Advertisement
E-Paper

আহা, মোহনবাগানের মতো যদি একটা বেঞ্চ থাকত ইস্টবেঙ্গলের

এয়ারপোর্ট থেকে সোজা চলে এসেছিলাম তিলক ময়দান স্টে়ডিয়ামে। সঙ্গে আমার সহকারী স্যামি ওমোলো। কলকাতায় মিডিয়াকে বলেছিলাম ইস্টবেঙ্গল টিমের সবার টিকিট একসঙ্গে পাইনি বলে আমরা দু’জন আগে গোয়া চলে যাচ্ছি। আসলে ব্যাপারটা তা নয়। এখানেই আমাদের মঙ্গলবার খেলতে হবে। সালগাওকরের সঙ্গেই। এই সফরে পরপর তিনটে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলার পরেই আছে ডার্বি।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩৪
দর্শক-গোয়েন্দা। তিলক ময়দানের গ্যালারিতে সহকারী স্যামি ওমোলোকে নিয়ে কর্নেলের ভেল্কি দেখলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। শনিবার। ছবি: উৎপল সরকার

দর্শক-গোয়েন্দা। তিলক ময়দানের গ্যালারিতে সহকারী স্যামি ওমোলোকে নিয়ে কর্নেলের ভেল্কি দেখলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। শনিবার। ছবি: উৎপল সরকার

এয়ারপোর্ট থেকে সোজা চলে এসেছিলাম তিলক ময়দান স্টে়ডিয়ামে। সঙ্গে আমার সহকারী স্যামি ওমোলো।

কলকাতায় মিডিয়াকে বলেছিলাম ইস্টবেঙ্গল টিমের সবার টিকিট একসঙ্গে পাইনি বলে আমরা দু’জন আগে গোয়া চলে যাচ্ছি। আসলে ব্যাপারটা তা নয়। এখানেই আমাদের মঙ্গলবার খেলতে হবে। সালগাওকরের সঙ্গেই। এই সফরে পরপর তিনটে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলার পরেই আছে ডার্বি। সঞ্জয়ের টিম এএফসি কাপে পাঁচ গোল করে আসার পর গ্যালারিতে বসে স্বচক্ষে দেখতে চেয়েছিলাম সনি-কাতসুমিরা কেমন ফর্মে খেলছে! সে কারণেই শনিবারের ম্যাচটা দেখা দরকার ছিল।

কে একজন যেন বলেছিল, এটা মোহনবাগানের নাকি অপয়া মাঠ। আর সালগাওকর নাকি সব সময় গাঁট ওদের। আমরা মোহনবাগানের পিছন পিছন দৌড়চ্ছি আই লিগ জেতার জন্য। তাই ওই কথাগুলো শুনে যে ভাল লাগেনি বললে মিথ্যে বলা হবে। ভেবেছিলাম এ দিনের ম্যাচে যদি ওদের দু’টো পয়েন্টও যায় তা হলেও সুবিধে আমাদেরই। কিন্তু ম্যাচ শেষে আমাদের টিম হোটেলে ফেরার সময় মনে হচ্ছিল, বাগানের প্রথম টিম ছেড়েই দিন, ওদের রিজার্ভ বেঞ্চেরও যা শক্তি তাতে আমাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে থামানো অসম্ভব বলছি না, তবে কঠিন। বেশ কঠিন। মোহনবাগান কিন্তু ন’ম্যাচের পর টেবল টপার-ই রয়ে গেল। অপরাজিত থেকে। আমাদের রক্তচাপ বাড়িয়ে।

যা দেখলাম তাতে এখন আমাদের বাকি সব ম্যাচকেই ধরতে হবে ফাইনাল। জিততেই হবে। আর অপেক্ষায় থাকতে হবে কবে সঞ্জয়ের টিম পয়েন্ট নষ্ট করে। গত বার লিগে এক ডজন ম্যাচের পর সনি-কাতসুমিরা হেরেছিল। এ বার কবে, কে জানে? খারাপ কিছুর কোনও লক্ষণ তো এখনও দেখা যাচ্ছে না!

মোহনবাগান যে আই লিগ আর এএফসি মিলিয়ে দু’-তিন দিন অন্তর ম্যাচ খেলছে এবং জিতে চলেছে সেটা কিন্ত ওদের শক্তিশালী বেঞ্চের কল্যাণে। এ দিনই দেখুন না, ডিফেন্সে লুসিয়ানো আর মাঝমাঠে প্রণয় ছিল না কার্ডের জন্য। ম্যাচে বুঝতে পেরেছে কেউ? উল্টো দিকে ডাফির মতো স্ট্রাইকার। আই লিগে এখনও হায়েস্ট স্কোরার। সঞ্জয় ঠিক নামিয়ে দিল মাঝমাঠে লেনি আর স্টপারে সঞ্জয় বালমুচুকে। ডাফি সামলাতে। আর কী দারুণই না সামলাল ওরা! একবারও বুঝতে দিল না নিজেদের দু’জন নির্ভরযোগ্য ফুটবলার মাঠে নেই। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি ডাফি একটা গোল করলেও ততক্ষণে ম্যাচ কার্যত শেষ। প্রথমার্ঝেই তো ম্যাচ পকেটে পুরে নিয়েছিল সঞ্জয়ের দল।

কর্নেল গ্লেন ম্যাচের সেরা হল। আই লিগে এখন ম্যাচ কমিশনাররা সেরা ফুটবলার বাছছেন বলে শুনেছি। কিন্তু নির্বাচনটা ঠিক হল না। গ্লেন নয়, ওটা পাওয়া উচিত ছিল লেনির। অভিজ্ঞ ফুটবলার। জাতীয় দলে বহু দিন খেলে এসেছে। দু’টো পা-ই দারুণ চলে। নিখুঁত পাসিং। বল দিয়ে আবার সেটা নেওয়ার জন্য ফাঁকা জায়গা নিতে পারে। কত বল বাড়াচ্ছিল। মোহনবাগানের তিনটে গোলের পিছনেই লেনির কিছু না কিছু অবদান। মজা হল, সঞ্জয় এখন কী করবে? মঙ্গলবার স্পোর্টিং ক্লুব ম্যাচে লেনিকে বসাবে? প্রণয়কে খেলাবে? নাকি না? এই সমস্যা আমারও আছে। তবে এতে নিজের টিমের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ে। কিন্তু বেচারা কোচকে ধাঁধায় পড়তে হয়।

সালগাওকর টিমটা মাঝের ক’দিনে এত খাজা হয়ে গেল কী করে বুঝতে পারছি না। এই তো কিছু দিন আগেই বারাসতে আমাদের সঙ্গে শেষ ম্যাচে একটা সময় ১-১ করে দিয়েছিল। বেলো সেই গোলের হেডটা না নিলে শেষ পর্যন্ত কী যে হত ভাবলে এখনও মাঝেমধ্যে বুক কাঁপে। আর এ দিন কী খেলল ওরা! স্টেডিয়ামের ভিআইপি বক্সে আমার পাশে বসেছিল আমার ফুটবলারজীবনের বন্ধু কাম প্রিয় দাদা ব্রহ্মানন্দ। দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা গোলকিপার। গোয়া ফুটবলের অন্যতম মুখ। ব্রহ্মাদাকেও দেখলাম সন্তোষ কাশ্যপের দলকে দেখে হতাশ। শান্ত স্বভাবের মানুষ। এখন গোয়ার কোচেস কমিটিতে আছে। সে-ও গ্লেন-জেজেদের সামনে নিজের প্রিয় পুরনো ক্লাবের শুরু থেকেই আত্মসমর্পণ দেখে বিরক্তি প্রকাশ করছিল। সত্যসেন আর স্কটরা বারাসতে আমাদের বিরুদ্ধে কী না খেলেছিল! অথচ আজ কিছুই করতে পারেনি।

সন্তোষ কোচ খারাপ নয়। কিন্তু নিজের দলের অবনমন বাঁচাতে যে ম্যাচটা জেতা প্রচণ্ড ভাবে দরকার সেখানে ১-২-৩-৪ ফর্মেশন কেন? ডাফি একমাত্র স্ট্রাইকার। সালগাওকর কোচ কী ভেবেছিল কে জানে। ডাফি গোল করছে প্রচুর। ও তো বিপক্ষের টার্গেট হবেই। তা সত্ত্বেও ওকে একা ছেড়ে দেওয়া হল? জানি না বাবা, কী স্ট্র্যাটেজি! ডাফির বলের সাপ্লাই লাইন সহজেই কেটে দিচ্ছিল লেনি-কাতসুমিরা। একের বিরুদ্ধে দুই হলে যা হয় আর কী! আর তাতে হতাশ হয়ে যা করল ডাফি! নিজেদের রিজার্ভ বেঞ্চে এসে গালাগাল পর্যন্ত দিল বলের যোগান না পেয়ে। ম্যাচের পর এখানে আমার চেনাপরিচিতদের কাছে জানলাম, ডাফি নাকি হাফটাইমে ড্রেসিংরুমে ঢুকে জলের বোতলে, চেয়ারে লাথি মেরে স্টেডিয়াম ছেড়েই বেরিয়ে গিয়েছিল! বাড়ি চলে যেতে চাইছিল। সবাই এসে ধরেবেঁধে আবার মাঠে নামায়। তবে ছেলেটার কপাল আছে। একটা গোল তো করে দিল! ন’ম্যাচে ন’গোল।

সঞ্জয়ের টিম বোধহয় ভাবেনি এ রকম মিইয়ে থাকা সালগাওকরকে পেয়ে যাবে। শেষের পাঁচ মিনিট আবার গোয়ার টিমটা দশ জন হয়ে গেল। লাল কার্ডে। হাফটাইমের আগেই ৩-০ এগিয়ে যায় বাগান। এবং সত্যি বলতে, বড় ‘লিড’ নিতে গড়ার সেভাবে পরিশ্রম-ই করতে হয়নি গ্লেনদের। সনিকে ধরতে গিয়ে আরও ডুবেছিল সালগাওকর। জানে না, সনি আটকালে মোহনবাগানে আরও অনেক ফুটবলার আছে। যারা ম্যাচ জেতাতে পারে। নিজে বড় দলের কোচ হিসেবে আরও ভাল বুঝছি, সঞ্জয়ের পক্ষে এ দিন সবচেয়ে ভাল হল, ওর দুই স্ট্রাইকারই গোল পেয়ে যাওয়ায়। জেজে ধারাবাহিক ভাল খেলছে। কর্নেল জোড়া গোল করল। হ্যাটট্রিকও পেতে পারত। ওকে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছিল। সঞ্জয় শুনলাম ম্যাচের পর সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছে, ‘‘গ্লেনের খেলায় খুশি। বারো ম্যাচে যে স্ট্রাইকার আট গোল করে তার সমালোচনা হবে কেন? ওয়েন রুনি তো এ বার ২৮ ম্যাচে ৮ গোল করেছে।’’ একদম ঠিক তুমি সঞ্জয়। গোল ছাড়া স্ট্রাইকারের কাছে অন্য আর কিচ্ছু প্রত্যাশা করে না কোচ। আমি নিজেও র‌্যান্টির কাছে তাই-ই করি।

তিন দিন পরেই সালগাওকরের সঙ্গে খেলব আমরা। সে দিন ওরা যাতে এ দিনের মতোই খেলে সেই প্রার্থনা করি। যাতে আমরাও তিন গোল মারতে পারি। গোয়ার মাঠে এ রকম একচ্ছত্র শাসন বাংলার টিমগুলো আসলে অনেক দিন যে করেনি! সঞ্জয়ের টিমের এই বড় জয়টা আরও একটা কাজ করল। ওডাফার স্পোর্টিংয়ের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে তুলে দিল মোহনবাগানের। পরপর ম্যাচ জিতলে সব টিমেরই যা হয় আর কী!

পুনশ্চ: এটা শনিবার রাতে কল্পিত ডায়েরি বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের। যেটা সত্যি হলে হয়তো এ রকমই লিখতেন এ দিন মাঠে বসে মোহনবাগান-সালগাওকর ম্যাচ দেখা ইস্টবেঙ্গল কোচ।

মোহনবাগান: দেবজিৎ, রাজু, সঞ্জয়, কিংশুক, ধনচন্দ্র (প্রবীর), ব্র্যান্ডন (বিক্রমজিৎ), কাতসুমি, লেনি, সনি, জেজে, কর্নেল (শৌভিক)।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy