Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
ইস্টবেঙ্গল-১ (আদিলেজা) : এরিয়ান-০

সাতে সাতের পরে এ বার অনন্য নজির ইস্টবেঙ্গলের

আরও একটা রেকর্ড। আবার ইতিহাসে ইস্টবেঙ্গল! এ বার ভারতের সেই প্রথম ক্লাব হিসেবে, যারা তিন-তিন বার কোনও লিগের সব ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন। রবিবার ডং-অর্ণবরা বারাসত স্টেডিয়ামের রং বদলে দিলেন লাল-হলুদে। আকাশে যে রামধনুটা এ দিন উঠেছিল, তাতেও যেন লাল রংটা বড় বেশি গাঢ়। যেন প্রকৃতিও সামিল ইস্টবেঙ্গল-উৎসবে।

কলকাতা ফুটবলের রং লাল-হলুদ। রবিবার বারাসতে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

কলকাতা ফুটবলের রং লাল-হলুদ। রবিবার বারাসতে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

তানিয়া রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:১৬
Share: Save:

আরও একটা রেকর্ড। আবার ইতিহাসে ইস্টবেঙ্গল!

এ বার ভারতের সেই প্রথম ক্লাব হিসেবে, যারা তিন-তিন বার কোনও লিগের সব ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন।

রবিবার ডং-অর্ণবরা বারাসত স্টেডিয়ামের রং বদলে দিলেন লাল-হলুদে। আকাশে যে রামধনুটা এ দিন উঠেছিল, তাতেও যেন লাল রংটা বড় বেশি গাঢ়। যেন প্রকৃতিও সামিল ইস্টবেঙ্গল-উৎসবে।

শ্যামনগর থেকে ভাঙা হাত নিয়ে এসেছিল লাল-হলুদের এক খুদে ভক্ত। গোটা মুখে আবির মেখে ভাঙা হাত নিয়েই বাই-বাই করে ছুটছিল সে। এক বার শুধু মেহতাবকে ছুঁয়ে দেখবে! ‘‘সাতে সাত আমাদের বেঙ্গল’’— চিৎকার করতে করতে যাঁরা নাগাড়ে ড্রাম বাজাচ্ছিলেন, টিম বাস বেরনোর সময় দেখা গেল, রাস্তায় শোভা যাত্রা করে বাসের আগে আগে চলেছেন তাঁরা।

আবীর, মশাল, বাজি, ফুটবলারদের নিয়ে সমর্থকদের উচ্ছ্বাস— এত উৎসবের মাঝেও কিন্তু একটা অপ্রাপ্তির বেদনায় কোথায় যেন তাল কেটে যাচ্ছিল বারবার!

যে টিম টানা সাত বার কলকাতা লিগ জেতার রেকর্ড করেছে, রবিবার আদিলেজার গোলে এরিয়ানকে হারিয়ে ৩৯ বছর পর ফের সব ম্যাচ জিতে লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ইতিহাস রচনা করেছে, সেই ইস্টবেঙ্গল টিমের অপ্রাপ্তি কীসের? কীসের এত আক্ষেপ?

ব্যাখ্যাটা দিলেন ইস্টবেঙ্গলের প্রধান দুই ফুটবলার। ম্যাচের পর অর্ণব মণ্ডল বলছিলেন, ‘‘কলকাতা লিগের রেকর্ড তো নিঃসন্দেহে বড় ব্যাপার। কিন্তু আমাদের কাছে আই লিগ এখনও অধরা। সেই ট্রফি না জিতে উৎসব করব কী করে?’’ এর সঙ্গে মেহতাব যোগ করলেন, ‘‘এ বার তো ডার্বিও খেলা হল না। ওই ম্যাচটাও জিততে পারলে হয়তো আরও ভাল লাগত।’’

সে কারণেই বোধহয় রবিবার ফুটবলারদের সে ভাবে উচ্ছ্বাসে ভাসতে দেখা গেল না। ম্যাচের পর ভিকট্রি ল্যাপ দিলেও তাতে কোনও প্রাণ ছিল না। এ দিন বারাসতে হাজার পাঁচেক সমর্থক এসে হইহই করলেন বটে, তবু ময়দানের পরিচিত বাঁধভাঙা উন্মাদনাটা তা যেন স্পর্শ করল না।

৩৯ বছর আগে ইস্টবেঙ্গলের যে টিম সব ম্যাচ জিতে কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, সেই টিমের অন্যতম প্রধান নায়ক মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘‘আমাদের খেলা হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল মাঠে। সকাল থেকে লাইন পড়ে গিয়েছিল খেলা দেখার। ম্যাচের পরেও উন্মাদনা যেন শেষই হচ্ছিল না। তা ছাড়া সেই সময় আমাদের লম্বা লিগ চলত। অনেক বেশি টিম খেলত।’’ ১৯৭৭-এর টিমের এক প্রধান সদস্য সমরেশ চৌধুরি এ দিন রীতিমতো নস্ট্যালজিক। বলছিলেন, ‘‘মাঠে সমর্থকরা উৎসব করত। ড্রেসিংরুমে ফিরে আমরাও সেলিব্রেশন করতাম। বাড়ি ফেরার সময় তো ক্লাব থেকে ইডেনের সামনে বটতলা পর্যন্ত হাঁটত হত না। লোকের ঘাড়ে চেপেই চলে যেতাম। এখন সেই আবেগ কোথায়?’’

এটা ঘটনা, কলকাতা লিগ পুরনো আভিজাত্য হারিয়েছে। আবেগও প্রায় তলানীতে এসে ঠেকেছে। হয়তো সে কারণেই রেকর্ড গড়ে লিগ চ্যাম্পিয়ন হলেও বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস ছিল না লাল-হলুদে। বরং জয়ের আনন্দের মাঝেই সমর্থকদের আকুল আর্তি ফুটবলারদের কাছে, ‘‘আই লিগটা এ বার এনে দাও। নয়তো ওদের কাছে (মোহনবাগান) মুখ দেখাতে পারব না।’’

প্রায় বারো বছর আই লিগ না পাওয়ায় ফুটবলার এবং সমর্থকদের আক্ষেপ থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে এ বারের রেকর্ডের লিগকে স্মরণীয় রাখতে উদ্যোগী হচ্ছেন ক্লাব কর্তারা। ১৯৭৭-এর ইস্টবেঙ্গল কোচ অমল দত্তকে এ বারের লিগ উৎসর্গ করার কথা ভাবছেন তাঁরা। লাল-হলুদের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার বললেন, ‘‘এ রকম ভাবনাচিন্তা আমরা করছি ঠিকই। তবে সবার সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’’

ইস্টবেঙ্গল: দিব্যেন্দু, সামাদ, অর্ণব, কৌশিক, রবার্ট, লালরিন্দিকা, মেহতাব, অবিনাশ, বিকাশ (প্রহ্লাদ), আদিলেজা, ডং (নিখিল)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CFL East Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE