জিতলেও চিন্তার জায়গা থেকে গেল মর্গ্যানের।
লড়াইটা ছিল দুই ব্রিটিশ কোচের। ভারতীয় ফুটবলে পোড় খাওয়া ট্রেভর জেমস মর্গ্যানকে শেষ পর্যন্ত টেক্কা দিতে পারলেন না ডাভ রজার্স।
সঞ্জু-নির্মল-গৌরমাঙ্গিরাও কিন্তু লড়াই করেছিলেন মেহতাব-নারায়ণ-ডিকাদের বিরুদ্ধে। তবে অভিজ্ঞতার কাছে হার মানতে হল দ্বিতীয়বার আই লিগ খেলতে নামা ফ্র্যাঞ্চাইজি টিম ডিএসকে শিবাজিয়ান্সকে। শুধু তাই নয়, জয়ে ফেরার পাশাপাশি মর্গ্যানকে স্বস্তি দিয়ে গেল নতুন আসা দুই বিদেশির জোড়া গোল।
পুণের দলটিকে হার মানতে হল বালেওয়াড়ি স্টেডিয়ামে উপস্থিত লাল-হলুদ সমর্থকদের আবেগের কাছেও। নিজেদের ঘরের মাঠে খেলতে নেমেও সে ভাবে কোনও সমর্থনই পেল না শিবাজিয়ান্স। উল্টে ইস্টবেঙ্গলের পতাকা, ঢাক-ঢোল, ভুভুজেলা, লাল-হলুদ আবির নিয়ে পুরো ম্যাচে গলা ফাটিয়ে গেলেন কলকাতার দলের সদস্য-সমর্থকরাই। পুণেতে ফোন করে জানা গেল, ফুটবলাররাও নাকি ড্রেসিংরুমে মজা করে এ দিন বলেছেন, ‘‘পুণেকে আমাদের দ্বিতীয় ‘হোম গ্রাউন্ড’ করা যেতেই পারে। অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে এসে এ রকম সমর্থন আশা করিনি।’’
তবে ম্যাচ জিতলেও সমস্যা ইস্টবেঙ্গলের পিছু ছাড়ছে না। এ বার আই লিগে লাল-হলুদের ম্যাচ মানেই যেন কোনও না কোনও সমস্যা। আইজল ম্যাচে যেমন কিছুক্ষণের জন্য হলেও পাহাড়ি দলটির ১২ জন ফুটবলার এক সঙ্গে মাঠে ছিল। এতে অবশ্য আইজলের আলাদা কোনও শাস্তি হয়নি। শনিবার আবার ম্যাচ আয়োজক ডিএসকে শিবাজিয়ান্সের ভুলে জলে ভিজতে হল রিজার্ভ বেঞ্চে থাকা লাল-হলুদ ফুটবলারদের।
এ দিন ম্যাচ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেখা যায়, মাঠে জল দেওয়ার যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা হঠাৎ করেই চালু হয়ে গিয়েছে। ফলে লাল-হলুদ ফুটবলারদের খেলার মাঝেই কম বেশি সবাইকে ভিজতে হয়। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচ বন্ধ করে দেন। আয়োজকরা জল বন্ধ করলে আবার খেলা শুরু হয়। আই লিগের অপেশাদারিত্ব নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠছে। এ দিনের ঘটনা তাতে নতুন সংযোজন।
জল-সমস্যা মিটিয়ে অবশ্য নামার পর ইস্টবেঙ্গলই ছিল আক্রমণাত্মক মেজাজে। সনি নর্ডির দেশের ওয়েডসন যদি এ দিন সব সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারতেন, তবে হয়তো বিরতির আগেই হাইতি স্ট্রাইকার হ্যাটট্রিক করে ফেলতেন। সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলকেও ৩-০ এগিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু সনির মতো সেই ঝাঁঝটা ওয়েডসনের নেই। অন্তত এখনও তেমন কিছু দেখা যায়নি। পেনাল্টি থেকে গোলটি করেই তাই ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন লাল-হলুদ স্ট্রাইকার। তাঁকে নিয়ে তাই প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে পাল্টা আক্রমণে উঠতে শুরু করে শিবাজিয়ান্সও। অভিজ্ঞ গৌরমাঙ্গি সিংহ ১-১ করার পর আরও বেশি চনমনে হয়ে পড়ে পুণের দলটি। উল্টে গোল খাওয়ার পরও ইস্টবেঙ্গলকে কিন্তু সে ভাবে তেড়েফুঁড়ে উঠতে দেখা যায়নি। পুরনো মর্গ্যান জমানার সেই জোশটাই যেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এ বারের লাল-হলুদে। ম্যাচ শেষ হওয়ার মিনিট দশেক আগে ভাগ্যিস উইলিস প্লাজা একার কৃতিত্বে অসাধারণ গোলটা করে ২-১ করেছিলেন, না হলে হয়তো ফের এক পয়েন্ট নিয়েই ফিরতে হয় ইস্টবেঙ্গলকে।
লিগের লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে এ দিন মর্গ্যান ব্রিগেডের কাছে তিন পয়েন্টটা খুবই জরুরি ছিল। লাল-হলুদের পরের ম্যাচ আবার গোয়াতে চার্চিল ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে। ইস্টবেঙ্গলে কোচিং করার দ্বিতীয় ইনিংসে মর্গ্যান এ দিন প্রথম জয় পেলেও ওয়েডসনরা যে ভাবে গোল নষ্ট করছেন, গোয়াতে তাঁরা জয়ের ধারা বজায় রাখতে পারেন কি না, সেটাই দেখার!
ফের শীর্ষে বেঙ্গালুরু
চ্যালেঞ্জটা সোজা ছিল না চেন্নাই সিটির। কিন্তু ৭৭ মিনিট পর্যন্ত গত বারের চ্যাম্পিয়ন টিম বেঙ্গালুরু এফসি-র সঙ্গে সমান তালে লড়াই চালিয়ে যায় প্রথম বার আই লিগ খেলতে নামা চেন্নাইয়ের দল। শেষ রক্ষা অবশ্য হয়নি। আলবার্তো এবং সিকে বিনীতের পর পর দু’টি গোলেই ভেঙে পড়ে করণজিৎ সিংহ-দেবব্রত রায়দের যাবতীয় প্রতিরোধ। ২-০ ম্যাচ জিতে আবারও শীর্ষে উঠে এল বেঙ্গালুরু। ২ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ছয়। সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলে একই পয়েন্ট নিয়ে গোল পার্থক্যে কিছুটা পিছিয়ে দুইয়ে রয়েছে মোহনবাগান। এ দিনের ম্যাচ জিতে ইস্টবেঙ্গল দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে তিনে উঠে এল।
ইস্টবেঙ্গল: রেহেনেশ, রাহুল, নারায়ণ, বুকেনিয়া, আনোয়ার, মেহতাব, ডিকা, নিখিল (রবিন গুরুং), ওয়েডসন (জ্যাকিচন্দ), হাওকিপ (রবিন সিংহ), প্লাজা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy