চৈত্র মাসে সর্বনাশের উল্লেখ রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে শুরু। যদিও তার প্রেক্ষিত ছিল আলাদা। কিন্তু এই ২০১৬-তে এসে ইস্টবেঙ্গল কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যও সেই চৈত্র মাসেই নিজের সর্বনাশ ঘটতে দেখলেন। মোহনবাগান ফুটবলার কর্নেল গ্লেনের সৌজন্যে।
গ্লেনের অভিযোগের জেরেই দু’ ম্যাচ নির্বাসনের শাস্তি পেলেন ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার অর্ণব মণ্ডল। বেঙ্গালুরু এফসি ম্যাচের ঠিক আগের দিন এই খবর লাল-হলুদ তাঁবুতে পৌঁছানোর পরই যেন বাজ ভেঙে পড়ে বিশ্বজিতের মাথায়। যে ম্যাচে জিততেই হবে পরিস্থিতি, ঠিক তার আগেই অর্ণবের শাস্তি বড় ধাক্কা ইস্টবেঙ্গলের কাছে। বেঙ্গালুরুতে বিশ্বিজিৎকে যখন ফোনে ধরা হল, তখন তাঁর গলায় রীতিমতো হতাশা। আফসোস করে বলছিলেন, ‘‘এই ম্যাচেই অর্ণবকে পাব না। আমার বড় ক্ষতি হয়ে গেল।’’ এমনিতে বার্নার্ড মেন্ডির চোট রয়েছে। কেভিন লোবোও চোটের জন্য শনিবার প্র্যাকটিস করেননি। আর চোট থাকায় রবার্ট তো দলের সঙ্গে বেঙ্গালুরুই যেতে পারেননি। তার উপর লাল-হলুদের রক্ষণের হালও খুব একটা ভাল নয়। স্বভাবতই আজ রবিবার বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে নামার আগে বেশ কঠিন পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে বিশ্বজিৎ।
ডার্বির পর কর্নেল গ্লেন অভিযোগ করেছিলেন, অর্ণব তাঁকে বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্য করেছেন। সূত্রের খবর, রেফারির রিপোর্টে বর্ণবৈষম্যের উল্লেখ না থাকলেও, অর্ণব যে গ্লেনকে হুমকি দিয়েছেন সে কথা লেখা ছিল। যার জেরেই দু’ ম্যাচ নির্বাসনের পাশাপাশি এক লক্ষ টাকা জরিমানা হয়েছে অর্ণবের। শুধু অর্ণবই নয়, ডার্বিতে রেফারির সঙ্গে খারাপ আচরণ করার জন্য মোহনবাগানের সহকারী কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীকেও দু’ ম্যাচ নির্বাসিত করা হয়েছে। সঙ্গে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা।
এর মধ্যে আবার শনিবার প্র্যাকটিসের মাঠ নিয়েও সমস্যায় পড়তে হয় ইস্টবেঙ্গলকে। এ দিন সকাল ন’টা থেকে প্র্যাকটিসের কথা জানতেন বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যরা। সময় মতো স্টেডিয়ামে পৌঁছে তাঁরা দেখেন গেট বন্ধ। গেট খোলার কেউ নেই। এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর দশটার সময় গেট খোলা হয়। ম্যাচের আয়োজক বেঙ্গালুরু এফসি-র দাবি অবশ্য, সরকারি ভাবে দশটা থেকেই প্র্যাকটিস ছিল ইস্টবেঙ্গলের।
এত খারাপের মাঝেও ইস্টবেঙ্গলের জন্য একটা সুখবর রয়েছে, কার্ড সমস্যার জন্য জন জনসনকে পাবে না বেঙ্গালুরু। যিনি বেঙ্গালুরু রক্ষণের অন্যতম বড় ভরসা। এ দিকে মেন্ডির চোট থাকলেও শনিবার সকালে প্র্যাকটিস করেছেন তিনি। তাঁকে শুরু থেকে নামানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বিশ্বজিৎ বললেন, ‘‘মেন্ডির সঙ্গে কথা বলে তার পরই সিদ্ধান্ত নেব।’’
এ দিকে ইস্টবেঙ্গল এবং বেঙ্গালুরু— দু’ দলকে সুবিধে করে দিয়েছে ডেরেক পেরেরার ডিএসকে শিবাজিয়ান্স। মোহনবাগানের সঙ্গে ড্র করে। যার ফলে লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড় থেকে কার্যত অনেক দূর ছিটকে গেলেন সনি-কাতসুমিরা। বেঙ্গালুরু-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ ড্র হলে হয়তো আবার একটা সুযোগ আসতেও পারে তাঁদের।
তবে যাই হোক অঙ্কের বিচারে ইস্টবেঙ্গলের তুলনায় বেঙ্গালুরু এই মুহূর্তে সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে। এক) ঘরের মাঠে তাদের দু’টি ম্যাচ রয়েছে। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে শুধু অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে হবে সুনীলদের। দুই) আজ ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে দিতে পারলে আরও একটি ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে বেঙ্গালুরু। অন্যটি হারলেও সমস্য়া হবে না। ওয়েস্টউড তাই সাংবাদিক সম্মেলনে বলে দিয়েছেন, ‘‘আমরা লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা এখন ভাবছি না। আগে ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে হবে।’’
ইস্টবেঙ্গলকে সেখানে বেঙ্গালুরু ছাড়াও আরও একটি অ্যাওয়ে ম্যাচ শিলং লাজংয়ের সঙ্গে খেলতে হবে। শুধুমাত্র স্পোর্টিং ক্লুব ম্যাচটি ঘরের মাঠে খেলবেন মেহতাবরা। পাশাপাশি বেঙ্গালুরুকে আজ হারালেও বাকি দু’টি ম্যাচে জিততেই হবে লাল-হলুদ ব্রিগেডকে। যদি না ওয়েস্টউডের টিম পরের দু’টি ম্যাচে পয়েন্ট নষ্ট করে।
সব মিলিয়ে ইস্টবেঙ্গল-বেঙ্গালুরু ম্যাচের উপর কিন্তু আই লিগ এবং মোহনবাগানের ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করছে।
রবিবার
আই লিগে— ইস্টবেঙ্গল : বেঙ্গালুরু এফসি (বেঙ্গালুরু, ৭-০৫)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy