Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ

জিতলেও তৈরি নয় ইস্টবেঙ্গল

কলকাতা লিগের প্রথম ম্যাচ জয়ের রাস্তায় মশালধারীদের উচ্ছ্বাসের কোলাজ লিখতে বসলে, সেনেগালের কাসিম আইদারার প্রথম গোলের পরের উৎসবের আকাশচুম্বি লাফটাও আসবে।

নায়ক: গোলের পরে উল্লাস লালরিন্দিকা রালতের। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।

নায়ক: গোলের পরে উল্লাস লালরিন্দিকা রালতের। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১৬
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গল ২ • পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ০

গলায় লাল-হলুদ উত্তরীয় পরে বিশ্বকাপার জনি আকোস্টা যখন সমর্থকদের আশ্বস্ত করতে মাঠে ঘুরলেন, তখন গ্যালারিতে উচ্ছ্বাসের তরঙ্গ উঠল। সোমবার সন্ধ্যায় কোস্টা রিকার ফুটবলারের বিস্ময় মাখানো মুখ দেখে মনে হল, তিনি ভাবেনইনি মাঠে না নেমেও এই সংবর্ধনা পেয়ে যাবেন!

দেড় বছর পরে ফের ইস্টবেঙ্গল জার্সিতে ফিরে লালরিন্দিকা রালতে প্রথম ম্যাচে নেমেই গোল পেয়ে যাবেন, সেটাও কী ভেবেছিলেন? না হলে ম্যাচের পরে কেন মুখ থেকে বেরোবে, ‘‘কবে শেষ গোল করেছি মনে করতে পারছি না। তবে গোলের পরে যে ভাবে গ্যালারি চিৎকার করে আমাকে সমর্থন জানিয়েছে তাতে অবাক। গোলটা ওদেরই উৎসর্গ করছি।’’

কলকাতা লিগের প্রথম ম্যাচ জয়ের রাস্তায় মশালধারীদের উচ্ছ্বাসের কোলাজ লিখতে বসলে, সেনেগালের কাসিম আইদারার প্রথম গোলের পরের উৎসবের আকাশচুম্বি লাফটাও আসবে। আবার জয় শেষে সুভাষ ভৌমিকের দলের গ্যালারির সঙ্গে মিশে গিয়ে ‘ভাইকিং ক্ল্যাপ’-এর কথাও বলতে হবে। যে ভাবে সারাক্ষণ গান গেয়ে, হলুদ আবির উড়িয়ে দেওয়া সমর্থকদের সঙ্গে মিলে সামাদ আলি, লালরাম চুলোভারা তালে তালে হাততালি দিলেন, তা কয়েক সপ্তাহ আগে দেখা গিয়েছে রাশিয়ার মাঠে।

ইস্টবেঙ্গল সোমবার দু’গোলে জিতল। দুটো গোলই বিরতির আগে। আরও কয়েকটি গোলও পেতে পারতেন ডিকা, বিদ্যাসাগর সিংহরা। সবই ঠিক। কিন্তু নির্বিষ একটা দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামা লাল-হলুদ জার্সির সেই ঔজ্জ্বল্য বা জেদি মনোভাবটাই যে পাওয়া গেল না। গতিহীন এবং স্লথ তো লাগলই। গোলের কাছে গিয়ে লাল-হলুদ জার্সির খেই হারিয়ে ফেলার পাশাপাশি ছিল মিস পাসের ছড়াছড়ি। বোঝাই যাচ্ছিল, জিতলেও ইস্টবেঙ্গল এখনও অপ্রস্তুত।

সুভাষ ভৌমিকের দলের প্রতিপক্ষ এ দিন ছিল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। দলে কোনও বিদেশি নেই। যাঁরা খেলছেন সেই প্রশান্ত সরকার, সুব্রত বিশ্বাসদের গড় বয়স ৩৪-৩৫। সেই কবে, দশ বছর আগে বেশিরভাগেরই চাকরি হয়েছিল। তারপর লাঠি বা বন্দুক হাতে শান্তিরক্ষার কাজ করার পাশাপাশি ফুটবল খেলে চলেছেন ওঁরা। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে অশোক চক্রবর্তীর দল তাই নেমেছিল কার্যত ‘অস্ত্র’ ছাড়াই। নব্বই মিনিটে পুলিশ মাত্র একটা শট ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার রক্ষিত দাগারের হাতে পাঠিয়েছে। বাকি সময় প্রতিপক্ষকে রুখে দেওয়ার খেলা খেলে গিয়েছেন প্রদীপ হেমব্রমরা। কখনও সাত, কখনও আট জন ভিড় করেছেন নিজেদের গোলের সামনে।

কিন্তু এ রকম একটা শক্তিহীন দলের বিরুদ্ধে নেমে ইস্টবেঙ্গলের একমাত্র স্ট্রাইকার বালি গগনদীপ কী করলেন? ন’বার অফসাইডের কবলে পড়লেন! বিপক্ষের গোলে মারলেন মাত্র দু’টো শট। লালরাম চুলোভা এবং সামাদ আলি মল্লিকের দু-একটা ওভারল্যাপ ছাড়া উইং দিয়ে আক্রমণই হল না মশালবাহিনীর! হাতে স্ট্রাইকার না থাকায় লালরিন্দিকাকে নতুন পজিশনে খেলাচ্ছেন সুভাষ। সাপোর্টিং স্ট্রাইকার হিসাবে। চোট সারিয়ে ফেরা ফুটবলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাঁর নতুন জায়গায় মানাতে সময় লাগবে। ইস্টবেঙ্গল কোচ বাস্তব রায় অবশ্য বললেন, ‘‘প্রথম ম্যাচ হিসাবে দল যা খেলেছে তাতে আমি খুশি।’’ শেষ বাইশ মিনিট মাঠে নেমেছিলেন আল আমনা। তিনি নেমেও দ্বিতীয়ার্ধে গোলের সংখ্যা বাড়াতে পারেননি। কাদা শুকিয়ে যাওয়া মাঠে সিরিয়ার মিডিও জাগাতে পারেননি সতীর্থদের।

ইস্টবেঙ্গল: রক্ষিত দাগার, সামাদ আলি মল্লিক, মেহতাব সিংহ, কিংশুক দেবনাথ, লালরাম চুলোভা, কমলপ্রীত সিংহ, কাসিম আইদারা, লালরিন্দিকা রালতে (আল আমনা), লালদামুইয়া রালতে, ব্যান্ডন ভালরামরামডিকা (বিদ্যাসাগর সিংহ), বালি গগনদীপ (সুরাবুদ্দিন)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

East Bengal Football Lalrindika Ralte CFL
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE