বাথরুমের পাশে ব্যাগের উপর বসে নারায়ণ দাস (বাঁ দিকে)। মোহনবাগান সমর্থকদের সেলফির আবদার মেটাচ্ছেন মহম্মদ রফিক (ডান দিকে)।
হেরেছো তো মরেছো! মনোভাবটাই যেন এমন।
আর সেখান থেকেই প্রশ্ন উঠছে, এটা কি হারের সাজা? নাকি শুধুই টিকিট না পাওয়া?
ডার্বি হেরে সোমবার ট্রেনের জেনারেল কামরায় যে ভাবে শহরে ফিরতে হল ইস্টবেঙ্গলের তারকা প্লেয়ারদের, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ক্লাব কর্তৃপক্ষের মানসিকতা। যদিও খেলোয়াড়রা বলছেন, ট্রেনে টিকিট না পাওয়ার কারণেই এই অবস্থা। ‘লজ্জা’র আরও বাকি ছিল। পর পর ডার্বি-হার যখন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের কাঁদাচ্ছে, তখন বিপক্ষ শিবিরের সমর্থকরাই রফিক, নারায়ণ, মেহতাবদের সম্মান দিয়ে বসার জায়গা ছেড়ে দিলেন। আর এখানেও উঠছে প্রশ্ন। ম্যাচ হেরে গেলেই কি এ ভাবে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া যায় খেলোয়াড়দের সম্মান? নাকি তাঁদের এ ভাবে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া যায়?
আরও খবর: এঁরাও অলিম্পিক্সে গিয়েছিলেন, ফিরতে হল ট্রেনের মেঝেতে!
কী হয়েছিল এ দিন?
ট্রেনের বাতানুকুল কামরায় রাতারাতি রিজার্ভেশন পাওয়া যায়নি। কিন্তু, তাতে কী? ইস্টবেঙ্গল দলকে তো ফিরতেই হবে। না হলে হোটেল ভাড়া দিতে হবে যে ক্লাব কর্তৃপক্ষকে! তাই প্রায় মালপত্তরের মতোই যেন উঠে পড়া! বলা ভাল, উঠতে বাধ্য হওয়া। জেনারেল টিকিট কেটে তাই উঠে পড়েছিলেন মেহতাব হোসেন, অর্ণব মণ্ডল, মহম্মদ রফিক, শুভাশিস রায়চৌধুরী, নারায়ন দাসেরা। সঙ্গে ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার কোচ অভিজিৎ মণ্ডলও। রফিককে দেখা গেল শৌচাগারের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। মোহনবাগান সমর্থকরা ডেকে বসতে বললেও ‘লজ্জা’য় তিনি যেতে পারেননি। নারায়ণকে দেখা যায়, ট্রেনের শৌচাগারের পাশে ব্যাগের উপর বসে থাকতে।
কটক স্টেশনে ট্রেন ধরার আগে অর্ণব, নারায়ণরা।
ভারতীয় খেলার দুনিয়ায়, এমনটা যদিও এর আগেও হয়েছে। গত বছরের অগস্টে রিও থেকে ফিরেছিলেন ভারতীয় মহিলা হকি দল। রিও থেকে দিল্লি হয়ে অ্যাথলিটরা ফিরছিলেন যে যাঁর বাড়িতে। তাঁদের কারও হাতে ছিল পদক, কেউ বা পদকের খুব কাছে পৌঁছেও ব্যর্থ। সেই সময় দেখা গিয়েছিল, ধানবাদ-আলেপ্পি এক্সপ্রেসের মেঝেতে বসে বাড়ি ফিরছেন মহিলা হকি দলের চার খেলোয়াড়। দল কবে ফিরবে জানা ছিল না। তাই আগে থেকে রিজার্ভেশন করানো ছিল না। ভেবেছিলেন, কোনও ভাবে টিটিইকে বলে আসনের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। কিন্তু, হয়নি। চার খেলোয়াড় রেল কর্মী দীপা গ্রেস এক্কা, মনিতা টোপ্পো, সুনীতা লাকরা ও লিলিমা মিঞ্জের শেষ পর্যন্ত জায়গা হয়েছিল ওই ট্রেনের মেঝেতে। অথচ ভারতীয় মহিলা হকি দলের ওই খেলোয়াড়েরা ৩৬ বছর পর অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন।
জায়গা পেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন মেহতাব, শুভাশিস (বাঁ দিক)। মোহনবাগান ভক্তদের সেলফির আবদার মেটাচ্ছেন অর্ণব (ডান দিক)।
এ দিন ঠিক একই রকম ভাবে ট্রেনের কামরায় মেহতাব, নারায়ণদের দেখা গেল মেঝেতে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে থাকতে। ঘুমিয়েও পড়লেন কেউ কেউ। এক তো হারের হতাশা, সঙ্গে কটকের গরমে পর পর ম্যাচ খেলার ক্লান্তি। তার পর এ ভাবে ফেরা। খেলোয়াড়রা বলছেন, দ্রুত ফিরতে হত বলেই এ ভাবে ট্রেনে উঠে পড়েছেন তাঁরা। কিন্তু নাম না করে অনেক খেলোয়াড়ই বলছেন, কর্তারা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগই করেননি। বরং তাঁরা নিজেরাই টিকিট কেটে ফেরার ব্যবস্থা করেন। মেহতাবের দাবি, এসি কামরায় টিকিট না পাওয়ার কারণেই এ ভাবে আসতে হয়েছে কটক থেকে। শুভাশিসের বক্তব্য, কর্তাদের কোনও দোষ নেই। তাঁদেরই তাড়াতাড়ি আসার দরকার ছিল বলেই তাঁরা ট্রেনে করে চলে এসেছিলেন অনুমতি নিয়ে। কর্তারা দলের জন্য বাস পাঠিয়েছে। তাতে অনেকেই ফিরছে। ট্রেনে যাঁরা এলেন, তাঁরা এ ভাবেই কলকাতা পৌঁছলেন। আর বাকি খেলোয়াড়দের তুলে দেওয়া হল বাসে। কটক থেকে বাসে কলকাতায় কত ক্ষণে তাঁরা এসে পৌঁছবেন? কেউ জানেন না।
আর মোহনবাগান?
মঙ্গলবার বিমানে চেপে শহরে ফিরবে তারা। এএফসি কাপ খেলে আবার ফিরে যাবে কটকে ফাইনাল খেলতে। সেই জায়গায় ইস্টবেঙ্গল খেলোয়াড়দের অবস্থা আরও এক বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, ক্লাব কর্তৃপক্ষের মানসিকতা।
-নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy