Advertisement
E-Paper

দু’গোলে পিছিয়েও ড্র ইস্টবেঙ্গলের, শেষ মুহূর্তে নাটকীয় বদল ম্যাচের

রবিবাসরীয় যুবভারতীতে প্রায় ৬৬ হাজার দর্শক দেখলেন প্রবল আত্মবিশ্বাসে ভর করে পিছিয়ে থাকা মহম্মদ আল আমনারা যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তখন আত্মতুষ্টির কাঁটায় কী ভাবে বিদ্ধ হচ্ছেন দিপান্দা ডিকারা।

শুভজিৎ মজুমদার

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৪
নায়ক: মোহনবাগানকে এগিয়ে দিয়ে উচ্ছ্বাস পিন্টু মাহাতোর (বাঁ দিকে)। ব্যবধান কমিয়ে ইস্টবেঙ্গলের জনি আকোস্তার উল্লাস। ছবি: সুদীপ্ত ভোমিক

নায়ক: মোহনবাগানকে এগিয়ে দিয়ে উচ্ছ্বাস পিন্টু মাহাতোর (বাঁ দিকে)। ব্যবধান কমিয়ে ইস্টবেঙ্গলের জনি আকোস্তার উল্লাস। ছবি: সুদীপ্ত ভোমিক

মোহনবাগান ২ • ইস্টবেঙ্গল ২

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে নাটকীয় প্রত্যাবর্তন। কিন্তু বঙ্গজীবনকে দু’ভাগে বিভক্ত করে দেওয়া ডার্বি নিষ্ফলাই থাকল।

রবিবাসরীয় যুবভারতীতে প্রায় ৬৬ হাজার দর্শক দেখলেন প্রবল আত্মবিশ্বাসে ভর করে পিছিয়ে থাকা মহম্মদ আল আমনারা যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তখন আত্মতুষ্টির কাঁটায় কী ভাবে বিদ্ধ হচ্ছেন দিপান্দা ডিকারা। ম্যাচের ফলের মতো দু’টো অর্ধ যেন ভাগ করে নিয়েছিল দুই প্রধান। প্রথমার্ধ মোহনবাগানের। দ্বিতীয়ার্ধ ইস্টবেঙ্গলের।

সবুজ-মেরুনের দুই স্ট্রাইকার দিপান্দা ও হেনরি কিসেক্কাকে আটকাতে ইস্টবেঙ্গলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সুভাষ ভৌমিকের অস্ত্র যে রক্ষণাত্মক রণনীতি, ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কারণ, দলে যোগ দিয়েছেন কোস্টা রিকার হয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা জনি আকোস্তা। এ দিন সামনে একা জবি জাস্টিনকে রেখেই শুরু করেছিল ইস্টবেঙ্গল। অর্থাৎ, কোনও মতেই হারা চলবে না।

ভাবনা আর বাস্তবের মধ্যে ফারাকটা দ্রুত স্পষ্ট হয়ে ওঠে। লাল-হলুদ শিবিরের প্রধান উদ্বেগ ছিল মোহনবাগানের দুই বিদেশি স্ট্রাইকারকে নিয়ে। কিন্তু সুভাষ ভাবতেও পারেননি, তাঁর ‘শিষ্য’ প্রতিপক্ষের কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী এ দিন অস্ত্র করবেন পিন্টু মাহাতো, ব্রিটো পিএম, অরিজিৎ বাগুইয়ের মতো এক ঝাঁক তরুণকে। ২০ মিনিটে অরিজিতের পাস থেকেই গোল করে মোহনবাগানকে এগিয়ে দিয়ে ডানার মতো দু’হাত ছড়িয়ে গ্যালারির দিকে দৌড়লেন জঙ্গলমহলের পিন্টু।

যুবভারতীতে ম্যাচ দেখতে দেখতে ভারতীয় ফুটবলের প্রাক্তন তারকা ত্রয়ী সমরেশ চৌধুরী, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় ও কম্পটন দত্ত বলছিলেন, ‘‘ভুল পরিকল্পনার জন্যই ডুবছে ইস্টবেঙ্গল। মোহনবাগান শুরু থেকেই দুই প্রান্ত থেকে আক্রমণ করছে। ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের উচিত ছিল, প্রান্ত দিয়েই পাল্টা আক্রমণ করা। ওরা তা না করে রক্ষণে নেমে আসছে। এ ভাবে খেললে কিন্তু ম্যাচ বাঁচানো কঠিন হবে।’’ ৩০ মিনিটে ফের গোল। এ বার মোহনবাগানকে এগিয়ে দেন হেনরি। ডান দিক থেকে উড়ে আসা অরিজিতের সেন্টার ঠান্ডা মাথায় জালে জড়িয়ে দেন তিনি।

সবুজ-মেরুন শিবিরে নয় বছর পরে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন। ইস্টবেঙ্গলে ফের ডার্বি-হারের আতঙ্ক।

তখনও বোঝা যায়নি প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মুহূর্তে নাটকীয় ভাবে বদলাতে শুরু করবে ম্যাচের ভাগ্য। ৪০ মিনিটে কমলপ্রীত সিংহের পরিবর্তে লালরিনডিকা রালতেকে নামান সুভাষ। তখনই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে ইস্টবেঙ্গল। আক্রমণের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন ডিকা। সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ছন্দে ফিরলেন আমনাও। তার পরেই ঝাঁঝ বাড়ল লাল-হলুদ আক্রমণে। প্রথমার্ধের সংযুক্ত সময়ে মোহনবাগান গোলরক্ষক শিল্টন পালের হাত থেকে বেরিয়ে আসা বল গোলে ঠেলে দিয়ে ব্যবধান কমান আকোস্তা। অভিষেক ম্যাচে দুর্দান্ত না খেললেও গোল করে সমর্থকদের মন জয় করে নিলেন তিনি। উচ্ছ্বসিত ভাস্কর ও সমরেশ বলেছিলেন, ‘‘প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে এই গোলটাই ইস্টবেঙ্গলকে মানসিক ভাবে উদ্বুদ্ধ করবে। আত্মবিশ্বাস ফেরাবে। কারণ, ০-২ পিছিয়ে থাকলে দ্বিতীয়ার্ধে চাপ আরও বাড়ত। তবে আমনাদের খেলার ধরন বদলাতে হবে। রক্ষণাত্মক খেললে হবে না।’’

বিরতির সময়ে ড্রেসিংরুমে সতীর্থদের উজ্জীবিত করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন ডিকা। প্রথমার্ধের ভুল আর দ্বিতীয়ার্ধে করেননি সুভাষ। কিন্তু ভুলটা করলেন শঙ্করলাল। ৫৩ মিনিটে মিডফিল্ডার শিল্টন ডি’সিলভাকে তুলে নামালেন মেহতাব হোসেনকে। অঙ্কটা পরিষ্কার— ইস্টবেঙ্গল যাতে গোল করতে না পারে, তাই রক্ষণ শক্তিশালী করা। কিন্তু মাঠে নামার কয়েক মিনিটের মধ্যেই চোট পেয়ে বেরিয়ে গেলেন মেহতাব। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ডিকার দুরন্ত কর্নার থেকে গোল করে সমতা ফেরালেন লালডানমাওয়াইয়া রালতে। ম্যাচের পরে সাংবাদিক বৈঠকে মোহনবাগান কোচ বলছিলেন, ‘‘একটা পরিকল্পনা নিয়ে মেহতাবকে নামিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যে ও চোট পেয়ে উঠে যাওয়ায় সব কিছু ভেস্তে যায়। তবে আমরা জিততে পারতাম।’’ জিততে পারতেন বলে দাবি করলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ বাস্তব রায়-ও। বললেন, ‘‘প্রথমার্ধে আমরা খেলতে পারিনি ঠিকই। কিন্তু পরে ছেলেরা দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জিততেও পারতাম।’’

দুই প্রধানের দুই কোচের দাবি শুনে বিস্মিত ভারতীয় ফুটবলের সফলতম কোচ প্রদীপ কুমার (পিকে) বন্দ্যোপাধ্যায়। যুবভারতী থেকে বেরনোর সময় বললেন, ‘‘দু’টো দলেরই প্রধান লক্ষ্য ছিল হার বাঁচানো। কেউ জয়ের জন্য খেলেনি। মোহনবাগান আত্মতুষ্ট হয়ে পড়েছিল। ইস্টবেঙ্গলকে তো ওরাই ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা তৈরি করে দিল।’’ আর বিশ্বকাপার আকোস্তা? পিকে বলছেন, ‘‘ওকে মানিয়ে নেওয়ার সময় দিতে হবে।’’ পিকে মুগ্ধ পিন্টু ও ডিকাকে নিয়ে। বললেন, ‘‘পিন্টু প্রতিশ্রুতিমান। আর ডিকার জন্যই ঘুরে দাঁড়াল ইস্টবেঙ্গল।’’

বছর দু’য়েক আগেও ডিকাকে ভারতের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার মনে করা হত। কিন্তু আইএসএল খেলতে গিয়ে গোড়ালিতে মারাত্মক চোট পান তিনি। অস্ত্রোপচারের পরে প্রায় এক বছর মাঠের বাইরে ছিলেন। এখনও ডান পায়ের গোড়ালিতে তিনটি লোহার স্ক্রু লাগানো। এই মরসুমে আইএসএলে খেলার বদলে ডিকা বেছে নেন ইস্টবেঙ্গলকে। ডিকা বলছিলেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল থেকেই আমার উত্থান। নিজেকে প্রমাণ করার জন্যই ফিরলাম।’’

ডিকারা ঘুরে দাঁড়ালেও লাল-হলুদ সমর্থকেরা হতাশ। টানা সাতটি ডার্বি যে জেতা হল না

ইস্টবেঙ্গল: রক্ষিত দাগার, সামাদ আলি মল্লিক, মেহতাব সিংহ, জনি আকোস্তা, লালরাম চুলোভা, লালডানমাওয়াইয়া, কমলপ্রীত সিংহ (লালরিনডিকা), কাশিম আইদারা, ব্রেন্ডন, মহম্মদ আমনা ও জবি জাস্টিন (বালি গগনদীপ)।

মোহনবাগান: শিল্টন পাল, অরিজিৎ বাগুই, কিংসলে, কিম কিমা, অভিষেক আম্বেকর, ব্রিটো, শিল্টন ডি’সিলভা (মেহতাব হোসেন, গুরজিন্দর কুমার), সৌরভ দাস, পিন্টু মাহাতো, দিপান্দা ডিকা ও হেনরি কিসেক্কা।

Football Pintu Mahata Johnny Acosta পিন্টু মাহাতো জনি আকোস্তা Kolkata Derby East Bengal Mohun Bagan ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগান
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy