Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিস্ফোরক বিশ্বজিতের দাওয়াই লাল-হলুদকে

পুরো দল অনুশীলন করছে কোলবার সমুদ্র সৈকতে। চলছে দৌড়, বিচ ভলিবল এবং সমুদ্রস্নান। অথচ ধারেকাছে নেই ইস্টবেঙ্গল কোচ। রোদ চশমা পরে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে আছেন বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। তীব্র ক্ষোভ আর হতাশা চোখেমুখে।

দুশ্চিন্তায় আত্মমগ্ন ইস্টবেঙ্গল কোচ। কোলবার সমুদ্রসৈকত। বুধবার। -উৎপল সরকার

দুশ্চিন্তায় আত্মমগ্ন ইস্টবেঙ্গল কোচ। কোলবার সমুদ্রসৈকত। বুধবার। -উৎপল সরকার

রতন চক্রবর্তী
মারগাও শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩২
Share: Save:

পুরো দল অনুশীলন করছে কোলবার সমুদ্র সৈকতে। চলছে দৌড়, বিচ ভলিবল এবং সমুদ্রস্নান। অথচ ধারেকাছে নেই ইস্টবেঙ্গল কোচ। রোদ চশমা পরে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে আছেন বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। তীব্র ক্ষোভ আর হতাশা চোখেমুখে।

কিছুক্ষণ পরই সেখানে দৌড়ে এলেন র‌্যান্টি মার্টিন্স। ‘‘কোচ, আমাদের উপর রাগ কোরো না। আমরা কেউই খেলতে পারিনি। কথা দিচ্ছি পরের ম্যাচে জিতবই। আমরা লড়াইয়ে ফিরবই।’’ কোচের পাশে দাঁড়ানো আনন্দবাজারের সাংবাদিককে দেখে নাটকীয় ভঙ্গিতে বললেন, ‘‘আমাদের কোচকে হার নিয়ে বিরক্ত করবেন না। ওর কোনও দোষ নেই। কোনও প্রশ্ন করবেন না। দেখে নেবেন আমরাই লিগ চ্যাম্পিয়ন হব।’’ র‌্যান্টির কোচ তাঁকে থামালেন। বললেন, ‘‘তোমরা সিনিয়ররা নিজেদের মধ্যে কথা বলো। সবার কাছে জানতে চাও, আমি বা ক্লাবের কাছ থেকে কী কম পাচ্ছ যে, ভাল খেলতে পারছ না। ঈশ্বর আমাদের আই লিগ জেতার রাস্তা তৈরি করে দিচ্ছে আর তোমরা সেই সুযোগ নষ্ট করছ।’’ একে একে কোচের মান ভাঙাতে এলেন মেহতাব হোসেন, সঞ্জু প্রধান, জোয়াকিম আব্রাঞ্চেসরা।

ডারেল ডাফিদের কাছে মঙ্গলের রাতে বিশ্রী হারের পর ইস্টবেঙ্গল তাঁবু অগ্নিগর্ভ। সনিদের পয়েন্ট নষ্ট হওয়ায় বিধ্বস্ত লাল-হলুদ শিবির সামান্য চাঙ্গা হয়ে উঠলেও কেন পুরো টিমটা ধসে গেল তা নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে টিম হোটেলে। রাতে ডিনার টেবিলে ফুটবলারদের সঙ্গে থাকেননি লাল-হলুদ কোচ। নিজের ঘরে বসেছিলেন। হার নিয়ে কথা বলেননি একজন ফুটবলারের সঙ্গেও। তীব্র রোদ আর গা পুড়ে যাওয়া গরমে সহকারী স্যামি ওমোলোকে নির্দেশ দিয়েছেন অনুশীলন করানোর। আর হোটেলে ফিরে তীব্র ভর্ৎসনা করেছেন পুরো টিমকে। কোচের ক্ষোভ আর রাগ দেখে মেন্ডি-বেলোদের মুখাবয়ব বদলে গিয়েছে। টিম মিটিং-এ বিশ্বজিৎ যা বলেছেন তা বেরিয়ে এসেছে কিছুক্ষণ পরেই। ‘‘আমি কী খেলেছি তোমরা অনেকেই জানো না। দেশের হয়ে। ক্লাবের হয়ে। কত গোল করেছি। তোমরা কী ভেবেছ? আমি তোমাদের আবদার মেনে নিই। বলো নিজেরা কে কে খেলতে চাও পরের ম্যাচে। সেই টিম নামাব। দেখি জিতে ফিরতে পারো কি না। এ রকম জঘন্য ফুটবল। আমি এখনও মাঠে নামলে ওই গোলগুলো করতে পারি। তোমরা পারছ না। এটা লজ্জার।’’ টিম হোটেল থেকে জানা গিয়েছে কোচের তোপের মুখে পুরো টিম মাথা নিচু করে থেকেছে। মেন্ডি থেকে বিকাশ জাইরু, বেলো রজ্জাক থেকে সঞ্জু প্রধান— সবাইকেই নাকি কোচের তীব্র কটাক্ষ সহ্য করতে হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বাসে করে পুণে যাওয়ার কথা ইস্টবেঙ্গলের। সেখানে পরের ম্যাচ শিবাজিয়ান্সের সঙ্গে। তার আগে টিমকে চাঙ্গা করতে সফল ম্যানেজারের মতো-ই ‘ওষুধ’ দিতে শুরু করেছেন দলের কোচ। জার্মানিতে লাইসেন্স করার সময় শিখে এসেছিলেন টিমকে চাঙ্গা করানোর এই টোটকা। সঞ্জয় সেনের টিমের পয়েন্ট নষ্ট করার সুযোগ নিতে চাইছেন বিশ্বজিৎ। যে করেই হোক। বলছিলেন, ‘‘আফসোস হচ্ছে, সালগাওকরকে হারাতে পারলেই মোহনবাগানকে ধরে ফেলতে পারতাম। আবার সুযোগ এসেছে। ওরা ড্র করায়। এই সুযোগটা নিতেই হবে। আমি তো আর গালাগালি করতে পারব না। মারতেও পারি না। সাফল্য পেলে ওদের নিয়েই পাব।’’ যে টিমটা বাগানের কাছে তিন গোল খেয়েছে তাদের কাছেই এ রকম বিশ্রী হার। কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না লাল-হলুদ কোচ। বলছিলেন, ‘‘ফুটবলার জীবনে ভগবান দুঃসময়ে আমার সঙ্গী হয়েছেন বারবার। এ বার কেন পাচ্ছি না কে জানে!’’

পুরো টিম কী ভাবে এ রকম হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল তা নিয়ে ফুটবলারদের মধ্যে একান্তে কথা বললে নানা রকম কারণ শোনা যাচ্ছে। ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠের জেনারেল বলছিলেন, ‘‘গরম আর আর্দ্রতা আমাদের শেষ করে দিল। আরও অবাক কাণ্ড, বিকাশ জাইরুর মতো ছেলে খেলার পর বলল, দৌড়তে পারছিল না। পা টেনে ধরছিল বাকি শরীর। পেনাল্টি আর বেলোর বেরিয়ে যাওয়াটা আরও ডুবিয়ে দিয়েছে। তবে প্রতিদিন তো এক রকম যায় না।’’ তার একটু আগেই র‌্যান্টি কোচের কাছে এসে বলে গিয়েছেন, ‘‘গরমে মেন্ডির মতো ফুটবলার চলবে না। বয়স বেশি। ভারতীয় ফুটবলারদের দায়িত্ব নিতে হবে।’’ আর এক ফুটবলারের মন্তব্য, ‘‘সালগাওকর অপেক্ষা করছিল দ্বিতীয়ার্ধের জন্য। ওরা বুঝে গিয়েছিল পরের দিকে মেন্ডি-বেলোরা এই গরমে খেলতে পারবে না।’’

পুরো টিম অনুশীলন করলেও বেলো রজ্জাক এবং মেন্ডি অনুশীলন করেননি। বসে ছিলেন ছায়ায়। বেলোর শরীর খারাপ। আর মেন্ডির পায়ে ফোসকা পড়েছে। জ্যাকিচন্দদের কাছে দৌড়ে বেসামাল হয়ে মাথা ঘুরে গিয়েছিল ভারতে বহু দিন খেলা বেলোরও। বিশ্বজিৎ বললেন, ‘‘ও রিজার্ভ বেঞ্চে আসার পর আঙুল গুনতে পারছিল না। রিস্ক নেব কী করে? আর সবাই ডং-এর কথা বলছে। ওকে তো আমি নামাতে যাচ্ছিলাম। ওটা প্ল্যানের মধ্যে ছিল। কিন্তু বেলো বেরিয়ে আসায় সব ওলট-পালট হয়ে গেল।’’

বাগান বা বেঙ্গালুরুর সঙ্গে খেতাব যুদ্ধে ফেরার লাল-হলুদ কোচের টোটকায় কিছু হয় কি না সেটাই দেখার! পুণেতে ম্যাচ অবশ্য রাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

east Bengal coach biswajit bhattacharya I-league
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE