয়েছিলেন শুধু বন্ধুদের। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। প্রতিকূল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছন। জায়গা করে নেন ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগোর জাতীয় দলে। শনিবার চার্চিলের বিরুদ্ধে প্লাজার দুর্ধর্ষ প্রত্যাবর্তন তো রূপকথার মতোই।

এই বারাসত স্টেডিয়ামেই চার্চিল ব্রাদার্সকে পাঁচ গোলে বিধ্বস্ত করার পরেই লাজং এফসি-র বিরুদ্ধে মুখ থুবড়ে পড়েছিল মোহনবাগান। চার্চিলের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে এটা নিয়েই চিন্তিত ছিলেন লাল-হলুদ কোচ খালিদ জামিল। ম্যাচ শুরু হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে লাল-হলুদ শিবিরে। গোল করে চার্চিলকে এগিয়ে দেন পিটার ওমুদুয়েমুকে। ফের ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডারদের ব্যর্থতায় গোল। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে আক্রমণের লক্ষ্য প্লাজা! দু’মিনিটের মধ্যেই ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগোর স্ট্রাইকারের দুর্ধর্ষ পাস থেকে গোল করে খালিদকে স্বস্তি দেন লালডানমাওয়াই রালতে। আর প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মুহূর্তে কাতসুমি ইউসার সেন্টার থেকে চার মাস পরে গোল করলেন প্লাজা। যদিও এই গোল নিয়ে ক্ষুব্ধ চার্চিল শিবির। কোচ আলফ্রেদ ফার্নান্দেজের অভিযোগ, ‘‘চতুর্থ রেফারি পাঁচ মিনিট ইনজুরি টাইম দিয়েছিল। প্লাজা গোল করল ৯৭ মিনিটে। এটা মানা যায় না।’’

ইস্টবেঙ্গলের হয়ে প্লাজা শেষ গোল করেছিলেন ১৯ সেপ্টেম্বর কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে। গত চার মাসে যে তাঁর জীবনে ঝড় বয়ে গিয়েছে, তা বোঝা গেল শাপমুক্তির গোলের পরেও উচ্ছ্বাস করতে না দেখায়। তবে দলকে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়ার সময় শুধু গ্যালারির দিকে হাত তুললেন। প্লাজা অবশ্য ম্যাচের সেরা হননি। সেই সম্মান পেলেন চার্চিলের গোলকিপার জেমস কিতান।

ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা গোল নষ্টের বহর দেখে ক্ষোভে প্লাজার নামই বদলে দিয়েছেন। উইলিস প্লাজা নন, তিনি হয়ে গিয়েছেন ‘মিস’ (গোল মিস থেকে এমন নামকরণ) প্লাজা! এ দিন বারাসত স্টেডিয়ামেও ছবিটা একই রকম ছিল। ভুল যে-ই করুক, সমর্থকদের বিদ্রুপের তিরে বিদ্ধ হয়েছেন প্লাজা। ৬০ মিনিটে ফের ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের ভুলে চার্চিলের নিকোলাস ফার্নান্দেজ সমতা ফেরান। অথচ ভাগ্যের এমন পরিহাস— প্লাজার গোলেই চার্চিলকে হারিয়ে আই লিগ টেবলের তিন নম্বরে উঠে এল ইস্টবেঙ্গল। ৪ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট পেয়ে। যা নাটকীয় ভাবে বদলে দিল আবহ। ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে বারাসত স্টেডিয়ামের ১১ হাজার সমর্থকদের মুখে শুধুই প্লাজা...
প্লাজা...জয়ধ্বনি। লাল-হলুদ স্ট্রাইকার অবশ্য নির্লিপ্ত। বলেছেন, ‘‘আমি সব সময় গোল করতে ভালবাসি। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দলের জয়। এখনও অনেক দূর যেতে হবে। পরের ম্যাচের জন্য মনঃসংযোগ করতে চাই।’’

প্রত্যাবর্তনের রহস্য কী? ম্যাচের পর সাংবাদিক বৈঠকে খালিদ বললেন, ‘‘প্লাজা মানসিক ভাবে খুব শক্তিশালী। অসম্ভব লড়াকু। কিন্তু আমি কখনওই উদ্বিগ্ন হইনি। জানতাম ঠিক গোল করবেই।’’ তার পরেই ক্ষোভ উগরে দিয়ে লাল-হলুদ কোচের মন্তব্য, ‘‘কঠিন সময়ে সতীর্থরা ছাড়া প্লাজার পাশে কেউ ছিল না।’’

ক্রিকেট ছেড়ে ফুটবল বেছে নেওয়ার সময়ও তো এ রকমই প্রতিকূল পরিস্থিতি পেরিয়ে ছিলেন প্লাজা।

East Bengal Churchill Brothers I-League Football
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy